বিজ্ঞাপন

অন্তর্বর্তী সরকারের শপথ আজ, ৩ দিন পর নেতৃত্ব পাচ্ছে দেশ

August 8, 2024 | 8:22 am

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ছাত্র আন্দোলনের পথ ধরে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতা হারিয়েছে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর তিন দিন ধরে নির্বাহী বিভাগে কোনো ধরনের নেতৃত্ব ছাড়াই চলছে দেশ। শেষ পর্যন্ত নির্বাহী বিভাগের অপেক্ষার অবসান ঘটছে। যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের হাত ধরে সরকারের পতন, তাদের প্রস্তাবনাতেই শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠন হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বিজ্ঞাপন

আজ বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) রাত ৮টায় ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার শপথ নিতে যাচ্ছে। তবে এই সরকারে আর কারা কারা থাকছেন উপদেষ্টা হিসেবে, সে বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকারের আকার নিয়েও সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য মেলেনি।

আকার যাই হোক, সদস্য যারাই থাকুক— শপথের মাধ্যমে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পাবে অন্তর্বর্তী সরকার। প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পদত্যাগের প্রায় ৭২ ঘণ্টা পরও দেশে এখনো যে নেতৃত্বশূন্যতা বিরাজ করছে, তারও অবসান ঘটবে। শিক্ষার্থী ও জনতার গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকার উৎখাত ও তাদের প্রস্তাবনাতেই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন হচ্ছে বলে নির্বাচিত না হলেও এই সরকার জনসমর্থনের নৈতিক বৈধতা নিয়েই যাত্রা শুরু করবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

আরও পড়ুন-

বিজ্ঞাপন

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে ১ জুলাই রাজপথে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও ১৬ জুলাই সারা দেশেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হলে ছয়জন প্রাণ হারান। এরপর সংঘর্ষ-সংঘাত বাড়তেই থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জুলাই দুপুরে মোবাইল ইন্টারনেট ও রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে প্রাণহানি বাড়তে থাকলে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। তবে সংঘাত-সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শ মানুষ প্রাণ হারান।

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গত শনিবার (৩ আগস্ট) কোটা সংস্কারের আন্দোলন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। আন্দোলনকারীরা পরদিন সারা দেশে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেন। এ দিন ১৪ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় এক শ মানুষ প্রাণ হারান। পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে কয়েক লাখ আন্দোলনকারী যখন ঢাকা প্রবেশ করছেন, এমন সময় প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

সরকার পতনের পর থেকেই শুরু হয় অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের প্রক্রিয়া। সোমবার দুপুরেব সেনা সদর দফতরে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। ওই বৈঠকেই সবাই অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তাদের ওপর দেশ পরিচালনার ভার দেওয়ার বিষয়ে সম্মত হন বলে জানান সেনাপ্রধান। পরে রাষ্ট্রপতির সঙ্গেও এ বিষয়ে বৈঠক করেন তিনি।

এদিকে মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) ভোরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা এক ভিডিওবার্তায় জানান, ড. ইউনূসকে প্রধান করে তারা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রূপরেখা প্রণয়ন করেছেন। তবে তাদের প্রস্তাবনায় থাকা সরকারের বাকি সদস্যদের নাম তারা প্রকাশ করেননি। পরে মঙ্গলবার সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত সমন্বয়করা বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

দীর্ঘ বৈঠকের পর রাষ্ট্রপতির কার্যালয় জানায়, ড. ইউনূসকেই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান করা হবে। সরকারের পূর্ণাঙ্গ কাঠামো ঘোষণা করা হবে শিগগিরই। শিক্ষার্থীরাও জানান, তাদের প্রস্তাবনাই সরকার গঠনের ক্ষেত্রে অনুমোদন পাবে বলে তারা নিশ্চয়তা পেয়েছেন।

এ ঘোষণার পর বুধবারই এই সরকারের ঘোষণা আসবে বলে অপেক্ষায় ছিলেন অনেকেই। তবে যার নেতৃত্বে গঠন হবে অন্তর্বর্তী সরকার, সেই ড. ইউনূস দেশের বাইরে থাকায় সময় নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিলই। বেলা গড়াতেই অবশ্য ইউনূস সেন্টার এক বার্তায় জানায়, বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

পরে বুধবার (৭ আগস্ট) দুপুরে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান সেনা সদর দফতরে ব্রিফিংয়ে বলেন, ড. ইউনূস দেশে ফিরবেন বৃহস্পতিবার দুপুর ২টা ১০ মিনিটে। এ দিন রাত ৮টায় তার নেতৃত্বে গঠিত সরকার শপথ নেবে রাষ্ট্রপতির সরকারি বাসভবন বঙ্গভবনে।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকারের আকার ও এখানে কারা কারা থাকছেন, তা নিয়ে চলছে নানা ধরনের জল্পনা-কল্পনা। তবে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে তাদের তালিকায় থাকা উপদেষ্টাদের কারও নাম জানা সম্ভব হয়নি। বঙ্গভবন বা সেনা সদর দফতর থেকেও এই সরকারের সদস্য কারও নাম জানানো হয়নি। বুধবার সেনাপ্রধান কেবল জানিয়েছেন, অন্তর্বর্তী সরকারে ১৫ জন সদস্য থাকতে পারেন। এর দুয়েকজন কম-বেশি হতে পারে।

যারাই থাকুন না কেন অন্তর্বর্তী সরকারে, রাত ৮টা তাদের নাম নিশ্চয় জানা যাবে।

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন