বিজ্ঞাপন

আগস্ট আবছায়া: অনুশোচনায় থমকে

August 15, 2024 | 6:32 pm

রনি অধিকারী

আগস্ট, বাঙালি জাতির কাছে ইংরেজি এই মাসটির রয়েছে আলাদা এক ইতিহাস ও তাৎপর্য। বাঙালির কাছে আগস্ট কোনো সুখের বার্তা দেয়নি, বরং বাঙালির ইতিহাসের অন্যতম কালো অধ্যায়টি রচনা করছে এই মাসটিই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার গোটা পরিবারকে ধানমন্ডি-৩২ এর বাড়িতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। আগস্ট তাই বাঙালির চোখে ভীতি জাগায়, অবিশ্বাসের জাগায়, ক্রোধের জাগায়। মনে জাগায় শোক। আর সেই শোক অবশ করে তোলে গোটা জাতিকে।

বিজ্ঞাপন

আরো যুক্ত হলো- আগস্ট ২০২৪। ৫ আগস্ট ২০২৪ নানা উল্লেখযোগ্য ঘটনার দিক থেকে ইতিহাসে এই দিনটিও গুরুত্বপূর্ণ ও স্মরণীয়। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার জেরে এক দফা দাবি উঠে শেখ হাসিনার পদত্যাগ। কারফিউ উপেক্ষা করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করে তারা। এক পর্যায়ে গণভবন এলাকা, শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে লোকে লোকারণ্য হয়ে উঠে। এ আন্দোলনে এক মাসে ৫৬৮ জনেরও বেশি প্রাণহানি ঘটে। কোটা আন্দোলনের জেরে দেশ ছাড়তে বাধ্য হলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। ৫৬৮ শহীদের রক্তের বিনিময়ে আরো একবার স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করলো বাংলার ছাত্র-জনতা। অন্যদিকে, শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর থেকে দেশে শুরু হয় ব্যাপক নৈরাজ্য। দুর্বৃত্তরা ডাকাতির পাশাপাশি শুরু করে লুটপাট, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যসহ অন্যান্য ভাস্কর্য ভাঙচুর। মেট্রোরেল, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও মানুষের বাসাবাড়িতে হামলাসহ অগ্নিসংযোগ।

আগস্ট মাসেই রাশিয়ান দুই মহান কবির মর্মান্তিক মৃত্যু হয়। সব যেন একসূত্রে গাঁথা ছিলো- ‘সময়’ ও ‘স্মৃতি’। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড নিয়ে প্রবল অবসেশনের তলটা খুঁজে পেতে… কেন এ পৃথিবীকে এ রকম হতেই হলো? যেখানে সহিংসতাই সভ্যতার নিগূঢ় নির্মম ইতিহাস রচনা করতে হবে। কে বানালো এই দাম্ভিক মহিষ-নিয়ন্ত্রিত পাষাণ পৃথিবী? যেখানে মানুষের বিশ্বাসগুলোর মধ্যে আছে আবেগ-অকূলতা এবং কাব্যিকতা। লড়াইগুলো মোটেও হাস্যরস নয়, আর সব লড়াইয়ের সূচনা- আবেগ থেকে জন্ম ও আক্রোশে পরিণত হয়। উপসংহারে একটা জাতি উপলব্ধি করে- দুর্বিষহ কিছু মৃত্যুময় ও নিষ্ঠুরতা।

বঙ্গবন্ধু বাঙালির কাছে খুব আবেগের জায়গা ছিলো। কিন্তু শেখ হাসিনা সরকার পতনের জন্য একদিন সেই আবেগ থেকে আক্রোশের জন্ম নেয়। তারপর সব ইতিহাস। ইতিহাস আরও সাক্ষ্য দেয়- যে মানুষের ভালোবাসার ক্ষমতা সীমিত, অন্যদিকে তার নৃশংস ও পাশবিক হত্যা হওয়ার ক্ষমতা সীমাহীন।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ভোরে সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য ধানমন্ডির বাসভবনে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি, তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিণী বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল, শিশু শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামালসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান।

মূলত, ১৯৭৫ এর ১৫ আগস্ট থেকেই বাংলাদেশে এক বিপরীত ধারার যাত্রা শুরু হয়। বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে সামরিক শাসনের অনাচারী ইতিহাস রচিত হতে থাকে। সপরিবারে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর গোটা বিশ্বে নেমে আসে তীব্র শোকের ছায়া এবং ছড়িয়ে পড়ে ঘৃণার বিষবাষ্প।

বঙ্গবন্ধু বাঙালির কাছে একটা শ্রদ্ধার জায়গা ছিলো। কিন্তু ৫ আগস্ট ২০২৪ সোমবার পাল্টে যায় বাংলাদেশের তথা, বাঙালির ইতিহাস। সেই শ্রদ্ধার জায়গাটা বোধহয় ম্লান হয়ে গেছে। কেন যেন ফিকে হয়ে গেছে। তবে এখানে তো বঙ্গবন্ধুর কোনো দোষ ছিলো না। কেন এমন হলো? আমরা কি বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে ফেললাম ইতিহাস থেকে? -এটা বাঙালি জাতির কাছে প্রশ্ন। আজ অনুশোচনায় থমকে দাঁড়িয়েছি… বঙ্গবন্ধুর জন্য হয়তো একদিন দু’ফোঁটা অশ্রু ফেলবে বাঙালি জাতি। অনেক দেরি করে ফেলবে ততক্ষণে। ‘সময়’ ‘স্মৃতি’ ও ‘ইতিহাস’ বড়ই রহস্যময়।

বিজ্ঞাপন

লেখক: কবি, সাংবাদিক

প্রিয় পাঠক, লিখতে পারেন আপনিও! লেখা পাঠান এই ঠিকানায় -
sarabangla.muktomot@gmail.com

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত মতামত ও লেখার দায় লেখকের একান্তই নিজস্ব, এর সাথে সারাবাংলার সম্পাদকীয় নীতিমালা সম্পর্কিত নয়। সারাবাংলা ডটনেট সকল মতাদর্শের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তবে মুক্তমতে প্রকাশিত লেখার দায় সারাবাংলার নয়।

সারাবাংলা/এসবিডিই

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন