বিজ্ঞাপন

কনস্টেবল থেকে টিআই, বউ-শ্যালিকার নামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ

August 2, 2024 | 8:54 am

তহীদ মনি, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

যশোর: ১৯৮৭ সালে ঢুকেছিলেন পুলিশের কনস্টবেল পদে। বর্তমানে ফরিদপুরের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর। মো. রফিকুল ইসলাম নামের এই পুলিশ কর্মকর্তার চাকরির বয়স যখন প্রায় শেষের দিকে তখন বেরিয়ে এসেছে তার কোটি কোটি টাকার সম্পদের হিসাব। ঢাকায় রয়েছে তার ফ্ল্যাট; যশোর, খুলনা, রাজশাহী ও গোপালগঞ্জে রয়েছে সাততলা বাড়িসহ একাধিক বাড়ি, জমি, প্লট, খামার ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। যতটুকু স্থাবর সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে তার দাম প্রায় ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা। তার স্ত্রী গৃহিণী হলেও তার নামেও রয়েছে এসব সম্পত্তির অংশ। এমনকি সম্পত্তি রয়েছে শ্যালিকার নামেও।— দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে দাখিল করা সম্পদের হিসাব বিবরণী থেকে এ সব তথ্য জানা গেছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে টিআই হিসেবে ফরিদপুরে কর্মরত রফিককে যশোরের মানুষ টিএসআই রফিক হিসেবে চেনেন। খুব ক্ষমতাশালী এই মানুষটিকে অনেক পুলিশ কর্মকর্তাও এড়িয়ে চলতেন, ভয় পেতেন। অপরাধীতো বটেই সাধারণ মানুষও তটস্থ থাকতেন তার দাপটে। কথিত রয়েছে, সখ্যতা ছিল অপরাধীদের সঙ্গে। তাই যেকোনো অপরাধের ক্লু বের করতে পারতেন সহজে। ফলে তার কদরও ছিল ঊর্ধ্বতনদের কাছে। বর্তমানে ৯ম গ্রেডের (প্রথম শ্রেণি সমমর্যাদার) এই কর্মকর্তার আয় ও সম্পদের হিসাব জানতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) নির্ধারিত পন্থায় তার কাছে চিঠি দেয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে তিনি তার সম্পদের লিখিত হিসাব দাখিল করেছেন।

এরই মধ্যে টিআই রফিকের দাখিল করা সম্পদ বিবরণীর ওপর অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক। জ্ঞাতআয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্য পেলে নিয়মানুসারে ও আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সংবাদ মাধ্যমের অনুসন্ধানে তার ও তার পরিবার পরিজনের নামে কিছু সম্পদের তথ্য হাতে এসেছে। এতে নগদ ও ব্যাংক হিসাবের তথ্য এখনো পাওয়া যায়নি। দুদকের অনুসন্ধানে হয়তো সেটুকুসহ আরও তথ্য বেরিয়ে আসবে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ১৯৮৭ সালের দিকে গোপালগঞ্জের শুকতাইল গ্রামের মৃত রতন আলী মোল্লার ছেলে মো. রফিকুল ইসলাম বাংলাদেশ পুলিশের কনস্টেবল পদে যোগ দেন। ধীরে ধীরে তিনি পদোন্নতি পেতে পেতে বর্তমানে ফরিদপুরের ট্রাফিক ইনস্পেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। ঢাকার মিরপুরের সাউথ পীরের রাস্তার ২৬২/১ নম্বর হোল্ডিং তার বর্তমান বাসার ঠিকানা।

বিজ্ঞাপন

যশোরের সাবেক টিএসআই (বর্তমানে টিআই) রফিকের নামে অন্তত ১৯টি জায়গায় প্রায় ২৮৯ শতক জমির সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ১৭টি জমির দলিল রয়েছে গোপালগঞ্জের শুকতাইল মৌজায়। এ ছাড়া দু’টি দলিল রয়েছে একই জেলার পাইকের ডাঙ্গা মৌজায়। এসব জমির ক্রয় মূল্যও অস্বাভাবিক কম দেখানো হয়েছে। শুকতাইল মৌজায় ২০০৮ সালে ৩১৬৯ দলিলের ৫ শতক জমির দাম মাত্র এক হাজার টাকা দেখানো হয়েছে, একই মৌজায় অন্য দাগের ২০০৪ সালের সাড়ে ৬ শতক জমির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৬ হাজার টাকা। ওই মৌজায় ১৯৮৯ সালে ৩৪৬ নম্বর দলিলের ১ দশমিক ৭৫ শতক জমির দাম ১২৫ টাকা এবং ১৯৯০ সালের ৬৪৩ নম্বর দলিলের ৮দশমিক ১৮ শতক জমির ক্রয় মূল্য এক হাজার ২৫০ টাকা দেখানো হয়েছে। সর্বশেষ ২০২০ সালের ১৪৭৩ নম্বর দলিলের ৪৭ শতক জমির দাম ৬ লাখ ২১ হাজার ৫০০ টাকা দেখানো হয়েছে। এভাবে ১৯টি দলিলে ২৪৯ দশমিক শূন্য ৪ শতক জমির মোট দাম দেখানো হয়েছে ১২ লাখ ৫০ হাজার ৯২৫ টাকা।

রফিকের স্ত্রী ঝরনা ইয়াসমিনের নামে থাকা স্থাবর সম্পত্তির ক্রয় মূল্যও বর্তমান বাজার দরের চেয়ে অনেক কম দেখানে হয়েছে। ঝরনা ইয়াসমিনের নামে ১৪টি দলিলে ৪২৯ দশমিক ৫৪৪ শতক জমির মূল্য দেখানো হয়েছে প্রায় ৫ কোটি ৮২ লাখ ৩৬ হাজার টাকা। তার সম্পত্তির মধ্যে যশোরের বারান্দিপাড়া মৌজায় ৫টি দলিলে ১৪ দশমিক শূন্য ৩৮ শতক জমি রয়েছে। বাড়ি ও স্থাপনাসহ এর দাম দেখানো হয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখ৫৮ হাজার টাকা প্রায়। অবশ্য খুলনা সিটি করপোরেশনের মুজগন্নি আবাসিক এলাকায় শূন্য দশমিক ৬৬১ একর জমির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ১০ হাজার টাকা, ঢাকা জেলার বিলামালিয়া মৌজায় সাড়ে ৬ শতক জমির দাম দেখানো হয়েছে মাত্র ৮৮ হাজার টাকা।

তবে ঝরনা ইয়াসমিনের নামে ঢাকার সেনপাড়া পার্বতা মৌজায় জমি ও ফ্লাটের দাম দেখানো হয়েছে প্রায় ৬১ লাখ ১২ হাজার টাকা। এ ছাড়া রাজশাহী সিটি করেপারেশনের হড়গ্রামে ১০ লাখ টাকায় ০.০০৩০৮ একর, খুলনার ফুলতলায় মশিয়ালিতে এক কোটি ১৫ লাখ টাকায় কেনা এক একর জমি রয়েছে। অবশ্য এর অর্ধেক রফিকের শ্যালিকার (ইয়াসমিনের বোনের) নামে। জমি রয়েছে যশোর সদরের পাগলাদহে আরও দুটি দলিলে স্থাপনাসহ। যেখানে জমির পরিমাণ ২৭৬ শতক (প্রায় ৩ একর)। দাম দেখানো হয়েছে প্রায় এক কোটি ৪২ লাখ টাকা।

বিজ্ঞাপন

এ ছাড়াও রফিকের স্ত্রী ঝরণা ইয়াসমিনের নামে রয়েছে মায়ের দোয়া নামে গোখামার। সেখানকার ১৫৮টি গাভির দাম দেখানো হয়েছে ৩ কোটি ১৬ লাখ টাকা। এ ছাড়া ১১ লাখ টাকা দামের একটি প্রাইভেট কারও রয়েছে তার।

প্রাথমিকভাবে এইসব সম্পত্তির হিসাব পাওয় গেলেও অনেকেই বলছেন, তার সম্পদ এর চেয়ে অনেক বেশি। আর সেগুলো দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসতে পারে। দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ও কমিশন কর্তৃক নিয়োজিত অনুসন্ধান কর্মকর্তা মোশাররফ হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘তদন্ত চলছে, অনেক কিছু পাওয়া যাচ্ছে। কোনো বিষয়ে এখন কথা বলা সম্ভব না। তদন্ত শেষে সবকিছু পরিষ্কার হবে।’

দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত যশোর জেলা কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. আল আমিন সারাবাংলাকে জানান, ‘আইনগতভাবে নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে কাজ হয় দুদকে। অনুসন্ধান চলছে, যাচাই-বাছাই শেষে মামলা হলে সব কিছু জানানো হবে।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/পিটিএম

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন