বিজ্ঞাপন

গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণে গণমাধ্যম সংস্কারের তাগিদ, ১৩ দাবি

August 17, 2024 | 8:56 pm

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

ঢাকা: ‘একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের অন্যতম স্তম্ভ স্বাধীন ও নিরপেক্ষ সাংবাদিকতা। রাষ্ট্র সংস্কারের যে উদ্যোগ তরুণ প্রজন্ম নিয়েছে সেখানে সাংবাদিকদেরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে ও সত্য তুলে ধরতে হবে। আর এজন্য রাজনৈতিক মতাদর্শের ভিন্নতা এক পাশে রেখে সাংবাদিকদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে। তা না হলে সাংবাদিকদের উপর জনগণের যে অনাস্থা তৈরি হয়েছে তা রোধ করা যাবে না।’

বিজ্ঞাপন

শনিবার (১৭ আগস্ট) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাগর-রুনি মিলনায়তনে ‘গণমাধ্যম সংস্কার উদ্যোগ’ শিরোনামে এক মুক্ত আলোচনা সভায় এসব কথা উঠে আসে। কর্মক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক পরিবেশ, ভয়ভীতিমুক্ত সাংবাদিকতা নিশ্চিত করা, সাগর-রুনি এবং গণ অভ্যুত্থানে পুলিশের গুলিতে সাংবাদিক হত্যার বিচারসহ ১৩ দফা দাবিতে সর্বস্তরের সংবাদকর্মীদের নিয়ে এ মতবিনিময় সভা আয়োজন করা হয়।

এতে আয়োজনকারীদের পক্ষ থেকে ১৩ দফা তুলে ধরেন আরিফুল সাজ্জাদ। গণমাধ্যম সংস্কারের উদ্যোগ দাবিগুলো হলো—

১. ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় নিহত সাংবাদিকদের হত্যার বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

২. ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে ঘিরে আহত গণমাধ্যমকর্মী ও আক্রান্ত গণমাধ্যমকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৩. গণমাধ্যমের যেসব মালিক ও নির্বাহীরা গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে তৈরি করেছে, তদন্ত সাপেক্ষ তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে।

৪. গণমাধ্যমকর্মীদের জন্য অভিন্ন ওয়েজবোর্ড প্রণয়ন করতে হবে। অনতিবিলম্বে নবম ওয়েজ বোর্ড বাস্তবায়ন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৫. শ্রম আইন অনুযায়ী লভ্যাংশ বণ্টন করতে হবে।

৬. অগণতান্ত্রিক উপায়ে গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠানের দখলদারিত্বের যে প্রবণতা দেখা যাচ্ছে অনতিবিলম্বে বন্ধ করতে হবে।

৭. গণমাধ্যম কর্মীদের সর্বস্তরের ভয়ভীতি বন্ধ করতে হবে।

৮. গণমাধ্যম পরিচালনার ধরণসহ সার্বিক বিষয়ে সংস্কারের জন্য একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিশন গঠন করতে হবে।

বিজ্ঞাপন

৯. গণমাধ্যম ও স্বাধীন মতপ্রকাশবিরোধী নিবর্তনমূলক আইনের সব ধারা বাতিল করতে হবে।

১০. আইসিটি, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও সাইবার সিকিউরিটি আইনের অধীনে গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা সব মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।

১১. সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাসহ সব হত্যাকাণ্ড ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

১২. বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের গুম, নির্যাতন ও হয়রানির সঙ্গে জড়িতদের বিচার করতে হবে।

১৩. সব গণমাধ্যম যেন গণমানুষের মুখপাত্র হিসেবে কাজ করতে পারে সেই নিশ্চয়তার বিধান করতে হবে।

এরপর মুক্ত আলোচনায় বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা তাদের মতামত তুলে ধরেন। এতে বলা হয়, দালাল সাংবাদিকদের থেকে মিডিয়াকে রাহুমুক্ত করতে হবে। যারা যা করেছে, তাদের নিয়ে সংস্কার হবে না। যে যে দালালি করে সাংবাদিকদের বিপদে ফেলেছে, তাদের চিহ্নিত করে শাস্তির মুখোমুখি করে তবে সংস্কার হবে।

দৈনিক নিউ এজের বিশেষ সংবাদদাতা মইনুল হক বলেন, ‘১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের যে যাত্রা শুরু হয়, তখন থেকেই দেখছি ক্ষমতার বারান্দায় শোওয়ার লোভ সাংবাদিকদের মধ্যে গেড়ে বসেছে যেটা সাম্প্রতিক সময়ে প্রকট আকার ধারণ করে। তারই ফলশ্রুতিতে সাংবাদিকসহ ছাত্র-জনতাকে মেরে ফেললেও আমরা কিছু বলতে পারিনি। সাংবাদিকরা নিরপেক্ষ হতে না পারলেও অন্তত নিরপেক্ষতার ভান করে। কিন্তু সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থা এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে কোন কোন সাংবাদিক সরাসরি ক্ষমতাবানদের বা দলের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। আমরা পুঁজির মালিকদের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছি। দল নিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র নির্মাণে সাংবাদিকদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতেই হবে।’

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ খায়রুজ্জামান কামাল বলেন, ‘নানা সময়ে নানা কারণে সাংবাদিকতা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। কেন হয়েছে তা আমরা সবাই জানি। সেই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য এই ১৩ দফা নিয়ে আরও কাজ করতে হবে।’

মাই টিভির রিপোর্টার মাহবুব সৈকত বলেন, ‘রাস্তায় আমাদের ভাইয়েরা মার খায়, জীবন দেয়, তাও শুনতে হয় দালাল মিডিয়া। আমার কী দোষ? কোথায় দোষ, কেন দোষ সেই জায়গায় এসে সুনির্দিষ্ট কাজ করতে হবে। গণমাধ্যম সংস্কারের জন্য আগে রাষ্ট্র সংস্কার হতে হবে।’

ডেইলি স্টারের রিপোর্টার বাহরাম খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধকে যারা খারাপভাবে ব্যবহার করেছে, নিজেদের স্বার্থে কলুষিত করেছে আমরা তাদের ঘৃণা করি। আমরা এই ১৩ দফা নিয়ে কারও কাছে যাবো না। কারণ বিভিন্ন সংগঠনই বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে ভাগ হয়ে আছে। আমরা যেন নিজেরাই সরকারের সঙ্গে নেগোসিয়েশন করতে পারি এর তার কাছে না যেয়ে সেটা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া সাংবাদিক ছাড়া কারও হাতে গণমাধ্যমের মালিকানা যাওয়া যাবে না সেটাও আমাদের নিশ্চিত করতে হবে।’

সারাবাংলা/আরএফ/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন