বিজ্ঞাপন

মায়ের চিকিৎসা করাতে গার্মেন্টে চাকরি, গুলিতে লাশ হয়ে ফেরেন রাসেল

August 3, 2024 | 8:56 am

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট

নওগাঁ প্রতিনিধি: পাড়ার লোকেরা হামাক রাসেলের মা কয়া ডাকতো। একন হামার ছাওয়াল তো আর নাই, হামিও নাই— ছেলের রক্ত মাখা কাপড় নিয়ে বলছিলেন রাসেলের মা অঞ্জনা।

বিজ্ঞাপন

ছেলেকে হারিয়ে ১০দিন ধরে কাঁদতে কাঁদতে চোখের পানিও শুকিয়ে গেছে রাসেলের বাবা পিন্টুর। ১৮ বছরের ছেলে রাসেলের কবরের পাশে বসে করছেন বিলাপ, ডাকছেন সৃষ্টিকর্তাকে।

অন্যের জমিতে বসবাসরত ভূমিহীন এবং আশ্রয়হীন পিন্টুর ২ মেয়ে এবং ১ ছেলের মধ্যে ছোট মেয়ে শারীরিক প্রতিবন্ধী। সবার ছোট রাসেল। বড় মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়েছিল কিন্তু যৌতুকের টাকা দিতে না পারায় তালাকপ্রাপ্ত হয়ে থাকেন বাবা-মায়ের সঙ্গে।

অসুস্থ মায়ের চিকিৎসার জন্য টাকার দরকার এজন্য রাসেল চাকরি করছিলেন নারায়ণগঞ্জের একটি রেডিমেট গার্মেন্টসে। বেতনের টাকা পেলেই বাড়ি ফিরে মায়ের চিকিৎসা করাবেন। বাড়ি থেকে যাওয়ার মাত্র ১৩ দিনের মাথায় গুলিবিদ্ধ লাশ হয়ে ফিরবেন এমনটি প্রত্যাশা করেননি কেউ।

বিজ্ঞাপন

কোটাবিরোধী সহিংসতায় নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোডে পুলিশে গুলিতে নিহত রাসেলের নওগাঁর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কোনো সান্ত্বনাতেই থামছে না সন্তানহারা মায়ের কান্না।

রাসেল (১৮) নওগাঁর মান্দা উপজেলার কসবা ভোলাগাড়ি গ্রামের গ্রামের পিন্টু ছেলে। তিনি নারায়ণগঞ্জের ডিআইটি রোড এলাকায় রেডিমেট গার্মেন্টসে কাজ করতেন। ওই এলাকায় গত ১৯ জুলাই ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের মধ্যে বুকে গুলিবিদ্ধ হন রাসেল। বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরদিন শনিবার অপারেশন করে গুলি অপসারণ করা হলেও তাকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি।

রাসেলের গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, মা রাশেদা বেগম কোনোভাবেই মানতে পারছেন না ছেলের মৃত্যুর খবর। বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন তিনি। শোকাহত স্বজনরা বাড়ির উঠোনে ভিড় করে আছেন ।

বিজ্ঞাপন

পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে শোকে ভেঙে পড়েছেন বাবা পিন্টু। তিনি বলেন, ‘আমি মানষের জমিতে কাজ করি। মানষের জমিতে থাকি। আমার নিজের বলতে কিছুই নাই। ছেলেকে কবর দিয়েছি মানষের জমিতে। আমার আয় দিয়ে পরিবারের সবার মুখে ভাত দিতেই জীবন যায় যায়। ভেবেছিলাম ছেলের পাঠানো টাকা দিয়ে অসুস্থ বউয়ের চিকিৎসা করাবো। আর হলো না। আমার সব শেষ হয়ে গেল।’

প্রতিবেশি আইজার রহমান বলেন, ‘রাসেল খুব শান্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল। জীবনে কখনো গোলমাল বা মারামারির সঙ্গে জড়িত হয়নি। তার মতো ভদ্র ছেলে এই এলাকায় ছিল না।’

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য পাঞ্জাব আলী বলেন, ‘এই গ্রামে পিন্টুর চেয়ে গরিব লোক আর নেই। তিন ভাই বোনের মধ্যে রাসেল ছিলেন সবার ছোট। টাকার অভাবে কোনো ছেলে মেয়েকে পিন্টু লেখাপড়া করাতে পারেনি। এক বোনের বিয়ে হয়েছিল কিন্তু টাকার অভাবে স্বামী তালাক দিয়েছে। টাকার অভাবে প্রতিবন্ধী মেয়েটারও চিকিৎসা করাতে পারেননি। কিশোর রাসেলই ছিল পরিবারের একমাত্র ভরসা।’

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/একে

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন