বিজ্ঞাপন

ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাওয়ার আহ্বান ইসলামী ঐক্যজোটের

August 3, 2024 | 2:29 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: আন্দোলনরত ছাত্রদের ঘরে ফিরে যাওয়ার জন্য আহ্বান জানালেন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মিছবাহুর রহমান চৌধুরী।

বিজ্ঞাপন

ছাত্রদের উদ্দেশে তিনি বলেন, তোমাদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। এবার ঘরে ফিরে যাও। বাকি দাবিগুলো সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসে আদায় করার জন্য ছাত্রদের প্রতি অনুরোধ জানান।

প্রিয় মাতৃভূমির জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে ইসলামী ঐক্যজোট প্রস্তুত রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

শনিবার (৩ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবে জহুর হোসেন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আহ্বান জানান। এসময় জোটের মহাসচিব মাওলানা মনিরুজ্জামান রব্বানী, জোটের নেতা আমজাদ হোসেন খোকন, আসাদুজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

মাতৃভূমি রক্ষার জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করার কথা বলেছেন, তা হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে কবে থেকে আপনারা মাঠে নামবেন? জবাবে মিছবাহুর রহমান চৌধুরী বলেন, আগামী সেপ্টেম্বর থেকে মাঠে নামবে ইসলামী ঐক্যজোট। তবে এই মুহূর্তে জোটের নেতারা রাজপথে নমতে রাজি নন। কেননা ছাত্রদের ঘরে ফিরিয়ে নিয়ে রাজপথে লড়াই করবে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে। আশাকরি ছাত্ররা শিগগির ঘরে ফিরে যাবে।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ছাত্রদের এই ন্যায্য আন্দোলন বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট দৃঢ় সমর্থন জানিয়ে আসছিলো। অহিংস এই আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করার জন্য আমরা বারবার সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছি। আমরা বলেছিলাম, ছাত্রদের সঙ্গে দ্রুত আলোচনা করে তাদের দাবি বাস্তবায়ন না করলে ষড়যন্ত্রকারীরা কোমলমতি ছাত্রদের আন্দোলনে অনুপ্রবেশ করে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ চালাতে পারে। সরকারের সংস্থাগুলো বা সরকার এ কথাগুলো আমলে নেয়নি। জনসমর্থিত একটি ঐতিহাসিক আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করে সমস্ত আন্দোলনকে রক্তাক্ত করে দেওয়া হলো। দুই শতাধিক মানুষ মৃত্যুবরণ করলো এবং আহত হলো কমপক্ষে আরও দুই হাজার। মৃত্যুবরণকারীদের মধ্যে ছাত্র, সাধারণ পথিক, পুলিশ ও শিশুসহ নানা পেশার মানুষ। এই মৃত্যুর দায় কার?

তিনি বলেন, এই ঘটনার দ্রুত বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে, তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ করতে হবে। প্রকৃত দোষীদের গ্রেফতার করে বিশেষ আদালত গঠন করে এদের বিচার করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

জামায়াত ইসলামী নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে সমগ্র উপমহাদেশের আলেমরা এই দলটিকে একটি উগ্র ফিৎনাবাজ দর্শনে লালিত দল হিসেবে আখ্যায়িত করে আসছিলেন। ইতিহাস সাক্ষী যে, উগ্রবাদী গোষ্ঠী হযরত আলী (রা.)-কে হত্যা করেছিল, তারা নিজেকে বিশুদ্ধ মুসলমান মনে করতো। তাদের স্লোগান ছিল আল্লাহর আইন চাই, সৎলোকের শাসক চাই। এই উগ্রবাদী খুলাফায়ে রাশিদীনকেও সৎ মনে করত না।

সরকার জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। আন্তর্জঅতিক যুদ্ধপরাধ আদালত বহু পূর্বে জামায়াতে ইসলামীকে একটি অপরাধী দল হিসেবে আখ্যায়িত করেছিল। আমি নিশ্চিতভাবে জানি, জামায়াত-শিবিরের চতুরতা সম্বন্ধে সরকারের কোনো ধারণা নেই। অথবা যারা এ ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখার দায়িত্বে, তাদের সঙ্গে জামায়াতের অনেকে আর্থিক সংস্থার সঙ্গে জড়িত।

যে উলামারা এতদিন জামায়াতের পাপাচারিতা দেশবাসীকে অবগত করতেন, এখন তাদের সন্তানরা জামাতের অর্থসহ সহযোগিতা, ব্যবসা, আমদানি-রফতানির সুযোগ- সুবিধা পেয়ে জামায়াত-শিবিরের নেতৃত্বে বৃহৎ ইসলামী ঐক্যের আওয়াজ উঠিয়েছিলেন। জামায়াতের কথিত হেকমতের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। যদি জামায়াতের প্রকৃত রূপ দেশবাসীর সামনে স্পষ্ট করা না যায়, তবে এই নিষিদ্ধ করা কোনো কাজে আসবে না। আর্থিক প্রতিষ্ঠান, অঙ্গ সংগঠন ও প্রক্সি গ্রুপগুলোর ব্যাপারে সরকার কতটুকু জানে আমাদের জানা নাই।

তিনি বলেন, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করে সরকার বড় ধরনের ঝুঁকি নিয়েছে। এই মুহূর্তে জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন। সরকারকে মনে রাখতে হবে, ১৪ দলের নেতার বাহিরে সরকারের পরিক্ষিত অনেক মিত্র ছিল। সরকার তাদের সঙ্গে কথা না রাখলেও তারা সরকারের বিপদমুহূর্তে পাশে থেকেছেন। বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যজোট সব পরিস্থিতিতে সরকারের পাশে ছিলো। তবে দুর্নীতি ও মন্ত্রীদের অনেকের অতিরিক্ত কথা, এমপিদের জমিদারির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় সরকারের ভেতরের অনেকেই আমাদেরকে দূরে রাখতে চান। এতে আমরা দুঃখিত নই। আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকারে আমরা প্রস্তুত।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের দাবির সমর্থনে সুপ্রিম কোর্টের রায়কে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি, একই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো সহানুভূতির সঙ্গে গ্রহণ করায় সরকারকে অভিনন্দন জানাই।

এসময় তিনি পাঁচ দফা দাবি পেশ করেন। দাবিগুলো হচ্ছে-

১. ছাত্র আন্দোলনে নিহত প্রতিটি ঘটনার বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দ্রুত ব্যবস্থা করতে হবে।

২. প্রকৃত শিক্ষার্থী যারা গ্রেফতার হয়েছে তাদেরকে দ্রুত মুক্তি দিতে হবে, যাতে কোনো অবস্থায় এদের শিক্ষা বাধাগ্রস্ত না হয়। নিহতদের পরিবারকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে।

৪. যত দ্রুত সম্ভব বিশ্ববিদ্যালয়গুলোসহ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।

৫. জামায়াত-শিবির ও তাদের প্রকাশ্য ও গোপন অঙ্গ সংগঠনগুলো যাতে দেশে আর কোনো নৈরাজ্যের সৃষ্টি করতে না পারে, সে ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তবে সুযোগ সন্ধানীরা যেন কোনো সীমালঙ্ঘন বা মতবলবাজী করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে।

সারাবাংলা/এএইচএইচ/এনইউ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন