বিজ্ঞাপন

বৃষ্টি নামলেই শুরু হয় পাহাড় কাটা— নেপথ্যে এনজিও কর্মকর্তা

August 3, 2024 | 8:39 am

ওমর ফারক হিরু, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

কক্সবাজার: বৃষ্টি নামলে কক্সবাজারে পাহাড় কাটা নতুন কিছু না। দীর্ঘদিন ধরে বৃষ্টিতে পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে দেওয়ার কৌশলটি ব্যবহার করে আসছে জড়িত চক্রটি। আর সম্প্রতি ভারী বৃষ্টিতে সেই কৌশলে পাহাড় কাটা শুরু করেছেন একটি এনজিও শীর্ষ কর্মকর্তা। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শ্রমিক এনেই কাটা হচ্ছে এই পাহাড়। আর পাহাড় কাটার সময় কেউ বাধা বা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করলে যেন হামলা করা হয়, এমন নির্দেশও শ্রমিকদের দিয়ে রেখেছেন সেই এনজিও কর্মকর্তা।

বিজ্ঞাপন

কয়েকদিনের বৃষ্টিতে জেলার অন্য স্থানের পাশাপাশি কলাতলী বাইপাস সড়কের জেলা কারাগারসংলগ্ন এলাকায়ও চলছে পাহাড় কাটা। প্রকাশ্যে পাহাড় কাটার খবর পেয়ে জেলা কারাগারসংলগ্ন রহমতপুর এলাকায় গিয়ে ঘটনার সত্যতা মেলে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায় ৭/৮ শ্রমিক বৃষ্টির সাথে সাথে পাহাড় কেটে মাটি সরিয়ে দিচ্ছে পানি চলাচলের ছড়ায়। যা পানির ঢলের সঙ্গে নেমে যাচ্ছে নিচুর দিকে। যেখানে ক্যামেরা ভিডিও ধারণ ও ছবি তুলতে গেলেই ডাক দেন এক শ্রমিক।

ওই শ্রমিক প্রতিবেদককে উদ্দেশ্য করে (আঞ্চলিক ভাষায়) বলেন, ‘ছবি তুলে কোনো লাভ হবে না। সব ব্যবস্থা করেই পাহাড় কাটা হচ্ছে। কেউ বাধা দিলে মারধরের নির্দেশও দিয়ে রেখেছেন পাহাড়ের মালিক।’

বিজ্ঞাপন

কে সেই মালিক, এমন প্রশ্নের উত্তরে মিলেছে একটি নাম। তিনি পালস বাংলাদেশ সোসাইটির নিবার্হী পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম। কলিম আবার বাপার কক্সবাজার জেলার নেতাও। তাকে এনজিওদের নানা কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি দেখা মিলে পরিবেশ বিষয়ক নানা অনুষ্ঠান, মানববন্ধন সমাবেশেও। কথা বলেন পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক।

এলাকাবাসী জানান, সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম প্রভাবশালী ব্যক্তি। যে পাহাড়টি কাটা হচ্ছে তার মালিক তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে শ্রমিক এনেই এসব পাহাড় কাটা শুরু করা হয়েছে। শুধু তার এই পাহাড় না আশপাশের পাহাড় কাটার ক্ষেত্রেও রয়েছে কলিমের নির্দেশনা ও সহায়তা। তার অনুমতিতেই রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে পাহাড় কাটছেন অনেকেই। আর এসব রোহিঙ্গা শ্রমিকদের নেতা হিসেবে রয়েছেন এলাকারই জনপ্রতিনিধি ঝিলংজা ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মোহাম্মদ ইউনুছ।

ওই স্থানের কাছেই কলিমের সহায়তায় আরও একটি পাহাড় করতে দেখা গেছে। যে পাহাড়টি কাটছেন মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন নামের এক ব্যক্তি। তিনি ওই এলাকার জিমাবুল হকের ছেলে। তার স্থায়ী ঠিকানা চট্টগ্রামের বাঁশখালীর পুইছড়ি। কলিমের নিকটজন হিসেবেও পরিচিত নিজাম।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্র জানায়, জেল গেট ও এর আশপাশ এলাকায় রোহিঙ্গা বাহিনী দিয়ে পাহাড় কাটার কনট্রাক্ট নেন মো. ইউনুস মেম্বার (ঝিলংজা ১ নং ওয়ার্ড)। আর এই ইউনুসের লোকজন দিয়েই পাহাড় কাটছে এনজিও কর্মকর্তা কলিম ও নিজাম উদ্দিন।

গত এক মাসে অতিবৃষ্টিতে কক্সবাজার জেলার রোহিঙ্গা ক্যাম্পসহ জেলার বিভিন্ন এলাকায় অন্তত অর্ধশত স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। যেখানে এক মাসে প্রাণ হারিয়েছে ১১ রোহিঙ্গাসহ ১৮ জন। এরপরও জেলায় পাহাড় কাটা বন্ধ হচ্ছে না।

স্থানীয় যুবক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘পাহাড়খেকোরা শুধু পরিবেশ ধ্বংস করার পাশাপাশি দেশ ও জাতির শক্রতা করছে। তাদের কারণেই প্রতি বছর পাহাড় ধসে অনেক মানুষ হতাহত হচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

আরেক ব্যক্তি মোবারক আলী বলেন, ‘কিছু করার নেই। এই দৃশ্য দীর্ঘদিন ধরে দেখে আসছি। ভারী বৃষ্টিতে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটলেই প্রশাসন নড়েচড়ে বসে। বাকি সময় চুপ থাকে। এছাড়া বরাবরই দুর্বল লোকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। প্রভাবশালীরা পার পেয়ে যায়। এভাবে চলতে থাকলে সব পাহাড় সমান হয়ে যাবে।’

অভিযোগের বিষয়ে পালস বাংলাদেশ সোসইটির নিবার্হী পরিচালক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী কলিম বলেন, ‘ওই এলাকায় আমার একটি জায়গা রয়েছে। যেখানে গাছ লাগানোর জন্য কয়েকজন শ্রমিক কাজ করছেন। আমার জায়গায় পাহাড় কাটার কথা না। যে জায়গাটিতে পাহাড় কাটা হচ্ছে এটা অন্য কারও হতে পারে।’

নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘পাহাড়ে আমার জায়গা আছে কিন্তু আমি কোন পাহাড় কাটি নাই। গত ১ মাসেও আমি কোন পাহাড় কাটি নাই। তবে পাহাড় থেকে একটা গাছ পড়েছে। সেই গাছের মাটি সরানোর জন্য শ্রমিকরা কাজ করছেন।’

পাহাড় কাটার কন্ট্রাক নেওয়ার প্রসঙ্গে জানতে ইউনুসকে ফোন করা হলে তিনি বলেন, ‘এসব অভিযোগ মিথ্যা। আমি জনপ্রতিনিধি, তাই আমার বিরুদ্ধে অনেকে শক্রতা করছে।’

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আতাউল গণি ওসমানী বলেন, ‘যারা পাহাড় কাটছে তারা অবশ্যই অপরাধী। সে যেই হোক তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে বরাবরই সচেতন করা হচ্ছে, পাহাড় কাটা বন্ধে এবং ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকা লোকজনকে সরে যাওয়া জন্য। যারা পাহাড় ধ্বংস তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।‘

পরিবেশ অধিদফতর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপ-পরিচালক জমির উদ্দিন জানান, যারা পাহাড় কাটছে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ অধিদফতর নিয়মিত মামলা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় পাহাড়খোকো যতই প্রভাবশালী হোক না কেন, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এমও

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন