বিজ্ঞাপন

কোটা আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার শোক

July 29, 2024 | 3:39 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই)  একদিনের শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। মন্ত্রিপরিষদ সভায় সোমবার এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে সোমবার (২৯ জুলাই) মন্ত্রিসভা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব বৈঠক পরবর্তী ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘কোটা সংস্কার আন্দোলনের বিষয় নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলোচনা উপস্থাপন করেন। এরপর দুইটি সিদ্ধান্ত হয়। একটি নিহতদের স্মরণে শোক প্রস্তাব। আরেকটি প্রস্তাব সারাদেশে শোক পালন করা হবে। ধর্মীয় উপাসনালয়ে প্রার্থনা করা হবে।’

সরকারি হিসাব অনুযায়ী কোটা সংস্কার আন্দোলনে এ পর্যন্ত ১৪৭ জনের মৃত্যু হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

রোববার (২৮ জুলাই) নিজ দফতরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান এ তথ্য জানান।

এর আগে, গণমাধ্যমে হতাহতের সংখ্যা প্রকাশ করলেও সরকারের তরফ থেকে এই প্রথম নিহতের সংখ্যা জানানো হয়। অবশ্য বিভিন্ন গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, এখন পর্যন্ত সহিংসতায় দুই শতাধিক মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, ১৪৭ জন মারা গেছেন বলে আমাদের হিসাবে রয়েছে। এখানে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ রয়েছেন, বিভিন্ন বয়সের মানুষ রয়েছেন।‌ বিভিন্ন রাজনৈতিক পরিচয়ের মানুষ রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতাল ও জেলা থেকে নিহতের এ সংখ্যা পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘আমরা এ পর্যন্ত ১৪৭ জন নিহতদের তথ্য পেয়েছি। তাদের মধ্যে কতজন নারী, কতজন পুরুষ কিংবা কোন পেশার কতজন- সেটি নির্ণয়ের কার্যক্রম চলছে।’

তিনি বলেন, ‘এই ধরনের হত্যাকাণ্ড, বর্বরোচিত আক্রমণ পৃথিবীর কোনো সভ্য দেশ দেখেছে বলে আমার মনে হয় না। আমরা এ-ও দেখেছি তারা হসপিটাল পর্যন্ত রেডি রেখেছে। কেউ ইট কিংবা লাঠির আঘাতে আহত হলে তাদের সেখানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করিয়ে আরেক দল এসেছে। তারা একটা প্ল্যানওয়েতে আক্রমণগুলো করেছে।’

এ সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের পুলিশ হত্যার বিভিন্ন ছবি দেখান। পুলিশ যখন পারছিল না, তখন সেনাবাহিনীকে ডাকা হয় এবং কারফিউ জারি করা হয় জানিয়ে তিনি বলেন, ‘ক্রমে দেশ স্বাভাবিক হয়ে আসছে। ক্রমেই আমরা সান্ধ্য আইন শিথিল করছি, যখন আরও স্বাভাবিক হয়ে যাবে তখন আমরা কারফিউ উঠাতে সক্ষম হব।’

নিহতের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘কখনো বলা হচ্ছে ৫০০, কখনো বলা হচ্ছে ১০০০। সেজন্য আমাদের কাছে যে হিসাব সেটি আমরা দিলাম।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দোষী ব্যক্তিদের আমরা অবশ্যই শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনব। আমরা কাউকে ছাড় দেবো না।’

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সবচেয়ে বেশি সহিংসতার ঘটনা ঘটে ১৮ ও ১৯ জুলাই। এ সময় দুর্বৃত্তরা বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন, বনানীর সেতু ভবন, মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা হাসপাতাল, হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজায় আগুন ধরিয়ে দেয়। এ ছাড়া মিরপুর-১০ নম্বর ও শেওড়াপাড়ায় মেট্রোরেল রেল স্টেশনেও ভাঙচুর চালানো হয়।

সহিংসতার কারণে গোটা দেশে বন্ধ হয়ে পড়ে ইন্টারনেট সংযোগ। অবশ্য পাঁচদিনের মাথায় চালু হয় ব্রডব্যান্ড সংযোগ। ১০ দিনের রোববার (২৮ জুলাই) চালু করা হয়েছে মোবাইল ইন্টারনেট। তবে ফেসবুক টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বন্ধ রয়েছে।

সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে কোটা সংস্কার আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককেও।

ডিবি হেফাজতে থাকা ছয় সমন্বয়ক গতকাল লিখিত বক্তব্যে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সমন্বয়কদের একাংশ।

সারাবাংলা/জেআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন