বিজ্ঞাপন

অহংকারের মসনদ চূর্ণ বিচূর্ণ

August 12, 2024 | 4:59 pm

আবু মকসুদ

ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবিষ্কার করা হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনার পলায়নের পেছনে বিদেশি কোনো শক্তির হাত আছে কি না, তা তন্ন তন্ন করে খোঁজা হচ্ছে। চাওয়ার পরেও শেখ হাসিনা কোনো দ্বীপ লিজ দেননি, শেখ হাসিনার এমন স্পর্ধা তারা মেনে নেয়নি। এই কারণেই তাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তাছাড়া, ৫৫ বছর পরেও পাকিস্তান তাদের পরাজয়ের লজ্জা ভুলতে পারেনি; যেকোনো সুযোগে তারা বাংলাদেশকে পরাজিত করতে চায়, অপমানিত করতে চায়। তারাও তাদের গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে বাংলাদেশকে অস্থিতিশীল করার লক্ষ্যে এই আন্দোলনে উৎসাহ যুগিয়েছে। গত কয়েক বছর ধরে পাকিস্তান বাংলাদেশের হাঁটুর নিচে আছে, আগামী ১০-১৫ বছরেও তারা বাংলাদেশকে ধরতে পারবে না, তারাও বাংলাদেশ পতনের ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

আমার আওয়ামী লীগ সমর্থক কিছু বন্ধু বিশ্বাস করেন যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কারীরা ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসে গোপন বৈঠক করে আন্দোলনে নেমেছে। মার্কিন দূতাবাস তাদেরকে বলেছে, ‘তোমরা কোটা নিয়ে আন্দোলনে নামো, বাকিটা আমরা দেখব।’ সামান্য কোটা আন্দোলনকে আমরা সরকার পতনের আন্দোলনে পরিণত করব। ছাত্ররা যখন মার্কিন দূতাবাসে বৈঠক করে, তখন তাদের সাথে পাকিস্তানের আইএসআই ছিল। বাংলাদেশের পক্ষে ছিল বিএনপি, জামাত, হেফাজত, নাগরিক ফোরামসহ আওয়ামী বিরোধী সকল গোষ্ঠী। আমেরিকার সিআইএ’র সাথে ইসরায়েলের মোসাদ সম্পূর্ণ পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটিয়েছে।

আওয়ামী লীগকে যে উর্বর মস্তিষ্কের ভাবা হয়, এখানে কিছু প্রমাণ রাখা হলো —

শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, কিন্তু এর পেছনে কোনো বিদেশি ষড়যন্ত্রের হাত নেই। বরং, তার একঘেয়েমি, অহং, এবং সর্বংসহা মনোভাবের জন্য জনগণ তার প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে উঠেছিল। বছরের পর বছর ধরে জনগণের অভিযোগ, ক্ষোভ, এবং চাহিদার প্রতি কর্ণপাত না করার ফলেই তাকে শেষমেশ দেশত্যাগ করতে হয়েছে। আওয়ামী লীগের ভেতরেই একটি বড় অংশ তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলেছিল, এবং এই অসন্তোষ এতটাই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল যে, তা একটি গণআন্দোলনে রূপ নেয়।

বিজ্ঞাপন

বলা বাহুল্য, হাসিনার পতনে বিদেশীদের হাত ছিল না কিন্তু পতনের পর বিদেশি শক্তি তাদের স্বার্থ উদ্ধারের পরিকল্পনায় নামতে দেরি করেনি। হাসিনাবিহীন দেশে তারা চাইলেই তাদের মত করে কিছু বন্দোবস্ত করে ফেলতে পারবে। বর্তমান সরকারের প্রয়োজন বিদেশি সমর্থন, আর বিদেশের প্রয়োজন তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করা। হাসিনা এখন ক্ষমতায় নেই, আর ক্ষমতার আশেপাশে যারা থাকবে তাদের সবাইকে হাসিনা বিরোধী হতে হবে। হাসিনার সাথে সম্পর্কিত কাউকে ক্ষমতার আশেপাশে ঘেঁষতে দেওয়া হবে না। এটাই স্বৈরাচার পতনের পরে ঘটে। এবারও ঠিক একই সমীকরণ দেখা যাচ্ছে।

ছাত্ররা স্বপ্নেও ভাবেনি যে তাদের সামান্য কোটা আন্দোলন হাসিনা সরকারের মতো প্রতাপশালী সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারবে। হাসিনা নিজেও ভাবেননি যে ছাত্রদের এই সামান্য আন্দোলনকে গুরুত্ব না দিলে তাকে দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। দৈব যেন ছাত্রদের পক্ষে ছিল, তাদের অভাবনীয় সাফল্য তাদের নিজস্ব কৃতিত্বের কারণে ঘটেনি, বরং শেখ হাসিনার একগুঁয়েমি, অহংকার, এবং জনগণের প্রতি তার অবহেলাই তাকে পতনের পথে ঠেলে দিয়েছে।

এই আন্দোলনের সফলতার পেছনে প্রধান কারণ ছিল শেখ হাসিনার অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস এবং মূর্খের মতো অহংকার। ছাত্রদের ক্ষুদ্র দাবিকে তিনি অবজ্ঞা করেছিলেন, অথচ সেটাই তার বিরুদ্ধে এক বিশাল গণবিক্ষোভে রূপ নেয়। হাসিনার পতন শুধুমাত্র তার রাজনৈতিক দূরদর্শিতার অভাবকেই প্রকাশ করে না, বরং তার শাসনামলের সময়কালজুড়ে জমে ওঠা জনগণের অসন্তোষের প্রতিফলনও বটে। এই পুরো ঘটনায় প্রমাণিত হয়েছে, জনগণের দাবিকে অবহেলা করলে কত দ্রুতই না ক্ষমতার মসনদ ফিকে হয়ে যেতে পারে।

বিজ্ঞাপন

লেখক: যুক্তরাজ্য প্রবাসী, ছোটকাগজ ‘শব্দপাঠ’ সম্পাদক

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন