বিজ্ঞাপন

ষড়যন্ত্র অনেক গভীরে

July 26, 2024 | 2:33 pm

মো. আসাদ উল্লাহ তুষার

সম্প্রতি কোটাবিরোধী সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজধানী ঢাকাসহ দেশব্যাপী নজিরবিহীন দেশবিরোধী যে তান্ডবলীলা চালানো হয়েছে তা একাত্তরের হানাদার বাহিনীর সাথে তুলনা করা যায়। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে সরকার পরিবর্তনের আন্দোলনে পরিনত করতে অত্যান্ত পরিকল্পনামাফিক বেছে বেছে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্পর্শকাতর স্থাপনা ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর যে পৈচাশিক সাড়াশি আক্রমণ করা হয়েছে এবং যে পরিমাণ জানমালের ক্ষতি সাধন করা হয়েছে তা কোন কিছু দিয়েই পরিমাপ করা যাবে না। ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষের যে প্রানহানি করা হয়েছে তা অত্যন্ত দু:খজনক, নিন্দনীয় ও হৃদয় বিদারক। এতগুলো মানুষের প্রান ঐসব পরিবারের ও দেশের জন্য অপুরনীয় ক্ষতি। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের এই অরাজনৈতিক শান্তিপূর্ণ ও সর্বমহলে গ্রহনযোগ্য আন্দোলনকে কারা সরকার পতনের আন্দোলন সহিংস ও নাশকতার দিকে নিয়ে গেল তা খুবই পরিস্কার।

বিজ্ঞাপন

এবারের এই নজিরবিহীন নাশকতা ও তান্ডব যে দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনার ফসল তাতে কোনো সন্দেহ নাই। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পরিকল্পিত ও নির্বিচারে আক্রমণ এবং দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় যে ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়েছে এবং যেভাবে চালানো হয়েছে তা যে অত্যান্ত সংগঠিত তা দিবালোকের মতো পরিষ্কার। এখন প্রশ্ন হলো এই ধ্বংসলিলা চালালো কারা? সাধারণ ছাত্রদের অরাজনৈতিক আন্দোলনকে উস্কানি দিয়ে এবং সেই আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে সরকার পতনের একদফার আন্দোলনে নিয়ে গেলো তারাই, যারা দীর্ঘদিন যাবত কথায় কথায় সরকারের পতন চেয়ে আসছিল। পরিষ্কার করে বলতে হয় এই আন্দোলনকে পুজি করে সরকার পতনের লক্ষ্যে সর্বগ্রাসি সহিংসতা ও ধংসলীলা চালিয়েছে স্বধীনতা বিরোধী জামাত-শিবির ও তাদের আমৃত্যু দোসর বিএনপি-ছাত্রদল। তারা বেছে বেছে রাস্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ও তার গুরুত্বপূর্ণ অংশে অগ্নিসংযোগ করলো কেন? ঢাকা তথা দেশবাসীর স্বপ্নের মেট্রোরেলের মীরপুর ও কাজীপাড়া স্টেশনে পুড়িয়ে ফেলা হলো কেন? সার্ভার স্টেশন,ডেটা সেন্টার সম্পুর্ন পুড়িয়ে দেয়া হলো কেন? সেতু ভবন, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন, বিআরটিএ ভবনের গুরুত্বপূর্ণ নথিপত্র এবং শত শত গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সেতু ভবনে রক্ষিত দেশবাসীর স্বপ্নের পদ্মাসেতুর গুরুত্বপূর্ণ নথি পুড়িয়ে দিলো কারা? এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোলপ্লাজা এবং যাত্রাবাড়িতে হানিফ উড়ালসড়কের টোল প্লাজা সম্পুর্নভাবে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। এছাড়াও শত শত গাড়ি ও বিভিন্ন অফিস ও শপিংমলে আগুন দেয়া হয়েছে। পরিকল্পিতভাবে দেশের বিভিন্ন কারাগার ও স্থাপনায় হামলা করা হয়েছে। বিশেষ করে নরসিংদী জেলা কারাগারে আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ষোল শতাধিক আসামি ছিনিয়ে নিয়ে অস্ত্রাগার লুন্ঠন করেছে। বিভিন্ন জেলা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দলীয় অফিসে আগুন দেয়া হয়েছে। তাছাড়াও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর হামলা করে তাদের হত্যা করা হয়েছে এবং হাজারের বেশি পুলিশ সদস্য গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন আছেন। দু পক্ষের সংঘর্ষে অনেক সধারন মানুষ ও ছাত্র,পুলিশ ও সাংবাদিকদের প্রাণহানি ঘটেছে যার সাথে আন্দোলনরত সাধারণ ছাত্রদের কোন সংশ্লিষ্টতা দেখা যায়নি। তাহলে এই অবস্থা করলো কে?

এর আগে ২০১৩-২০১৪ সালেও এবারের মতো করে না হলেও রাস্তায় গাড়িতে আগুন দিয়ে পুলিশের উপর হামলা করে জামাত বিএনপি যে আগুন সন্ত্রাস চালিয়েছিল তা তো দেশবাসীর কাছে স্পষ্ট ছিল। কিন্তু এবারের আক্রমন রাস্ট্রের বিরুদ্ধে, সর্বগ্রাসি। টার্গেট করে দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর পৈচাশিক আক্রমন করে জানমালের যে পরিমান ক্ষতিসাধন করেছে তা অকল্পনীয় অবিশ্বাস্য। ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিক, সাধারণ পথচারীসহ যে পরিমান মানুষের প্রানহানি হয়েছে তা কি দিয়ে পুরন করা যাবে, তা কি পুরন করা সম্ভব, পুরন করা যায়? যে দাবিতে ছাত্রদের আন্দোলন সে দাবিতে তো কারো দ্বিমত ছিলো না,সরকারেরও ছাত্রদের দাবীর সাথে তেমন কোন দ্বিমত ছিলো না। তদুপরি ছাত্রদের এই আন্দোলন শুরুতে চার পাচ দিন একেবারেই শান্তিপূর্ণ ছিল। পুলিশ ও ছাত্রদের ভুমিকা ছিলো প্রশংসনীয়। এই অরাজনৈতিক আন্দোলনে যখন ছাত্র শিবির ও ছাত্রদল সম্পৃক্ত হয়েছে এবং বাইরে থেকে জামাত বিএনপি চরম পর্জায়ে উস্কানী দিয়ে আন্দোলনকে সহিংসতার দিকে নিয়ে যায় তখন আর আন্দোলন সাধারণ ছাত্রদের হাতে ছিল না। এটারই অপেক্ষায় ছিল স্বাধীনতা বিরোধী ঘাতকদের দল জামাত ও তাদের মায়ের পেটের আপন ভাই বিএনপি। তারা তাদের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা ও নীল নকশা অনুযায়ী সরকার পতনের ঘৃণ্য অপচেষ্টায় লিপ্ত হয়ে দেশব্যাপী টার্গেট করে এই ধ্বংসযজ্ঞ ও তান্ডবলীলা চালায় এবং ছাত্র, পুলিশ, সাংবাদিকসহ সাধারণ মানুষকে নির্বিচারে গুলি করে পিটিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করে।

এই যে সর্বগ্রাসী রাস্ট্রের উপর আক্রমণ ও হত্যা তা কি সাধারণ কোনো ব্যাপার বা সরকারের পতনই মুল লক্ষ্য নাকি অন্য আরও কিছু আছে। অবস্থা বিশ্লেষণে মনে হচ্ছে ষড়যন্ত্র অনেক গভীরে। যে কায়দায় যে সুক্ষ্ম পরিকল্পনায় সারাদেশ থেকে বেছে বেছে জামাত শিবির ও ছাত্রদলের ক্যাডার সন্ত্রাসী জোগাড় করে ঢাকায় নিয়ে এসে আপাতদৃষ্টিতে সরকার পতনের হীন উদ্দেশ্যে যে ধ্বংস লীলা চালানো হলো রাস্ট্রের ভিত্তিমূলে আঘাত হানা হলো, রাস্ট্রের হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদের ক্ষতিসাধন করা হলো, অসংখ্য প্রানহানী করা হলো তাকি একাত্তরকেই স্মরণ করিয়ে দেয় না? পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় এজেন্ট জামাত শিবির, মুসলিম লীগ, আলবদর, রাজাকার আলশামসরা মুক্তিযুদ্ধের সময় এদেশের বিরুদ্ধে যা করেছিলো এবারো ওরা তাই করলো। তখনও এই দেশ নিয়ে কিছু বিদেশি রাস্ট্রের চক্রান্ত ষড়যন্ত্র ছিলো এখনো আছে। এখন আরও যোগ হয়েছে এদেশেরই কিছু প্রভাবশালী ব্যাক্তি ও গোস্টি। যারা একাত্তরে এদেশ স্বাধীন হোক চায়নি তারা এখনো সরাসরি না হলেও সেই একই উদ্দেশ্য থেকে সরে আসেনি। তারা অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের পেছনে লেগে আছে বিশেষ করে এই রাস্ট্রটির পেছনে লেগে আছে যাতে রাস্ট্রটি অকার্যকর রাস্ট্রে পরিনত হয়।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনার দেশ পরিচালনায় ছোট খাটো কিছু ভুলত্রুটি বাদ দিলে দেশি ও আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে যে পরিস্কার অবস্থান তাতে অনেক দেশরই খবরদারি কমে গেছে। আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলে সরাসরি ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান গ্রহন,নানা বিষয়ে মার্কিনীদের চোখ রাংগানিকে অগ্রাহ্য করা ও তাদের এদেশিয় এজেন্টদের বিরুদ্ধে স্পষ্ট অবস্থান,দেশের অভুতপুর্ব উন্নয়ন ইত্যাদি কারনে সব অপশক্তির টার্গেট এখন বাংলাদেশ ও শেখ হাসিনা। এবারের যে টার্গেট করে জঙ্গি হামলা তার মুল লক্ষ্য বাংলাদেশের অভুতপুর্ব উন্নয়ন অগ্রগতি ও এর প্রধান আর্কিটেক্ট শেখ হাসিনা। ওদের চক্ষুশূল পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ডিজিটাল বাংলাদেশ আর বিটিভির মুক্তিযুদ্ধের আর্কাইভ ইত্যাদিতে আক্রোশ মিটালেও ওদের প্রধান ও একমাত্র টার্গেট শেখ হাসিনাকে হত্যা কারাই হয়তো ছিল মুল টার্গেট। কারন এখন বাংলাদেশকে থামাতে গেলে এখনই শেখ হাসিনাকে থামাতে হবে। তারা এবার ছাত্রদের ব্যবহার করে খুব সুক্ষ্ম ভাবে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগকে বিতর্কিত করতে শুসিলদের দিয়ে অপপ্রচারে লিপ্ত হয়েছিল। তাদের অপপ্রচারের আরেক টার্গেট ছিল বাংলাদেশের গৌরবের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধাদের। যা সরকার ও আওয়ামী লীগ ছাড়া কেউ বুঝতেই পারিনি। অতএব এবারের এই নজিরবিহীন তান্ডবলীলা তা ছিল বাংলাদেশের মুল ভিত্তিমুলে আঘাত হানা। যা ছিল চক্রান্ত কারীদের মুল লক্ষ্য। যা তারা পুরোপুরি সফল হয়নি।

অতএব এবারের কোটা বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের উপর ভর করে দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা নীল নকশার অংশ হিসেবে জামাত বিএনপির অভিপ্রায় বাস্তবায়নে যে সকল দেশি বিদেশি অপশক্তি ও বিদেশে পলাতক দন্ডিত আসামি, বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনি ও মানবতাবিরোধী আপরাধের দায়ে ফাসির কাস্টে ঝুলে মরা জামাতিদের আত্নীয় পরিজনসহ দেশি বিদেশি অর্থ সরবরাহকারিদের খুজে বের করে স্পেশাল ট্রাইবুন্যাল করে বিচারের আওতায় নিয়ে আসা সময়ের দাবি। ছাত্রদের আবেগকে উস্কানি দিয়ে শিক্ষা প্রতিসঠান কেন্দ্রীক আন্দোলনকে সর্বগ্রাসী হিংসাত্মক জঙ্গি আন্দোলনে পরিনত করতে কারা কারা উস্কানি দিয়েছে অংশ নিয়েছে,অর্থ দিয়েছে তা নিশ্চয়ই প্রশাসনের অজানা নয়। কারন এবারের এই ধবংসলীলা শুধু জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধনই নয় এর উদ্দেশ্য ও ষড়যন্ত্র অনেক গভীরে। বিদেশিদের কাছে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করা,বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করা, দেশকে অকার্যকর রাস্ট্রে পরিনত করাসহ বাংলাদেশের ভিত্তিমুলে আঘাত হানা। তাই এই সমস্ত তথাকথিত আন্দোলনে ক্ষয়ক্ষতি ও যে সকল মানুষের জীবনহানী হয়েছে তার বিচারবিভাগীয় সুষ্ট তদন্ত করে দোষীদের দৃস্টান্তমুলক শাস্তির আওতায় এনে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত শহীদদের বাংলাদেশ নিয়ে যে কোনো চক্রান্তকে রুখে দেয়াই এখন দেশবাসীর একমাত্র দাবি।

লেখক: সদস্য, কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটি, বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন