বিজ্ঞাপন

ঢাকাতেও রাত দখল, ১৫ বছরে সংঘটিত ধর্ষণের বিচারসহ ১৩ দাবি মেয়েদের

August 17, 2024 | 2:10 am

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট

পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় আরজি কর হাসপাতালে এক ইন্টার্ন চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় কলকাতার মেয়ের দেশটির স্বাধীনতা দিবসের রাতে রাজপথে অবস্থান নিয়ে পালন করেছিল ‘রাত দখল’ কর্মসূচি। একই ঘটনায় প্রতিবাদ ও আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি জানাতে ঢাকাতেও প্রতিবাদী গান-কবিতা ও মশাল মিছিলে পালন হয়েছে ‘রাত দখল’ কর্মসূচি।

বিজ্ঞাপন

এ সময় দেশে গত ১৫ বছরে ঘটে যাওয়া ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়নের প্রতিটি ঘটনার বিচারসহ ১৩ দফা দাবি জানানো হয়। এ কর্মসূচিতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদও অংশ নেন।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেল থেকেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) টিএসসি এলাকায় আরজি কর হাসপাতালের ওই ঘটনার বিচারের দাবিতে মানববন্ধন ও সমাবেশ হয়। রাত ১০টার দিকে কলকাতার মতোই ‘মেয়েরা রাত দখল করো’ ব্যানারে ঢাবি ক্যম্পাসে শুরু হয় ‘রাত দখল’ কর্মসূচি।

শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ওই ব্যানারেই সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের সামনে থেকে শুরু হয় মশাল মিছিল। ভিসি চত্বর হয়ে আবারও রাজু ভাস্কর্যে ফিরে আসে মিছিলটি। সেখানে এক মিনিট নীরবতা পালনের পর শিক্ষার্থীরা মোমবাতি প্রজ্বালন করেন। পরে সমাবেশ ও সাংস্কৃতিক পরিবেশনায় অংশ নেন সবাই।

বিজ্ঞাপন

আরও পড়ুন- পশ্চিমবঙ্গের আন্দোলনে সমর্থন জানাল বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা

কর্মসূচির শুরুতে অবস্থানপত্র পাঠ করেন ইসরাত জাহান ইমু। বলেন, আমরা ১৬ বছর ধরে দেখে আসছি এখানকার বিচারব্যবস্থা কী অসংবেদনশীল। লাখ লাখ নারী নির্যাতনের মামলা বছরের পর বছর ট্রাইব্যুনালে আটকে থাকে। নারী ও শিশু ট্রাইব্যুনালে পর্যাপ্ত বিচারক থাকে না। সহিংসতার শিকার নারীকে হার মানতে হয় পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার কাছে, যেখানে ওই নারীকেই প্রমাণ দিতে হয় যে তিনি সহিংসতার শিকার হয়েছেন। আমরা বিশ্বাস করি, এখন সেই বিচারব্যবস্থা এখন স্বাধীন ও নিরপেক্ষ হবে, দূর হবে দীর্ঘসূত্রতা।

ভারতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানান সমাবেশে অংশ নেওয়া জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক রেহনুমা আহমেদ। বলেন, আমাদের দাবি— দেশে যত ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোর বিচার হতে হবে। এবার এটা হতেই হবে, আর কোনো টালবাহানা নয়।

বিজ্ঞাপন

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক উমামা ফাতেমা বলেন, কলকাতায় চিকিৎসক মৌমিতাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় বিচারের দাবিতে আমরা আজকে এখানে দাঁড়িয়েছি। দেশেও আমরা গত ১৫ বছরে দেখেছি, ক্ষমতাসীন ও তাদের মদতপুষ্টরা ধর্ষণ-যৌন নিপীড়নের ঘটনায় জড়িত। কিন্তু তাদে বিচার হতো না। এখন এমন একটি ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যেখানে একজন মানুষ যতই ক্ষমতাধর হোক না কেন, ধর্ষণের মতো অপরাধ করে যেন পার না পেতে পারে। গত ১৫ বছরে যত ধর্ষণ-হত্যা-যৌন নিপীড়নের ঘটনা ঘটেছে, সবগুলোর বিচার করতে হবে।

সমাজকল্যাণ উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ বলেন, আমাকে কিছু প্রস্তাব দিতে পারবে? তাহলে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ব। আমি তোমাদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করতো চাই। বলো, রাষ্ট্রীয় কাঠামো কীভাবে কাজে লাগাব। সেটা জানতেই আমি এখানে এসেছি। নারীদের জন্য সর্বত্র নিরাপদ পরিবেশ আমরা নিশ্চিত করতে চাই। আমি তোমাদের পাশে আছি।

সমাবেশ থেকে পরে তুলে ধরা হয় ১৩ দফা দাবি। সেগুলো হলো—

  • তনু ও মুনিয়াসহ প্রতিটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার করতে হবে;
  • নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা ১৮০ দিনের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে;
  • ধর্ম, গোত্র ও বর্ণের ঊর্ধ্বে গিয়ে প্রতিটি লিঙ্গের মানুষের সম্পত্তিতে সমানাধিকার দিতে হবে;
  • ইউনিফর্ম ফ্যামিলি কোড চালু ও বাস্তবায়ন করতে হবে;
  • সন্তানের অভিভাবকত্ব আইন পরিবর্তন করতে হবে। নারীকে সন্তানের অভিভাবকত্ব দিতে হবে;
  • ২০০৯ সালের হাইকোর্ট নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কর্মস্থলে যৌন নিপীড়নবিরোধী কমিটি ও সেল তৈরি এবং কার্যকর করতে হবে;
  • নারী, আদিবাসী, প্রতিবন্ধী ও ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের প্রতিনিধিত্বের জন্য যৌক্তিক অনুপাতে কোটা বরাদ্দ দিতে হবে;
  • ১৮৬০ সালের গর্ভপাত আইন বাতিল করতে হবে। নারীকে গর্ভপাতের পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে;
  • নারী ও লিঙ্গ বৈচিত্র্যের মানুষের জন্য সমান কর্মসংস্থানের সুযোগ দিতে হবে এবং নিরাপদ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে হবে;
  • প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন লৈঙ্গিক পরিচয়ের মানুষের রাষ্ট্রীয় পরিচয়পত্রে তার লৈঙ্গিক পরিচয়ের স্বীকৃতি দিতে হবে;
  • সব ধরনের লৈঙ্গিক বৈষম্যকারী আইন বাতিল করতে হবে;
  • বিচার বিভাগে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতের জন্য বিচার বিভাগকে স্বাধীন করতে হবে; এবং
  • আন্তর্জাতিক চুক্তি মেনে রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারীর ৩৩ শতাংশ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা/টিআর

Tags: , , , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন