বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রামে পুলিশ-আ.লীগের সাথে সংঘর্ষের পর ছত্রভঙ্গ বিক্ষোভকারীরা

August 4, 2024 | 2:02 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

নিউমার্কেট থেকে: চট্টগ্রাম নগরীতে পুলিশ এবং আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিলে বিক্ষোভরত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীদের ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিক্ষোভকারীদের দমাতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে। অন্যদিকে ঘটনাস্থলে ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

বিজ্ঞাপন

পুলিশ ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের যৌথ আক্রমণের মুখে টিকতে না পেরে আন্দোলনকারীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অবস্থান নিয়েছে। সংঘাতময় পরিস্থিতিতে নগরীর নিউমার্কেটসহ আশপাশের কয়েক কিলোমিটার এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানপাটও বন্ধ আছে। পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা রোববার (৪ আগস্ট) সকাল এগারোটা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। অন্যদিকে কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ একইস্থানে দুপুর একটা থেকে জমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে একসঙ্গে অবস্থানের ঘোষণা দেয়।

সকাল ১১টা থেকে কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা সাড়ে ১০টায় নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেন। এসময় হাজারো মানুষ নিউমার্কেট মোড় ঘিরে চারপাশে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। জিপিও, সদরঘাট রোড, স্টেশন রোড এবং আমতল এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।

বিজ্ঞাপন

ঘটনাস্থলে দেখা গেছে, সকাল ১১টা ২০ মিনিটের দিকে সরকারি সিটি কলেজ ও ইসলামিয়া কলেজ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা সদরঘাট থেকে নিউমার্কেট মোড়ে আসেন। এসময় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের কয়েকদফা ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এর প্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের একাংশ গিয়ে নগরীর দারুল ফজল মার্কেটে নগর আওয়ামী লীগের কার্যালয় লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করে। এছাড়া সদরঘাটে একটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেন আন্দোলনকারীরা।

এর মধ্যে সদরঘাটের দিক থেকে পুলিশ নিউমার্কেট মোড়ের দিকে গিয়ে আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকেন। এতে কয়েক মিনিটের মধ্যেই আন্দোলনকারীরা পিছু হটেন। তাদের একাংশ নিউমার্কেট মোড় ছেড়ে জুবিলি রোডের দিকে রওয়ানা দেন।

বিজ্ঞাপন

ততক্ষণে আশপাশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে নিউমার্কেট মোড়ে জড়ো হতে থাকেন। আনুমানিক বিশ মিনিট পর নিউমার্কেট মোড়ে থাকা আন্দোলনকারীদের বাকি অংশের সঙ্গে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এবং পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হয়। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল ছুঁড়তে থাকলে আন্দোলনকারীরা দ্রুত ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সরে যান। এর ফলে নিউমার্কেট মোড় আওয়ামী লীগের দখলে চলে আসে।

বেলা সাড়ে ১২টার দিকে নিউমার্কেট মোড়ে যান নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন, সহ-সভাপতি ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ ও শফিক আদনান, বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মশিউর রহমান, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক চন্দন ধর, আইন সম্পাদক শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, দক্ষিণ জেলার সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান, কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব, জামশেদুল আলম চৌধুরীসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। তারা নিউমার্কেট গোলচত্বরে অবস্থান নিয়ে সমাবেশ করছেন।

এদিকে নিউমার্কেট থেকে সরে গিয়ে আন্দোলনকারীরা বিভিন্ন অংশে ছত্রভঙ্গ হয়ে নগরীর লাভ লেইন, কাজির দেউড়ির মোড়, লালখান বাজার, ওয়াসার মোড়, আন্দরকিল্লা এলাকায় অবস্থান নিয়েছেন। নগরীর স্টেশন রোডে একটি গুদামের মধ্যে কয়েকজন ছাত্রী আটকা পড়েছেন বলে তাদের একজন সারাবাংলাকে জানিয়েছেন।

আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে চলে যাবার পথে নগরীর বিভিন্ন এলাকায় আগে থেকে জড়ো হয়ে থাকা আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের ধাওয়া এবং প্রতিরোধের মুখে পড়েন। নগরীর ওয়াসার মোড়ে আন্দোলনকারীদের একাংশ জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকলে আলমাস মোড় থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করেন। এসময় একদল সেনা সদস্য মাঝখানে দাঁড়িয়ে হামলাকারীদের প্রতিরোধ করে আন্দোলনকারীদের রক্ষা করতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা সেনাবাহিনীর পক্ষে স্লোগান দিতে থাকেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/আইসি/আরডি

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন