বিজ্ঞাপন

গুলি ও গ্রেফতারের ঘটনায় ১৭ সদস্যের ‘গণতদন্ত কমিশন’

July 29, 2024 | 6:25 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: কোটা সংস্কার আন্দোলনের ঘটনায় ‘দুই শতাধিক মৃত্যু’ এবং আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেফতারের ঘটনায় শিক্ষক, সাংবাদিক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী ও শিক্ষার্থীর অভিভাবকসহ দেশের প্রথিতযশা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (২৯ জুলাই) সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি সামনে ‘গণহত্যার বিচার ও গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধে’র দাবিতে এক আইনজীবী সমাবেশে এই কমিশন গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

১৭ সদস্যের গণতদন্ত কমিশনে সভাপতি হিসেবে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন এবং আইনজীবী ও মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল। যৌথভাবে কমিশনের সদস্য সচিব হিসেবে কাজ করবেন অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান ও লেখক-গবেষক মাহা মির্জা।

কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেন— সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সিনিয়র সাংবাদিক আবু সাইয়িদ খান, ঢাকা বিশ্বাবদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক গীতিআরা নাসরিন, সিনিয়র সাংবাদিক আশরাফ কায়সার এবং আইনজীবী অনীক আর হক।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও গণতদন্ত কমিশনে উপদেষ্টা হিসেবে থাকবেন আইনজীবী তোবারক হোসেন, ব্যারিস্টার সারা হোসেন, ড. শাহদীন মালিক, রাশনা ইমাম ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া; লেখক ও শিক্ষাবিদ অধ্যপক সলিমুল্লাহ্ খান; এবং শিক্ষক কাজী মাহফুজুল হক সুপন ও সাইমুম রেজা তালুকদার।

(বাঁ থেকে) সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন, মানবাধিকার কর্মী সুলতানা কামাল, ঢাবি অধ্যাপক তানজিমুদ্দিন খান ও লেখক-গবেষক মাহা মির্জা

এদিকে সুপ্রিম কোর্টে সোমবার দুপুরে গণহত্যার বিচার এবং গায়েবি মামলায় গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে আইনজীবী সমাজের ব্যানারে আইনজীবী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সারা হোসেন, তোবারক হোসেন, জ্যোতির্ময় বড়ুয়া, অনীক আর হক, মাহবুবুর রহমান খান, জামিউল হক ফয়সাল, মানজুর আল মতিনসহ অন্যরা সমাবেশে বক্তব্য দেন।

আইনজীবী সমাবেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা জেড আই খান পান্না বলেন, ‘ছাত্রদের আট দফা দাবি খুবই যৌক্তিক ছিল। এই ছাত্ররাই কিন্তু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন শুরু করে ছিল বটতলা থেকে। পাকিস্তান আমল থেকে আজকে পর্যন্ত দেখিনি একটি সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি দাবি নিয়ে এতগুলো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। রাতের অন্ধকারে ব্লক রেইড করে বাসা থেকে তুলে নেওয়া হবে কোন অধিকারে? কোন আইনে এই অধিকার দিয়েছে? আমরা ধিক্কার দেই। যে রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম, পদে পদে সরকার তা বরখেলাপ করে যাচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী আরও বলেন, ‘নিম্ন আদালতের প্রতি আবেদন, তারা যেন আপিল বিভাগের নির্দেশনা মান্য করেন। যাচাই-বাছাই না করে রিমান্ডে পর্যন্ত দিচ্ছেন। আপনারা কি বিচারক, না কসাই!’

জেড আই খান পান্না বলেন, ‘আন্দোলনে যারা শহিদ হয়েছে তাদের আত্মার শান্তি কামনা করছি। এই সহিংসতা-হত্যার ঘটনা জাতির জন্য কলঙ্ক হয়ে থাকবে। এর বিচারের ভার জনগণের ওপর দিলাম। আমরা আইনজীবী হিসেবে একটি গণতদন্ত কমিশন গঠন করেছি, যেটি পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখবে। আমরা ছাড়ব না। আমৃত্যু লড়াই চালিয়ে যাব।’

গণমাধ্যমে দেওয়া গণতদন্ত কমিশনের লিখিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৬ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমনে শিক্ষার্থীদের বেধড়ক পেটানোর মাধ্যমে সহিংসতার সূত্রপাত হয়। বিশেষ করে এই সহিংসতার প্রতিবাদে দেশজুড়ে শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ পথে নেমে এলে রংপুরে আবু সাইদকে সরাসরি বুকে গুলি করা হয়। কিন্তু পুলিশ যখন মামলা দায়ের করে তখন সাধারণ ছাত্র ও জনগণকে দায়ী করা হয়। এতে গোটা তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের মনে প্রশ্ন উঠেছে এবং এসব ঘটনায় সত্য উদ্‌ঘাটনের দাবি উঠেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে পত্রিকায় অন্তত ২০৯ জনের মৃত্যুর সংবাদ প্রকাশ হলেও সরকারি হিসেবে তা ১৪৭ জন (২৯ জুলাই মন্ত্রিপরিষদে হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী ১৫০ জন)— এ তথ্য উল্লেখ করে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্যাতন, গুলি ও গণগ্রেফতারসহ নানা সহিংস উপায়ে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হয়েছে। এতে সংবিধান, প্রচলিত আইন ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তাই এসব ঘটনার কারণ উদ্‌ঘাটন, সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আবশ্যকতা রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এরই অংশ হিসেবে দেশের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতি কর্মী ও সাধারণ অভিভাবকেদের পক্ষ থেকে প্রথিতযশা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় গণতদন্ত কমিশন’ গঠন করা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় বিজ্ঞপ্তিতে। বলা হয়, জাতীয় গণতদন্ত কমিশনের পক্ষ থেকে সব সচেতন ব্যক্তিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গত ১ জুলাই থেকে সংগঠিত বিভিন্ন সহিংস নির্যাতন, নিপীড়ন, হত্যা, গুলিবর্ষণ, হুমকি, মামলা ও মানবাধিকার লঙ্ঘনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যাবতীয় তথ্য কমিশনের কাছে পাঠানোর জন্য শিগগিরই অনুরোধ জানানো হবে। অডিও, ভিডিও, ফটোগ্রাফ, লেখালেখিসহ যেকোনো ধরনের তথ্য পাঠানো যাবে।

এর আগে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের লাগাতার আন্দোলন শুরু হয় ১ জুলাই। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। পরদিন থেকে এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে।

সহিংসতার কারণে গোটা দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয় ইন্টারনেট সংযোগ। পাঁচ দিনের মাথায় হয় ব্রডব্যান্ড সংযোগ চালু করা হলেও মোবাইল ইন্টারনেট চালু করা হয় ১০ দিন পর। তবে ফেসবুক-টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এখন বন্ধ রয়েছে দেশে।

এদিকে সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে দোষীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এর মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছয় সমন্বয়ককে ডিবি হেফাজতে নেওয়া হয়। ডিবি কার্যালয় থেকেই গতকাল রোববার রাতে এক ভিডিওবার্তায় তারা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। তবে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন সমন্বয়কদের আরেক অংশ।

সারাবাংলা/কেআইএফ/একে

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন