বিজ্ঞাপন

কোটা নিয়ে সহিংসতা: এ ক্ষতি কার?

July 29, 2024 | 4:25 pm

সাইফুল ইসলাম শান্ত

কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সারাদেশে সহিংসতা নিয়ন্ত্রণে আসার পর ইতোমধ্যে জারি করা কারফিউ আংশিক তুলে নিয়েছে সরকার। রাস্তাঘাটে যানবাহন চলাচল কিছুটা স্বাভাবিক হলেও দেশের যে অর্থনীতিক ক্ষতি হয়েছে তার প্রভাব পড়বে দীর্ঘদিন এটা বলাই যায়।

বিজ্ঞাপন

অর্থনীতিবিদদের মতে, আর্থিকভাবে যতটা না ক্ষতি হয়েছে তার থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে দেশের ভাবমূর্তীর। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত এক সপ্তাহে দেশের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৮৪ হাজার কোটি টাকার বেশি, যার দায় বহন করতে হবে সরকার, বেসরকারি খাত ও সাধারণ মানুষকে।

পোশাক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানিয়েছে এই কয়েকদিনের স্থবিরতায় শুধু পোশাক খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকা। সহিংসতার পাঁচ দিনে চট্টগ্রাম বন্দর ও কাস্টমসের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার ১০৮ কোটি টাকা।

এছাড়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এ খাতে অন্তত হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবন ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় সফটওয়ার খাতে চার দিনে ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ সফটওয়্যার ইনফরমেশন সার্ভিসেস বেসিস।

এ পরিস্থিতির নেপথ্যের কারণ আমাদের সবারই জানা। সরকারি চাকরিতে কোটা নিয়ে ২০১৮ সালের পরিপত্রটি জুন মাসে বাতিল করেন হাইকোর্ট। এর প্রতিবাদে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সারাদেশে বিক্ষোভ শুরু করে শিক্ষার্থীরা। এই সুযোগে বিএনপি-জামায়াত বা ছাত্রদল-ছাত্রশিবির এবং কোথাও কোথাও উগ্রপন্থি জঙ্গিবাদীরাও আন্দোলনকারীদের কাতারে ঢুকে পড়ে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে ধ্বংসযজ্ঞ চালায়।

আমার মতে, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলা চলাকালীন বিষয়টি নিয়ে এই ধরনের সহিংসতা কোনো ভাবেই মেনে নেয়ার নয়। রায় দেয়ার আগেই দেশজুড়ে যে চরম ধ্বংসাত্মক কর্মকাÐ চলেছে সেটা অপূরণীয়। পরবর্তীতে কোটা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন রায় দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এতে ৯৩% মেধার ভিত্তিতে, ৫% মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান, ১% আদিবাসী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি দেখে বোঝাই যাচ্ছে, আক্রমণগুলো পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। জঙ্গিরা যেভাবে আক্রমণ করে সেভাবে রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেশব্যাপী জ্বালাও-পোড়াও করেছে সরকারবিরোধী শক্তি। পুলিশ হত্যা, বাংলাদেশ টেলিভিশন ভবন ভাঙচুর, মেট্রোরেল স্টেশন ধ্বংস, ইন্টারনেটের ডেটা সেন্টারে আগুন, সাবমেরিন কেবল কেটে দেয়া, সেতু ভবন ভাঙচুর, সিটি করপোরেশনের ৭০টি ময়লার ট্রাক পোড়ানো, রেললাইন উপড়ানোসহ সারাদেশে গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস করা কোনো কিছু বাদ যায়নি।

বৃহস্পতি ও শুক্রবার ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের কয়েকটি আঞ্চলিক কার্যালয়ে হামলা চালিয়ে ৭০ গাড়িতে আগুন দেয়া হয়, ভাঙচুর করা হয়েছে ১৭টি গাড়ি। মশার ওষুধ ছিটানোর স্প্রে মেশিন, মশার ওষুধ নষ্ট করা হয়েছে, তুলে নেয়া হয়েছে সড়কবাতি। হামলায় ডিএনসিসির প্রায় ২০৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন মেয়র মো. আতিকুল ইসলাম।

বৃহস্পতিবার বেলা ৪টার দিকে মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনের সামনে এবং বেইজমেন্টে থাকা যানবাহনে আগুন দেয় আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে ওই ভবনেও আগুন ধরে যায়। ওই হামলায় ৫৩টি গাড়ি ও ১৬টি মোটরসাইকেল সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে। আগুনে ভবনের বৈদ্যুতিক সাবস্টেশন, সার্ভার, ইমার্জেন্সি রেসপন্স কোঅর্ডিনেশন সেন্টার, অফিসের যন্ত্রপাতিও নষ্ট হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক রেজওয়ানুর গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করছি আমাদের অন্তত ৫০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ভবনটি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়েছে।

আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার মধ্যে গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ৩টার পর মেট্রোরেলের মিরপুর-১০ ও কাজীপাড়া স্টেশনে হামলা হয়। এসময় টিকেট বিক্রির মেশিন, কম্পিউটার, প্রিন্টার, সময়সূচীর মনিটর ভেঙে ফেলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অ্যাকসেস কন্ট্রোল গেট। স্টেশন দুটি পুনরায় সচল করতে অন্তত এক বছর সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক। এর ফলে স্টেশন দুটির ব্যবহারকারীরা বিপদে পড়েছেন। সারাধারন মানুষের জীবন সহজ করতে যেসকল মেগা প্রকল্প বাস্তাবায়ন করা হয়েছে সেগুলো ধ্বংস করার অর্থই হচ্ছে এরা দেশের মানুষের ভালো চায় না।

বিজ্ঞাপন

কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরুর পর থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত ব্যাপক হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ সদর দফতর জানিয়েছে, এই আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে ১ হাজার ১১৭ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। যারা দেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। পুলিশের ২৩৫টি থানা, ফাঁড়ি ও ক্যাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পুলিশের ২৮১টি বিভিন্ন ধরনের যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

মনে রাখতে হবে, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ সবচেয়ে গতিশীল অর্থনীতির দেশে পরিণত হয়েছে। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলনের জের ধরে সংঘটিত সহিংসতা ও অচলাবস্থা সেই অর্থনৈতিক গতিশীলতার জন্য বড় ধাক্কা। এই জ¦ালাও-পোড়াও করে আমরা আমাদের নিজেদের সম্পদ নষ্ট করে পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হতে চাই না।

লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন