বিজ্ঞাপন

‘সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না’

August 4, 2024 | 8:31 pm

স্পেশাল করসপন্ডেন্ট

ঢাকা: দেশের চলমান পরিস্থিতিতে সশস্ত্র বাহিনীকে নিজ নিজ ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, একটি অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতি থেকে উদ্ভূত এ রাজনৈতিক সংকটকালে আমরা ক্ষমতাসীন সরকারের প্রতি রাজপথ থেকে সশস্ত্র বাহিনীকে তাদের ছাউনিতে ফিরিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। অনুরোধ করে বলছি, এ সংকট আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের উদ্যোগ নিন। দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীকে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি দাঁড় করাবেন না।

রোববার (৪ আগষ্ট) রাজধানীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া লিখিত বক্তব্যে এসব কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের অনুমতি নিয়ে তাদের পক্ষে তিনি লিখিত বক্তব্য পাঠ করছেন।

চলমান পরিস্থিতিতে সীমান্ত অরক্ষিত উল্লেখ করে ইকবাল করিম ভূঁইয়া বলেন, ছাত্রদের যৌক্তিক আন্দোলন দমনের জন্য সীমান্ত থেকে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বিজিবি সদস্যদের প্রত্যাহার করা হয়েছে। এ থেকে উত্তরণের জন্য সশস্ত্র বাহিনীকে অবিলম্বে সেনা ছাউনিতে ফিরিয়ে নিয়ে যেকোনো আপৎকালীন সংকট মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত রাখা প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

সংবাদ সম্মেলনে সাবেক এই সেনাপ্রধান বলেন, গত তিন সপ্তাহ ধরে সারা দেশে হত্যাযজ্ঞ, নির্যাতন, গুম ও গণগ্রেফতারের ঘটনায় আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন, মর্মাহত ও ব্যথিত। অজস্র কিশোর-তরুণের অকাল জীবনাবসান ঘটেছে, অভিভাবক হিসেবে নিজেদের দায়মুক্ত ভাবতে পারছি না। তাই বিবেকের তাড়নায় আমরা দেশবাসীর সামনে হাজির হয়েছি।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশের নীতিনির্ধারকরা যদি বিবেক, বুদ্ধি ও হৃদয়হীন হয়ে না পড়েন, তাহলে গত কয়েক সপ্তাহে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড়, করুণ ও মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটত না। এসব হামলা, আক্রমণ ও প্রতিরোধে অঙ্গহানি ঘটেছে অগণিত মানুষের। অন্ধ হয়েছেন বহু কিশোর ও তরুণ। অসহায় নাগরিকরা প্রয়োজনীয় ও জরুরি চিকিৎসাও পাচ্ছেন না। তার ওপর চলছে ব্লক রেইড করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে বাড়ি, ঘর ও মেস চিনে শিক্ষার্থীদের ধরে নিয়ে যাওয়ার মতো ভয়ংকর সব ঘটনা। মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন অথবা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন হাজার-হাজার নিরপরাধ কিশোর কিশোরী, তরুণ-তরুণী।

ইকবাল করিম ভূঁইয়া আরও বলেন, সুস্থ মস্তিষ্কের কোনো বিবেকবান মানুষের পক্ষে দেশে এমন একটি যুদ্ধ পরিস্থিতি মেনে নেওয়া সম্ভব না। আমরা নিজেরা নিজেদের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হতে পারি না। আমাদের দেশটাকে, এই রাজধানী ঢাকা ও জেলা শহরগুলোকে যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে দিতে পারি না। আজ তাই এখানে দাড়িয়ে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলছি— আমরা তা করতে দেবো না। সব শ্রেণীপেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকব।

বিজ্ঞাপন

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী গত তিন দশক ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম ও ত্যাগের মাধ্যমে যে সম্মান, মর্যাদা ও গৌরব অর্জন করেছে, তা আজ কঠিন পরীক্ষার মুখে। সর্বজনীন মানবাধিকারের সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক মান রক্ষা করেই সবাইকে নিজ দেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে। চোখের সামনে আমরা নিজেদের মাতৃভূমিকে ধ্বংস হতে দিতে পারি না।

কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া প্রাণহানি ও সহিংসতার ঘটনা জাতিসংঘের অধীনে তদন্তের দাবি জানিয়ে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এ পরিস্থিতিতে সংগঠিত সব হত্যাকাণ্ড, জখম, গুলি, হামলা, ভাঙচুর, সন্ত্রাসের ঘটনার স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য তদন্ত হতে হবে জাতিসংঘের নেতৃত্বে ও তাদের অধীনে। আমরা বাংলাদেশের মানুষকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি এবং ভালোবাসি। সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত সব সদস্য সার্বভৌমত্ব রক্ষায় শপথ ও সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রস্তুতি নিয়েই এ পেশায় নিয়োজিত আছেন। আজ দেশের এ ক্রান্তিলগ্নে আমাদের সব সহকর্মীকে বিনিতভাবে অনুরোধ করব, সৈনিক পেশার সর্বোচ্চ মর্যাদা, মানবিকতা ও নৈতিকতাব মানদণ্ড রেখে দায়িত্ব পালন করবেন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, আক্রমণকারীরা গণআন্দোলনের প্রতিরোধের মুখে পিছপা হতে বাধ্য হলে পরবর্তী পর্যায়ে ব্যবহার করা হলো বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীকে। তাদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে কখনো সম্মুখভাগে, কখনো পেছনে ও পাশে দাঁড় করিয়ে অন্যান্য বাহিনীগুলো এ গণআন্দোলনের ওপর তাদের জুলুম, অত্যাচার, নির্যাতন অব্যাহতভাবে চালিয়ে যাচ্ছে। কোনোভাবেই এমন পরিস্থিতির দায় দেশপ্রেমিক সশস্ত্র বাহিনীর নেওয়া উচিত নয়। বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী অতীতে কখনো দেশবাসী বা সাধারণ জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ায়নি। তাদের বুকে বন্দুক তাক করেনি।

বিজ্ঞাপন

সারবাংলা/জিএস/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন