বিজ্ঞাপন

আমাদের উন্নয়নের সুফল ভোগ করবে নতুন প্রজন্ম: প্রধানমন্ত্রী

June 3, 2018 | 12:27 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমরা যে উন্নয়নমূলক কাজগুলো করে যাচ্ছি তার সুফল ভোগ করবে আমাদের নতুন প্রজন্ম। তারাই একদিন দেশের কর্ণধার হবে। তারাই একদিন এই সুফলগুলো উপভোগ করবে। হয়ত আমার বয়স হয়ে গেছে দেখে যেতে পারব না।

রোববার (৩ জুন) সকালে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উত্তরাঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’ উদ্ধোধনকালে তিনি একথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতা স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন। তার যে লক্ষ্য বাংলাদেশকে উন্নত করা; সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যটাই নিয়েই কিন্তু কাজ করে যাচ্ছি এবং আমরা সেইভাবেই দেশের উন্নয়ন করে যাচ্ছি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এইটুকুই বলব, যার যেখানে যে কাজের দায়িত্ব আছে, আপনারা আপনাদের কাজগুলো যথাযথ ‍সুন্দরভাবে করে আসবেন।’

এ সময় শেখ হাসিনা ২০০৯ সালের পর ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে পুনরায় সরকার গঠনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ‘আমরা নির্বাচন করে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছি বলেই আজকে এ ৯ বছরে বাংলাদেশ উন্নতি করতে পেরেছে। সরকারের ধারাবাহিকতা আর আন্তরিকতা থাকলে একটা দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করা যেতে পারে আমরা তা কিন্তু প্রমাণ করেছি এবং আমরা করতে পারি।’

‘আর আমরা করি কেন’ মন্তব্য করে শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আপনাদেরকে এইটুকু বলতে পারি, আমার রাজনীতি দেশের মানুষের জন্য। কারণ আমি তো বাবা-মা-ভাই সবি হারিয়েছি। আমার হারাবার কিছু নেই। আর চাওয়া-পাওয়ারও কিছু নেই। শুধু আমার একটাই লক্ষ্য, যেহেতু আমার বাবা সারাজীবন এ দেশের মানুষের জন্য অনেক অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। মানুষের দুঃখের কথা বলতে যেয়েই কিন্তু তার বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে যত মামলা তার অধিকাংশই দেখবেন বক্তৃতা দেওয়ার জন্য।’

বিজ্ঞাপন

কারণ তিনি এসব বক্ততায় দেশের মানুষের কথা বলতেন। তাদের ওপর যে শোষণ-নিপীড়ন সেই কথাগুলো তুলে ধরেছেন। তার লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং ‘কারাগারের রোজনামচা’ যদি পড়েন, তাহলে দেখবেন কীভাবে তিনি এ দেশের জন্য কাজ করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

তার যে স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশটাকে গড়ে তোলা। যেহেতু আমি বড় সন্তান অনেক সময় তিনি গল্প করতেন। একটি দেশকে,  একটি গ্রামকে তিনি কীভাবে উন্নত করবেন। তার সেই চিন্তা-ভাবনাটা আমার জানা আছে। সেটার ওপর ভিত্তি করেই আমরা বিভিন্ন কর্মসূচি নিচ্ছি। আর সেইদিক লক্ষ্য রেখেই আমরা এই কাজ করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ইনশাল্লাহ, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এগিয়ে যাবে। এখন বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ। আমরা ২০২১ সালের আমাদের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী পালন করব। ২০২০ সালের জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী প্রত্যেকে আমরা উদযাপন করব আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে বিশ্বের উন্নত সমৃদ্ধ দেশ। ইনশাল্লাহ এটা হবে। কেউ এটা বাধা দিতে পারবে না। হয়ত আমার বয়স হয়ে গেছে দেখে যেতে পারব না। কিন্তু আমাদের নতুন প্রজন্ম যারা আছে, তারা কিন্তু এটা উপভোগ করতে পারবে।’

বক্তব্য শেষে ‘শেখ হাসিনা ধরলা সেতু’র শুভ উদ্ধোধন ঘোষণা করেন এবং শেখ হাসিনা ধরলা সেতুটি কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট ও রংপুরবাসীর জন্য ঈদ উপহার বলে ঘোষণা দেন।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুড়িগ্রাম তো একসময় মঙ্গাপীড়িত এলাকা ছিল। সেখানে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। আজকে আমরা এইটুকু দাবি করতে পারি, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে আসে ওই এলাকা থেকে মঙ্গা দূর করেছিল। কিন্তু ২০০১ সালে বিএনপি এলে পুনরায় মঙ্গা দেখা দেয়।এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ যখন আবার সরকার গঠন করে সেই ২০০৯ থেকে আর মঙ্গা দেখা যায়নি।’

‘জাতির পিতা এ দেশ স্বাধীন করেছিলেন তার লক্ষ্যই ছিল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করবেন। মানুষের জীবনমান উন্নত করবেন। জাতির পিতার যে স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা বাংলার মানুষকে দিয়েছিল। গ্রামের একেবারে তৃণমূলের পর্যায়ের প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সেটাই কিন্তু আমাদেরও লক্ষ্য’ বলে উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা নির্মম হত্যাকাণ্ডের কথা স্মরণ করে ছয় বছর দেশে ফিরে আসতে না পারার কথা তুলে ধরেন।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘দেশে ফিরে আসার পর সমগ্র বাংলাদেশ সফর করি। কুড়িগ্রাম লালমনিরহাটের প্রত্যেকটি উপজেলায় আমি গিয়েছি এবং তখনই এই যাতায়াত করতে গিয়ে দেখেছি। কত বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে।’

ওই সময় কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে যাওয়ার ঘটনা স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘এক একটি এলাকা এতই অনুন্নত ছিল। যখন রাজীবপুরে গেলাম, সেখানে চলাচলের কিছু নেই। এমনকি একটি ভালো রাস্তাও নাই। রিকশা ভ্যানও পাওয়া যায় না। এ রকম একটা অবস্থা ছিল। পায়ে হেঁটে হেঁটে যেতে হতো। ধরলা নদী পার হতে গেলে তখন বহু সময় লাগত। দুইখানা নৌকা বেঁধে তার উপর গাড়ি বেঁধে পার করা হত।এ অবস্থা ছিল।’

লালমনিরাট সফরের অতীত স্মৃতি স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘প্রত্যেকটি উপজেলায় আমি গিয়েছি। সেখানে দেখেছি মানুষের কি দুরবস্থা। রংপুর-কুড়িগ্রাম। মঙ্গা এলাকা সবসময় বলাই হতো। বিভিন্ন জায়গায় আমি ঘুরেছি। আমি মানুষের চেহারা দেখেছি হাড়ের সঙ্গে চামড়া লাগানো। পেট-পিঠ একসাথে। শীর্ণ বস্ত্র পড়া। পেটে খাবার নাই। এ ধরনের দুর্ভাগা অবস্থায় ওই সব অঞ্চলের মানুষ। প্রতিবছর ওখানে দুর্ভিক্ষ লেগেই থাকত। আমরা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে ছুটে গেছি। লঙ্গরখানা খুলেছি। সাহায্য করেছি। আমরা তখন বিরোধী দলে। কতটুকু করা যায়। এমনকি যখন সংসদের সদস্যও না তখনই গিয়েছি। এই রকম একটা অভিজ্ঞতা আছে প্রত্যেকটি এলাকায় ঘুরে ঘুরে। যখন যেখানে গিয়েছি চিন্তা করেছি কিভাবে এই সব অঞ্চলের মানুষের উন্নতি করা যেতে পারে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই একেবার গ্রামের ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত মানুষের আর্থ সামাজিক উন্নতি হবে। এখন ডিজিটাল বাংলাদেশ। সারাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস চালু হয়েছে। আমরা স্যাটেলাইট বঙ্গবন্ধু-১ উৎক্ষেপণ করেছি। তার ফলে আমাদের ডিজিটাল বাংলাদেশ সহজ হবে।’

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, প্রতিমন্ত্রী মশিউর রহমান রাঙ্গা, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্যসচিব নজিবুর রহমান। এছাড়া কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতাসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এনআর/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন