বিজ্ঞাপন

রয়টার্সের প্রতিবেদন— নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করবে শিক্ষার্থীরা

August 17, 2024 | 12:27 am

সারাবাংলা ডেস্ক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের জের ধরে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এখন দেশ পরিচালনা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। তবে সরকার পতনের আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্ররা জানিয়েছে, তারা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করতে যাচ্ছে। আগামী এক মাসের মধ্যেই এ বিষয়ে আসবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বস্থানীয় কয়েকজন শিক্ষার্থী এমন কথাই জানিয়েছেন বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে। তারা বলছেন, শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলা দলের কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে রাষ্ট্রের সংস্কার।

গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা ছাড়তে বাধ্য হয়। এরপর আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরাই ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রস্তাব দেয়। সে অনুযায়ীই ৮ আগস্ট শপথ নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এরই মধ্যে অন্তর্বতী সরকারের কাছে দ্রুততম সময়ে নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়েছে। কিন্তু আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা রাষ্ট্র সংস্কারের আগ পর্যন্ত নির্বাচন আয়োজনের বিরোধিতা করছেন। সেই সংস্কারের লক্ষ্য সামনে রেখেই তারা গঠন করতে যাচ্ছেন রাজনৈতিক দল।

আরও পড়ুন- উপদেষ্টাদের দফতরে বড় রদবদল

বিজ্ঞাপন

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সেটিই একপর্যায়ে রূপ নেয় সরকার পতনের আন্দোলনে। ‘জেন জি’ হিসেবে পরিচিত তরুণেরা মানুষের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ, মন্ত্রী-এমপি ও আমলাদের দুর্নীতি থেকে শুরু করে সব অনিয়মের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার সে আন্দোলন গড়ে তোলেন। এসব তরুণ শিক্ষার্থীদের প্রত্যাশা, গত ১৫ বছর ধরে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার দেশে যে দমন-পীড়ন চালিয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন আর না হয়।

নব্বইয়ে স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের পতনের পর সাড়ে তিন দশকের প্রায় পুরোটা সময়ই ক্ষমতায় ছিল আওয়ামী লীগ অথবা বিএনপি। এই দুই দলের শীর্ষ নেতা যথাক্রমে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া দুজনের বয়সই ৭৫ বছরের বেশি। তা সত্ত্বেও তাদের নেতৃত্ব ছাড়া এসব দল নিজেদের চিন্তাও করতে পারে না। এমন অবস্থাতেই দেশে সংস্কার আনতে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন নিয়ে আলোচনা করছেন বলে রয়টার্সকে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম।

অন্তর্বর্তী সরকারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই প্রতিনিধি নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ উপদেষ্টা হিসেবে রয়েছেন। এর পাশাপাশি এই সরকার ও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে যোগাযোগ করতে শিক্ষার্থীরা একটি লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করেছেন, মাহফুজ যার নেতৃত্বে রয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- স্বরাষ্ট্রে নতুন উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর, সাখাওয়াত বস্ত্র ও পাটে

আইনের শিক্ষার্থী মাহফুজ আলম রয়টার্সকে বলেন, এক মাসের মধ্যে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের আগে সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে এ নিয়ে আমরা আলাপ করতে চাই। প্রকৃতপক্ষে দুই রাজনৈতিক দলের ওপর মানুষ আসলেই ক্লান্ত, বিরক্ত। আমাদের ওপর তাদের আস্থা রয়েছে।

শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক দল গঠনের পরিকল্পনা এর আগে কখনো স্পষ্টভাবে জানানো হয়নি। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আরেক সমন্বয়ক তাহমিদ চৌধুরী বলেন, নতুন রাজনৈতিক দল গঠনের সম্ভাবনা তো আছেই। এই দলের মূল ভিত্তি হবে অসাম্প্রদায়িকতা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা।

অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে থাকা দুই সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদ অবশ্য এ বিষয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি। সরকারে থেকে তারা কোন নীতিতে কাজ করছেন, সেটিও জানাননি। তবে নির্বাচন কমিশনের ব্যাপক সংস্কারের কথা বলছেন।

বিজ্ঞাপন

নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘এই আন্দোলনের স্পিরিট ছিল মূলত নতুন বাংলাদেশ গঠন করা, যেখানে কোনো ফ্যাসিস্ট বা স্বৈরাচার আর থাকবে না। তা নিশ্চিত করতে গঠনগত সংস্কার দরকার। এর জন্য কিছু সময় লাগবে।’

আরও পড়ুন- নতুন ৪ উপদেষ্টার কে কোন দফতর পেলেন

দ্রুত নির্বাচন দেওয়ার জন্য আওয়ামী লীগ ও বিএনপি থেকে যে দাবি জানানো হচ্ছে, তা অন্তর্বর্তী সরকার আমলে নিচ্ছে না বলে রয়টার্সকে বলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।

ছাত্ররা নতুন দল গঠন করছেন কি না— জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন বলেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়নি। তবে রাজনৈতিক ধারা পরিবর্তন হবে। কেননা এতদিন এই রাজনীতি থেকে তরুণদের বাদ রাখা হতো। এখন আর সে সুযোগ নেই।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস একজন অর্থনীতিবিদ। ‘ক্ষুদ্রঋণ’ ইস্যুতে তিনি বিশ্বে বেশ আলোচিত। তার এই তত্ত্ব কাজে লাগিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অর্থনীতিতে পরিবর্তন আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে যিনি যা চান তা বাংলাদেশে করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে বেশ সংশয় রয়েছে।

এ ব্যাপারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ শাহদীন মালিক রয়টার্সকে বলেন, ‘আমরা এখন অজানা নদীতে এসে পড়েছি। সেটা আইনি এবং রাজনৈতিকভাবেও। এই অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা কেমন হবে, তাও বলা যাচ্ছে না। কেননা এই সরকার আইন মেনে হয়নি।’

শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দলের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থার কথা বললেও সেটি উড়িয়ে দিচ্ছেন সদ্যই পদত্যাগে বাধ্য হওয়া শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়। তিনি রয়টার্সকে বলেন, ‘রাজনৈতিক দল কোথাও যাচ্ছে না। তাদের উৎপাটন করা যাবে না। এখন হোক কিংবা পরে, আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপিই ক্ষমতায় আসবে। আমাদের সহযোগিতা ছাড়া, আমাদের সমর্থকদের ছাড়া কেউ বাংলাদেশে স্থিতিশীল অবস্থা আনতে পারবে না।’

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন