বিজ্ঞাপন

ঈদ যাত্রায় ভোগাবে উন্নয়ন প্রকল্প ও চালকদের বিশৃঙ্খলা

June 3, 2018 | 8:46 am

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদকে সামনে রেখে রাজধানীবাসীর বাড়ি যাওয়ার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। শুরু হয়েছে বাস ও ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি। কিন্তু কেমন হবে এবারের ঈদযাত্রা? এ বিষয়ে আগাম ধারণা দিতে ঢাকায় প্রবেশ ও বের হওয়ার বিভিন্ন রাস্তা থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন জেলার প্রধান রাস্তার সর্বশেষ খোঁজ-খবর নিয়েছেন সারাবাংলার ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্টরা।

রাজধানীতে প্রবেশ ও বের হওয়ার প্রধান রাস্তাগুলোর কয়েকটিতে উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলমান থাকায় যানবাহন চলাচলে সময় বেশি লাগছে। এর সঙ্গে বৃষ্টি যোগ করেছে ভোগান্তির নতুন মাত্রা। বৃষ্টিতে রাস্তা ডুবে যাওয়ায় গাড়ি চলতে সময় বেশি লাগছে। পাশাপাশি রয়েছে ঈদের বাজারে বাড়তি আয় করতে পরিবহনগুলোর অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনা। এবার ঘরমুখি মানুষকে এই দুইটি কারণ দুর্ভোগে ফেলবে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

দেখা গেছে, সড়ক পথে উত্তর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যাত্রীদের বিলম্ব শুরু হচ্ছে গাবতলী পার হয়ে সাভার থেকে। বিশেষ করে আমিন বাজার সেতুর মুখে। এখনও এই সড়কের যানজট কমেনি। যারা সিরাজগঞ্জ হয়ে যাচ্ছেন, তাদের ভোগান্তির মূলে রয়েছে গাজীপুর মহাসড়ক ও যমুনা সেতুর যানজট।

পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের সায়েদাবাদ ও যাত্রাবাড়ি থেকে বের হতেই প্রচণ্ড যানজট সহ্য করতে হচ্ছে। এরপর কাঁচপুর ব্রিজ এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট তো রয়েছেই। তবে এ মহাসড়কের ফেনী ফতেহপুরে নতুন চালু হওয়া রেলওয়ের দুটি ওভারপাস গত দশদিন ধরে যানজট কমাতে একটু অবদান রাখছে।

বিজ্ঞাপন

উত্তরবঙ্গ ও বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছয় জেলার যাত্রীরা আবদুল্লাহপুর ও টঙ্গী সেতু এলাকার যানজটে ভোগান্তিতে পড়ছেন। গাজীপুর থেকে ঢাকা, গাজীপুর থেকে টাঙ্গাইল এবং গাজীপুরের চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে জেলাশহরে নিয়মিত যানজট হচ্ছে। জয়দেবপুর চৌরাস্তা, ভোগড়া বাইপাস মোড়, সাইনবোর্ড, চেরাগআলী পর্যন্ত যানজট থাকে।

গাজীপুর থেকে ঢাকা যেতে চার-পাঁচ ঘন্টা সময় লেগে যাচ্ছে। টঙ্গী কলেজ গেইট থেকে ভোগড়া বাইপাস মোড় পর্যন্ত ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে একটু বৃষ্টি হলেই পানি জমে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়। কোন কোন স্থানে রাস্তার পানি বাসের ভেতরেও ঢুকে পড়ে। এই মহাসড়কে যানজটের মূল কারণগুলো হচ্ছে- চলমান নির্মাণ কাজ, ফুট ওভারব্রীজ না থাকা, জলাবদ্ধতা, অবৈধ পার্কিং এবং গাড়ি চালকদের বিশৃঙ্খলা।

গাজীপুরের নাওজোর মহাসড়ক পুলিশ ফাড়ির পরিদর্শক মো. অহিদুজ্জামান জানান, চান্দনা-চৌরাস্তায় ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাাকায় চলমান ফ্লাইওভার ও ড্রেনেজ নির্মাণ, বিআরটি’র রুট নির্মাণের কাজ এবং বৃষ্টির কারণে রাস্তার জলাবদ্ধতা, রাস্তার উপরে ট্রাক স্ট্যান্ড এবং ফুটপথ দখল করে দোকানপাট বসানোর কারণে যানজট হয়। কিন্তু এগুলোর মধ্যে যেগুলো পুলিশের দায়িত্বের ভেতরে রয়েছে, সেগুলো আমরা পালন করবো। তবে মানুষকেও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে যানজটের অন্যতম বড় কারণ চালকদের অতিরিক্ত যাত্রী উঠানোর প্রবণতা।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর ট্রাফিক বিভাগের এএসপি সালেহ উদ্দিন আহমেদ জানান, সিটি করপোরেশনের ছয়দানা, চান্দনা-চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস মোড় এলাকায় উন্নয়ন প্রকল্পের কারণে মহাসড়কের প্রশস্থতা কমে গেছে। নির্মাণকাজ চলমান সময়ে বিকল্প কোন রাস্তার ব্যবস্থা করা হয়নি।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে এবার অপেক্ষাকৃত কম যানজট হচ্ছে। তবে গাজীপুরের যানজটের প্রভাব পড়ছে এই সড়কে। সিসিক্যামেরা বসিয়ে পুলিশ ও প্রশাসনের তদারকির কারণে যানজটসহ দুর্ঘটনা, চুরি-ডাকাতি ও অনিয়মের ঘটনা কমেছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত পুলিশের টহল অব্যাহত রয়েছে।

ময়মনসিংহ জেলা মোটর মালিক সমিতির সহসভাপতি রবিউল হোসেন শাহিন জানান, ঈদ উপলক্ষে বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে না। কেউ যদি কোন যাত্রীর কাছ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায় করে তবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কে চারলেন প্রকল্পের কাজ চলমান রয়েছে। পাশাপাশি বর্ষাকে সামনে রেখে শুরু হওয়া বৃষ্টিপাতের কারণে উত্তরবঙ্গসহ ২১ জেলার যাত্রীদের চরম যানজট ও ভোগান্তিতে পড়তে হবে। গাজীপুরের চন্দ্রা থেকে টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা পর্যন্ত প্রতিদিনই যানজট লাগে। মহাসড়কের কদিমধল্যা, পাকুল্যা, নাটিয়াপাড়া, টাঙ্গাইল বাইপাস, ধেরুয়া, ঘারিন্দা বাইপাস, রসুলপুর ও এলেঙ্গাসহ বিভিন্ন স্থানে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া মহাসড়কে ভাঙ্গা চোরা গর্তে যাত্রীবাহী বাস ও মালবাহী ট্রাক বিকল হয়ে যানজট আরও অসহনীয় করে তুলেছে।

টাঙ্গাইল সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আমিমুল এহসান সারাবাংলাকে জানান, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী আগামী ৮ জুনের মধ্যে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংস্কারসহ যানজট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাই ঈদ যাত্রায় যাত্রীদের চরম যানজট ও ভোগান্তির হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই।

চারলেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক জিকরুল হাসান জানান, চারলেন প্রকল্পের প্রায় ৬৫ ভাগ কাজ শেষ হয়ে গেছে। প্রকল্পের আওতায় ২৬টি সেতুর মধ্যে ২৪টি সেতু ঈদের আগেই চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে। ফলে যানবাহন চারলেনে চলতে পারবে। এতে যানজট কমবে বলে আশাবাদী তিনি।

টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সঞ্জিত কুমার রায় জানান, ঈদকে সামনে রেখে বঙ্গবন্ধু সেতু ঢাকা-মহাসড়ক যানজটমুক্ত রাখতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিশেষ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। মির্জাপুরের ধেরুয়া রেলক্রসিং, কালিহাতীর পুংলী সেতু, টাঙ্গাইল শহর বাইপাসের রাবনা মোড়সহ যে সমস্ত স্থানে যানজটের আশঙ্কা থাকায় সেখানে বিশেষ ট্রাফিক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এছাড়া দুর্ঘটনা কবলিত এবং রাস্তায় বিকল হওয়া যানবাহন দ্রুত সরিয়ে নেয়ার জন্য কয়েকটি স্থানে রেকার প্রস্তুত রাখা হচ্ছে এবার। ঈদের তিনদিন আগে থেকে মহাসড়কে যানচলাচলের অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য কাজ করবে ৩টি কমিটি।

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ফেনী ফতেহপুর রেলওয়ে ওভারপাসের দুটি লেন চালু হওয়ার পর যানজট কিছুটা কমেছে। তবে চারলেন প্রকল্পের অপর দুই লেনের কাজ এখনও চলছে। ফলে ঈদে ঘরমুখি যাত্রীদের বিড়ম্বনা এবারও আগের মতোই হবে।

মহাসড়কের সীতাকুণ্ডে গত কয়েকদিন ধরে দীর্ঘ যানজট হচ্ছে। উপজেলার ফৌজদারহাট লিংক রোডে চট্টগ্রামগামী পণ্যবাহী যানবাহনগুলো রাস্তা আটকে বন্দর সড়কে প্রবেশ করে। এতে বেশ কিছুদিন ধরে এখানে কমবেশি যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের একটি টিম সীতাকুণ্ড জেলা পুলিশের আওতাধীন ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কে এসে প্রতিদিন দায়িত্ব পালন করছেন।

(প্রতিবেদন তৈরিতে সহায়তা করেছেন, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, সাভার, কুমিল্লা এবং চট্টগ্রাম ডিস্ট্রিক্ট করেসন্ডেন্ট)

সারাবাংলা/এমআইএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন