বিজ্ঞাপন

‘আইন প্রয়োগ হবে সন্ত্রাসীদের ওপর, শিক্ষার্থীদের ওপর নয়’

August 1, 2024 | 10:08 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, আইনের প্রয়োগ হবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ওপরে, নিরপরাধ শিক্ষার্থীদের ওপর নয়।

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চায়, আইনের প্রয়োগ ঘটবে শুধুমাত্র সন্ত্রাসীদের ওপরে। সুনির্দিষ্ট প্রমাণসাপেক্ষে ফৌজদারি অপরাধের সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ ঘটবে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। কোনো সাধারণ শিক্ষার্থী কোনোভাবে যেন হয়রানির শিকার না হয়, এটি আমরা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছি।’

তিনি বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে আলাপ হয়েছে, যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলনে ছিল, স্লোগান দিয়েছে, পানি বিতরণ করেছে তাদেরকেও যেন কোনোভাবে হয়রানি করা না হয়। তাদের পরিবারের কোনো সদস্য যাতে কোনোভাবে নাজেহাল না হয়। কারণ, সব শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত শিক্ষার্থীদের আবেগ-অনুভূতিকে আমরা শ্রদ্ধা করি। এর সঙ্গে আমাদের পুরো সমবেদনা ও সমর্থন আছে। কিন্তু তাদের আবেগকে পুঁজি করে যারা ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে, তারা সাধারণ শিক্ষার্থী নয়।’

বিজ্ঞাপন

ব্রিফিংয়ে মোহাম্মদ এ আরাফাত বলেন, ‘কোটা আন্দোলনকে ঘিরে বিগত দিনগুলোতে যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে, এ বিষয়গুলো সরকারের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য, বিশেষ করে যারা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার সবার জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক এবং খুবই দুঃখের। সরকারের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী নিজে এবং আমি বহুবার গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছি এবং প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য নিন্দা জানিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ১৬ জুলাই জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণ ঘোষণা দিয়েছিলেন একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠন করবেন এবং এটি গঠিত হয়েছে। স্বাধীন বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশনের মাধ্যমে প্রতিটি হতাহতের ঘটনা তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনে আমরা বিদেশি কোনো এক্সপার্টেরও সহায়তা নেব। এখানে আমরা পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।’

সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘হতাহতের ঘটনায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন, যারা পরিবারের সদস্য হারিয়েছেন তাদের অনেকে গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছেন। প্রধানমন্ত্রী তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। সে সময় আমিও উপস্থিত ছিলাম। সেখানে আবু সাঈদের পরিবারের সদস্যরাও ছিল। তাদের সঙ্গে আমারও আলাদাভাবে কথা হয়েছে। আমাকে বলা হয়েছে, আমরা কোনো কিছু চাই না, আমরা বিচার চাই।’

বিজ্ঞাপন

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রতিটি মৃত্যুর জন্য, প্রতিটি হতাহতের ঘটনার জন্য আজ সরকার এবং বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত, দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। কিন্তু যদি ক্ষতিগ্রস্ত কেউ হয়, প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত সে পরিবার যারা সরাসরি তাদের সদস্যদের হারিয়েছেন এবং তারপর এ সরকার ও এ দেশ। এ মৃত্যুগুলো, ঘটনাগুলোকে ঘিরে আজ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অপপ্রচার এবং বদনাম করার এক ধরনের অপপ্রয়াস চালানো হচ্ছে। এসব ঘটনার ক্ষতিগ্রস্তরা যেমন বিচার চান, সরকারও একইভাবে বিচার চায়। আমরা এটার গভীরে যেতে চাই এবং প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করতে চাই। কারণ, এখানে সরকারও ক্ষতিগ্রস্ত। একটি মৃত্যু সরকারের কাছে কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু এবং হতাহতের ঘটনা আমাদের বুকের ওপরে ভারী হয়ে আটকে আছে। এ মৃত্যু এবং হতাহতের ঘটনার জন্য সরকার দুঃখিত।’

তিনি বলেন, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের সুরক্ষার জন্য উদ্বিগ্ন ছিল। সরকার তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চেয়েছে। তাদের মধ্যে ঢুকে তৃতীয় পক্ষ যে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছে তাদের ওপরে আইনের প্রয়োগ করতে গিয়ে জটিল অবস্থায় পড়তে হয়েছে।’

এখনও যেসব শিক্ষার্থী আন্দোলন করছে তাদের উদ্দেশে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা আবেগ রাস্তায় নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের খেয়াল করতে হবে, ইতোমধ্যে আমরা অপব্যবহার দেখেছি সন্ত্রাসী ও তৃতীয় পক্ষ দ্বারা। আবার সন্ত্রাসীরা যদি এটাকে সুযোগ হিসেবে নেয়, আবার তারা যদি সংঘাতের অবস্থা তৈরি করে, তার দায় কে নেবে? এখানে শিক্ষার্থীদের একটা দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তৃতীয়পক্ষ বসে আছে দেশকে অরাজক পরিস্থিতিতে নিয়ে যাওয়ার জন্য।’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তথা পুলিশ, র‍্যাব, বিজিবি এবং অন্যান্য যারা আছেন, কাউকেই গুলি করার কোনো অনুমতি দেওয়া ছিল না। সংবিধান এবং আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে আমি এটাও অস্বীকার করছি না, ক্ষেত্রবিশেষে কেউ কেউ, মাঠে আইন ভাঙেননি। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনব। পুরো পৃথিবীতে এ ধরনের ঘটনা ঘটে। সরকারের দায়িত্ব হলো যারা আইন ভেঙেছে, যারা অন্যায় করেছে, সে যেই হোক তাদের আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব।’

বিজ্ঞাপন

তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সরকার আন্দোলনের শুরু থেকেই শিক্ষার্থীদের সুরক্ষা দিয়েছে এবং তাদের আলাদা রেখেছে। সরকার কখনোই তাদের দোষারোপ করেনি। আমাদের সব বক্তব্যে যেগুলোকে আমরা দোষ দিয়েছি, তার একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নয়, প্রতিটিই সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে। আমাদের সব আইনের প্রয়োগ একটিও শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে নয়, সন্ত্রাসীদের উদ্দেশে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৬ জুলাই এর জাতির উদ্দেশে প্রদত্ত ভাষণের প্রসঙ্গ টেনে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে সবার প্রথম দুঃখ প্রকাশ করে বলেছেন ছয়টি জীবন চলে গেল। উনি নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ায় দাবি পূরণে শিক্ষার্থীরা হতাশ হবেন না। আইনি প্রক্রিয়ায় যে রায় এসেছে, তারা হতাশ হয়নি। জুডিশিয়াল কমিশন ঘোষণা দিয়েছিলেন, সে কথাও প্রধানমন্ত্রী রেখেছেন, সেটি তৈরি হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ অনুপ্রবেশ করে যে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করছে, সেজন্য তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করছেন সাধারণ শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে।’

তিনি বলেন, ‘১৬ জুলাইয়ের পর আমরা যদি একটু ধৈর্য ধরতাম, একটু সাবধানে থাকতাম তাহলে তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পেত না। ছয় জনের মৃত্যুর পর যে বাকি মৃত্যুগুলো হলো এর দায় কে নেবে? কেন উস্কানি দিয়ে এ পরিবেশ তৈরি করা হলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে, গুজব ছড়িয়ে? সামনের দিনে যেকোনো ধরনের অশান্তি তৈরির জন্য যারা সুযোগ নিয়ে বসে আছে, আরও হতাহতের ঘটনা ঘটাতে চায়, সেই জায়গায় আমাদের একটু ধৈর্য ধরতে হবে, আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে এবং যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে হবে।’

তিনি আরও যোগ করেন, ‘যারা সহিংসতায় মারা গেছেন তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সব মৃত্যুর বিচার এ দেশ করবে, এ দেশের সরকার করবে এবং স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে করবে।’ প্রয়োজনে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিদেশি অভিজ্ঞ ও পেশাদারদের সম্পৃক্ত করা হবে বলে জানান আরাফাত।

সারাবাংলা/জেআর/পিটিএম

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন