বিজ্ঞাপন

আন্দোলনকারীদের মুক্ত করে হামলা ঠেকালেন সেনাসদস্যরা

August 4, 2024 | 8:57 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

নিউমার্কেট থেকে : পুলিশ ও আওয়ামী লীগের আক্রমণের মুখে ছত্রভঙ্গ হয়ে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট এলাকায় বিভিন্নস্থানে আটকে পড়া আন্দোলনকারীরা প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে মুক্ত হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন। এর পর বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা ফের নিউমার্কেট মোড় নিয়ন্ত্রণে নেন। এ সময় তাদের ওপর হামলার চেষ্টা হলে সেনাসদস্যদের প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে সেনাসদস্যদের জড়িয়ে ধরে উল্লাস প্রকাশ করেন।

বিজ্ঞাপন

রোববার (৪ আগস্ট) বেলা ১২টার দিকে নিউমার্কেট মোড় থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে আন্দোলনকারীরা রিয়াজউদ্দিন বাজার, তিনপুলের মাথা ও স্টেশন রোড এলাকায় বিভিন্ন মার্কেটে ঢুকে পড়েন। বিকেল ৫ টার দিকে তারা অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে মুক্ত হন। এর পর অবশ্য আন্দোলনকারীরা নিউমার্কেট থেকে চলে যান। নগরীর আগ্রাবাদ এবং বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন।

ঘটনাস্থলে দেখা যায়, বিকেল ৫টার কিছুক্ষণ আগে সেনাবাহিনীর একটি সাজোয়া যান আমতল হয়ে নিউমার্কেটের দিকে যাচ্ছিল। তখন তিনপুলের মাথায় আওয়ামী লীগের একদল নেতাকর্মী অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে নিউমার্কেট মোড়ে গোলচত্বরে আওয়ামী লীগের সমাবেশ চলছিল।

সেনাবাহিনীর সাজোয়া যান দেখে অলিগলি থেকে কিছু আন্দোলনকারী স্লোগান দিতে দিতে বেরিয়ে আসেন। সাজোয়া যান এগিয়ে যেতেই সেনাসদস্যদের বহনকারী আরও কয়েকটি গাড়ি ওই এলাকায় আসে। তখন রিয়াজউদ্দিন বাজার, তামাকমুণ্ডি লেইন, জলসা মার্কেট, গোলাম রসুল মার্কেট, স্টেশন রোডের বিভিন্ন মার্কেট থেকে দলে দলে আন্দোলনকারীরা বেরিয়ে আসেন। তারা সেনাসদস্যদের উপস্থিতিতে স্লোগান দিতে দিতে নিউমার্কেট এলাকায় পৌঁছেন।

বিজ্ঞাপন

এর মধ্যে তিনপুলের মাথা থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তাদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়তে ছুঁড়তে এগিয়ে যেতে থাকলে সেনাসদস্যদের প্রতিরোধ করতে দেখা যায়। সেনাসদস্যদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা পিছু হটে। এ অবস্থায় ফের নিউমার্কেট মোড় আন্দোলনকারীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যায়।

সরকার পতনের একদফা দাবিতে সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলনের সমর্থনে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনকারীরা রোববার (৪ আগস্ট) সকাল এগারোটা থেকে চট্টগ্রাম নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, কেন্দ্রঘোষিত কর্মসূচির অংশ হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ একইস্থানে দুপুর একটা থেকে জমায়েত কর্মসূচি ঘোষণা করে। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, শ্রমিক লীগসহ সহযোগী সব সংগঠন একাত্মতা প্রকাশ করে একসঙ্গে অবস্থানের ঘোষণা দেয়।

সকাল ১১টা থেকে কর্মসূচি শুরু করার কথা থাকলেও আন্দোলনকারীরা সাড়ে ১০টায় নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে অবস্থান নেন। এ সময় হাজারো মানুষ নিউমার্কেট মোড় ঘিরে চারপাশে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করতে থাকেন। জিপিও, সদরঘাট রোড, স্টেশন রোড এবং আমতল এলাকায় ব্যারিকেড দিয়ে বিক্ষোভকারীরা যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেন।

বিজ্ঞাপন

তবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী এবং পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া এবং সংঘর্ষের মুখে আন্দোলনকারীরা বেলা ১২টার দিকে নিউমার্কেট ছেড়ে যেতে বাধ্য হন। এ সময় তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে আশপাশের বিভিন্ন মার্কেট ও অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়েন।

এর পর থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিন পুলের মাথা, এনায়েত বাজার, লাভ লেইন, কাজির দেউড়ির মোড়, সিআরবি, আসকার দিঘীর পাড়, দেওয়ানবাজার এলাকায় আওয়ামী লীগ ও আন্দোলনকারীদের মধ্যে দফায় দফায় সর্ঘর্ষ হয়। এ সময় নগরীর নুর আহমদ সড়কে নগর বিএনপির কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়।

বিভিন্ন অলিগলি থেকে বেরিয়ে আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিয়ে মিছিল নিয়ে এগোতে থাকলে ইট-পাটকেল, ককটেল নিক্ষেপ করে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তাদের ছত্রভঙ্গ করে দিতে দেখা যায়। তবে সেনাসদস্যরা নিউমার্কেট এলাকায় প্রতিরোধের পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের আর সক্রিয় দেখা যায়নি। তবে খণ্ড খণ্ড হয়ে নেতাকর্মীরা নগরীর বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন।

এর আগে, নিউমার্কেট থেকে ছত্রভঙ্গ হয়ে একদল আন্দোলনকারী ওয়াসার মোড়ে এসে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় আলমাস মোড়ের দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গিয়ে তাদের ওপর হামলার চেষ্টা করলে সেনাসদস্যরা প্রতিরোধ করেন।

বিজ্ঞাপন

নগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ সারাবাংলাকে বলেন, ‘নিউমার্কেট মোড়ে এখন আন্দোলনকারী ও আওয়ামী লীগের কেউ নেই। বহদ্দারহাট ও আগ্রাবাদে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নিয়েছে। বহদ্দারহাটে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ওপর হামলা করেছে। সেখানে সংঘর্ষ চলছে। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছে।’

এদিকে দিনভর সংঘাতে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ নগরীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এদের মধ্যে বেশ কয়েকজন গুলিবিদ্ধ বলে জানা গেছে।

চমেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত চিকিৎসক মোমিনউল্লাহ ভূঁইয়া সারাবাংলাকে জানান, সংঘাতে আহত হয়ে রোববার বিকেল পর্যন্ত ১০০ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তিনজন আইসিইউতে আছেন।

এ ছাড়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, বাঁশখালী এবং পটিয়ায় বিক্ষোভকারী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে।

সারাবাংলা/আইসি/আরডি/পিটিএম

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন