বিজ্ঞাপন

বঙ্গভবনে বৈঠকে সিদ্ধান্ত— অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান ড. ইউনূস

August 6, 2024 | 11:53 pm

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হচ্ছেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাত ১২টার দিকে বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতির প্রেসউইং এ সিদ্ধান্ত জানিয়েছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারের সদস্য হিসেবে আর কারা থাকছেন, সে বিষয়ে এখনই কিছু জানা যায়নি।

রাষ্ট্রপতির প্রেসউইং থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বঙ্গভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে নোবেলজয়ী ব্যক্তিত্ব অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে একটি অন্তর্বতী সরকার গঠনের প্রস্তাব করা হয়। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তাদের প্রস্তাবের সঙ্গে একমত পোষণ করেন।

আরও পড়ুন- শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব ফেরাতে পারি না: ড. ইউনূস

বিজ্ঞাপন

রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, দেশ এখন ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে। এ সংকট উত্তরণে যত দ্রুতসম্ভব অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা জরুরি।

বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে অন্তর্বর্তী সরকারের অন্য উপদেষ্টাদের মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরামর্শ দেন রাষ্ট্রপতি। এ ছাড়া তিনি অন্তর্বর্তী সরকারে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে মনোনয়ন দেওয়ার পরামর্শ দেন। রাষ্ট্রপতি সংকট উত্তরণে দেশবাসীকে সহযোগিতা করার আহ্বান জানান।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা ৭ মিনিটে সেনাবাহিনীর একটি মাইক্রোবাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের ১৩ জন বঙ্গভবনে প্রবেশ করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. তানজীম উদ্দীন খান।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- বঙ্গভবনে ১৩ সমন্বয়ক, সঙ্গে আছেন ঢাবির দুই শিক্ষক

নতুন সরকারের রূপরেখার প্রস্তাব নিয়েই মূলত বঙ্গভবনে গিয়েছিলেন ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। পাঁচ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সেখানে বৈঠক চলে।

বৈঠকে সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন এবং নৌ বাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসানও উপস্থিত ছিলেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই রাজপথে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও ১৬ জুলাই সারা দেশেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন ছয় শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। এরপর সংঘর্ষ-সংঘাত বাড়তেই থাকে।

বিজ্ঞাপন

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জুলাই দুপুরে মোবাইল ইন্টারনেট ও রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। দেশ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণহানি বাড়তে থাকলে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। তবে সংঘাত-সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শ মানুষ প্রাণ হারান।

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গত শনিবার (৩ আগস্ট) এই আন্দোলন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। পরদিন সারা দেশে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন ১৪ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় এক মানুষ প্রাণ হারান।

পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা যখন ঢাকা প্রবেশ করছেন, এমন সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুপুর আড়াইটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের পথে রওয়ানা হন তিনি। কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করেন।

সেনাপ্রধান বলেন, বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে তিনি বৈঠক করেছেন। তারা সবাই একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে দেশ পরিচালনার বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। রাষ্ট্রপতির সঙ্গে আলোচনা করে সেই অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা চূড়ান্ত করা হবে দুয়েক দিনের মধ্যেই।

পরে মঙ্গলবার ভোর ৪টার দিকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এক ভিডিওবার্তায় অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা তুলে ধরেন। তারা জানান, ড. ইউনূসকে এই সরকারের প্রধান হিসেবে রেখেছেন তারা। সরকারের বাকি সদস্যদের নাম পরে জানাবেন। এখন পর্যন্ত তাদের কাছ থেকেও বাকি সেই নামগুলো পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন