বিজ্ঞাপন

পদত্যাগ করেননি, শেখ হাসিনাই এখনো প্রধানমন্ত্রী— রয়টার্সকে জয়

August 10, 2024 | 3:21 am

সারাবাংলা ডেস্ক

ছাত্র আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পাঁচ দিনের মাথায় তার সন্তান সজীব ওয়াজেদ জয় জানালেন সম্পূর্ণ নতুন এক তথ্য। বললেন, শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিকভাবে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগই করেননি। সে সময়টুকু পাননি তিনি।

বিজ্ঞাপন

রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জয় বলেন, ‘আমার কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ করেননি। তিনি সেই সময়টাই পাননি। তিনি একটি বক্তব্য দিয়ে তারপর পদত্যাগ করার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তার সরকারি বাসভবনের দিতে যাত্রা শুরু করে। তখন আর পরিকল্পনা অনুযায়ী কিছুই করতে পারেননি মা। এমনকি তিনি জিনিসপত্র পর্যন্ত গুছিয়ে নিতে পারেননি। ফলে সংবিধান অনুযায়ী এখনো তিনিই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী।’

শুক্রবার (৯ আগস্ট) দিবাগত রাত ২টার দিকে সজীব ওয়াজেদ জয়ের সাক্ষাৎকারভিত্তিক প্রতিবেদনটি প্রকাশ করেছে রয়টার্স। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন থেকে তিনি রয়টার্সের সঙ্গে কথা বলেন।

আরও পড়ুন- ভারতেই থাকবেন শেখ হাসিনা

বিজ্ঞাপন

জয়ের এমন দাবি করলেও বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলছেন ভিন্ন কথা। গত সোমবার (৫ আগস্ট) দুপুর আড়াইটার দিকে শেখ হাসিনা তার ছোট বোনকে নিয়ে ভারতের পথে সামরিক হেলিকপ্টারে করে রওয়ানা দেওয়ার কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান গণমাধ্যমে কথা বলেন।

বিকেল ৪টার দিকে জেনারেল ওয়াকার বলেন, প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে শেখ হাসিনা পদত্যাগ করেছেন। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে এখন অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করে তাদের দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হবে। তার এই বক্তব্যের প্রায় আড়াই ঘণ্টা আগেই শেখ হাসিনা ভারতের পথে রওয়ানা দেন বলে বিভিন্ন সরকারি সূত্রে জানা যায়।

এর পরদিন রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দেন। চার দিনের মাথায় বৃহস্পতিবার (৮ আগস্ট) নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকার শপথ নিয়েছে। সেই সরকারই এখন দেশ পরিচালনা করছে।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ‘গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার’ হলে দেশে ফিরবেন শেখ হাসিনা: জয়

রয়টার্সকে জয় বলেন, সেনাপ্রধানসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে রাষ্ট্রপতি সংসদ ভেঙে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী তার পদ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে পদত্যাগ না করা সত্ত্বেও একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে বাংলাদেশে। এই সরকার গঠনকে আদালতে চ্যালেঞ্জ করা যেতে পারে।

চলমান অবস্থায় আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ অংশ নেবে বলেও আশাবাদ জানান জয়। বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে অবশ্যই নির্বাচন হতে হবে। আমি আশাবাদী, ওই নির্বাচনে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসবে। তা না হলেও আমরা বিরোধী দলে থাকব। যেটাই হোক, তাতেই আমরা সন্তুষ্ট।

শেখ হাসিনা বা তার নিজের রাজনৈতিক পরিকল্পনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জয় বলেন, যাই ঘটুক না কেন, মা (শেখ হাসিনা) তার এই মেয়াদের শেষে অবসর গ্রহণ করতেনই। এখন দল যদি আমাকে (প্রধানমন্ত্রী পদে দলের প্রার্থী হিসেবে) চায়, অবশ্যই আমি সেটি বিবেচনায় রাখব।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- ভারতে শেখ হাসিনা, গন্তব্য যুক্তরাজ্য

সাক্ষাৎকারে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ারও প্রশংসা করেন সজীব ওয়াজেদ জয়। বলেন, খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে সব ধরনের শত্রুতা বা প্রতিশোধপরায়ণতা ভুলে যাওয়ার যে আহ্বান জানিয়েছেন, সেটির প্রশংসা করছেন তিনি।

জয় বলেন, খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন যে যা হওয়ার হয়ে গেছে, সেগুলো মনে রাখার প্রয়োজন নেই। তার এমন বক্তব্যে আমি খুশি। আমরা অতীন ভুলে যাই। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ না করি। আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে, সেটি ঐকমত্যের সরকার হোক বা না হোক।

গণতান্ত্রিক লড়াইয়ের জন্য বিএনপির সঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় জানিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা পদে থাকা জয় বলেন, বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক নির্বাচন আয়োজন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আমরা বিএনপির সঙ্গে কাজ করতে চাই। আমরা তাদের সঙ্গে কাজ করতে চাই এটি নিশ্চিত করার জন্য যে বাংলাদেশে শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকবে, যেখানে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

আরও পড়ুন- শেখ হাসিনা আর রাজনীতিতে ফিরবেন না— জানালেন জয়

জয় বলেন, রাজনীতি ও আলোচনা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলে আমি মনে করি। আমরা নানা ইস্যুতে তর্ক করতে পারি। আমরা কোনো বিষয়ে একমত নাও হতে পারি। তবে ভিন্নমত পোষণের অধিকারের প্রতি আমাদের একমত থাকতে হবে। আর আমরা সবসময়ই আপস করার উপায়ও খুঁজে বের করতে পারি।

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে গত ১ জুলাই রাজপথে আন্দোলনে নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। শুরুতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চললেও ১৬ জুলাই সারা দেশেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও পুলিশের সংঘর্ষ হয়। ওই দিন ছয় শিক্ষার্থী প্রাণ হারান। এরপর সংঘর্ষ-সংঘাত বাড়তেই থাকে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৮ জুলাই দুপুরে মোবাইল ইন্টারনেট ও রাতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয় সরকার। দেশ ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এর মধ্যে আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষে প্রাণহানি বাড়তে থাকলে ১৯ জুলাই রাতে সারা দেশে কারফিউ জারি করা হয়। তবে সংঘাত-সংঘর্ষ এড়ানো যায়নি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রায় দুই শ মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুন- দেশ ছাড়লেন শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা

নানা ঘটনাপ্রবাহের মধ্য দিয়ে গত শনিবার (৩ আগস্ট) এই আন্দোলন সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে রূপ নেয়। পরদিন সারা দেশে অসহযোগ কর্মসূচি পালন করেন আন্দোলনকারীরা। এ দিন ১৪ পুলিশ সদস্যসহ প্রায় এক মানুষ প্রাণ হারান।

পরদিন ‘মার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীরা যখন ঢাকা প্রবেশ করছেন, এমন সময় দুপুর দেড়টার দিকে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। দুপুর আড়াইটার দিকে ছোট বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে সামরিক হেলিকপ্টারে করে ভারতের পথে রওয়ানা হন তিনি। কিছুক্ষণ পরই সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগের তথ্য নিশ্চিত করেন।

আরও পড়ুন-

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন