বিজ্ঞাপন

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ১৬ বছরের কিশোর কারাগারে

August 1, 2024 | 10:55 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

রংপুর: কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদের হত্যা মামলায় ১৬ বছরের এক কলেজ শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত। এ ঘটনায় আলোচনা–সমালোচনা চলছে সর্বত্র। পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডে দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ওই কিশোরের পরিবার। তাকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তবে পুলিশ বলছে, দ্রুতই এই কিশোরকে মুক্তির ব্যবস্থা করা হবে।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতার হওয়া ওই কিশোরের নাম আলফি শাহরিয়ার মাহিম। সে রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। মাহিমের বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। নগরীর চকবাজার এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ শাহজালালের ছেলে। তারা একভাই একবোন। গত ১৮ জুলাই বিকেলে মাহিমকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আটক করে। এ ঘটনা উল্লেখ বুধবার (৩১ জুলাই) ভুক্তভোগীর বোন সানজানা আখতার স্নেহা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে বিষয়টি নজরে আসে। এরপরই কিশোর শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার ও কারাগারে পাঠানোর ঘটনায় বিভিন্ন মহলে শুরু হয় সমালোচনা। এতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।

মাহিমের বোন সানজানা আখতার স্নেহা তার ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে বলেন, গত ১৮ জুলাই আমার ভাই কলেজের উদ্দেশ্যে বের হলে জানতে পারে পরীক্ষা স্থগিত। তখন বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলের মধ্যে জড়িয়ে পড়ে এবং পুলিশের টিয়ারশেলে বন্ধুদের থেকে আলাদা হয়ে যায়। পরবর্তীতে আমরা ১৮ তারিখ আনুমানিক বিকেল ৪টায় ওর বন্ধুদের থেকে জানতে পারি, তার পায়ে রাবার বুলেট লেগেছে। সেখানকার স্থানীয় লোকজন কোনো হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে। তবে রাত ১০টা পর্যন্ত সব হাসপাতাল-ক্লিনিক খুঁজেও যখন পাচ্ছিলাম না–তখন বাবার কাছে পুলিশের পক্ষ থেকে একটা কল আসে। তারা জানায়, আপনার ছেলে আমাদের হেফাজতে আছে। জানাজানি করবেন না। তাতে ছেলের ক্ষতি হবে। তাকে ১৯ জুলাই সকালে ছেড়ে দেওয়া হবে। চিন্তার কিছু নেই। কিন্তু পরদিন সকালে আমরা খোঁজ নিলে তারা অস্বীকার করে বলে, তাদের কাছে এই নামে কেউ নেই। এরপর আনুমানিক বিকেল সাড়ে ৪টায় কোর্ট থেকে কল আসে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

তিনি আরও লেখেন, আমরা কোর্ট থেকে নথিপত্র নিয়ে জানলাম, মাহিমকে আবু সাইদ হত্যা মামলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে। যে ছেলেটা লিগ্যাল ডকুমেন্টস অনুযায়ী শিশু; তাকে তারা কোনো হিসেবে এভাবে হ্যারাস (হয়রানি) করছে?

বিজ্ঞাপন

রংপুর পুলিশ লাইন্স স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আলফি শাহরিয়ার মাহিম।

এ বিষয়ে মাহিমের বাবা মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, পুলিশ কমিশনার আমাকে ডেকেছিলেন। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলাম। আমার ছেলের সঙ্গে কারাগার থেকে কথা বলিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু সম্ভব হয়নি। তবে পুলিশ কমিশনার আমাদের আশ্বস্ত করেছেন মাহিমকে ছেড়ে দেওয়া হবে।

উল্লেখ্য, রংপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গত ১৬ জুলাই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে পুলিশ ও ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এদিন পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হন। এ ঘটনায় ১৭ জুলাই তাজহাট থানায় মামলা করেন থানার উপপরিদর্শক ও বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ বিভূতি ভূষণ রায়। মামলার অজ্ঞাতনামা দুই থেকে তিন হাজার ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। সেই মামলায় গ্রেফতার দেখানো হয়েছে আলফি শাহরিয়ার মাহিমকে।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তাজহাট থানার উপ পরিদর্শক (এসআই) জিল্লুর রহমান বলেন, ১৭ জুলাই আমাদের তাজহাট থানায় যখন আগুন দেয়, তখন মাহিম পিকেটিং করছিল। ওই সময় ঘটনাস্থলে আমাদের পুলিশের পাশাপাশি র‍্যাব, বিজিবির টিম ছিল। সে সময় মাহিম বিজিবির হাতে আটক হয়।

বিজ্ঞাপন

 

জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ঘটনার দিন তো পুরো রংপুর উত্তপ্ত। পরে মাহিম আমাদের হেফাজতে ছিল। পরদিন সকালে তাকে এই মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়। কিন্তু পরদিনও উত্তপ্ত ছিল রংপুর। এ কারণে ওই সময় তার বয়স যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহত রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাইদ। ছবি: সংগৃহীত

রংপুর বারের আইনজীবী ও অধিকারকর্মী রায়হান কবীর পুলিশের এমন কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে বলেন, যে ছেলেটি বলছে, তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস; স্বপক্ষে কাগজ দেখাচ্ছে তার পরিবার। তাকে কেন মামলায় ১৮ বছর দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হলো? একবার থানা থেকে যোগাযোগে করা হলো। পরে বলা হলো আমাদের কাছে নেই। পরে পাঠানো হলো কারাগারে। এটা বেআইনি।

তিনি আরও বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যেসব সদস্য আইনের ব্যত্যয় ঘটাবেন, তাদের জবাবদিহির আওতায় এনে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। জবাবদিহিতা না থাকায় আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুদের পূর্ণবয়স্ক দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হচ্ছে। এতে শিশুরা মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

মাহিমের আইনজীবী বাহারুল ইসলাম বলেন, আইনের সংস্পর্শে আসা শিশুর বিচার কখনো পূর্ণবয়স্ক আসামির সঙ্গে হওয়ার সুযোগ নেই। শিশুদের মামলার বিচার হবে শিশু আদালতে। আগামী ৪ আগস্ট তার জামিন শুনানি হবে।

সার্বিক বিষয়ে মহানগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) বলেন, যেহেতু ১৮ এবং ১৯ তারিখে সংঘাত–সংঘর্ষ নিয়ে পুরো ফোর্স ব্যস্ত ছিল, সে কারণে বিষয়টি যাচাই-বাছাই করা সম্ভব হয়নি। বিষয়টি আমাদের নলেজে আসা মাত্রই পুলিশ কমিশনার মহোদয় সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। যেহেতু মাহিম ওই ঘটনার সঙ্গে জড়িত ছিল না। আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল মাত্র। জামিনের মাধ্যমে তাকে এ মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হতে পারে।

সারাবাংলা/ইআ

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন