বিজ্ঞাপন

ট্রেনের টিকেট:  লাইনের দায়িত্ব নেয় না কেউ

June 4, 2018 | 1:58 pm

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদযাত্রায় সোমবার ভোর থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে দেওয়া হচ্ছে ১৩ মে’র টিকেট। সে টিকেট নিতে রোববার মধ্যরাত থেকে স্টেশনের কাউন্টারগুলোর সামনে যাত্রীদের দীর্ঘ লাইন। তবে এ লাইনের দায়িত্বে নেই কেউই। রেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে নিরাপত্তা বাহিনী কারও কাছেই নেই এ লাইনের নিয়ন্ত্রণ।

যাত্রীরা নিজ দায়িত্বে এ লাইন দিচ্ছেন। সামনে থেকে পেছনে এ লাইন দীর্ঘ হচ্ছে। কখনো কখনো ভাঙছে লাইন। হই-হট্টোগোল বাঁধছে। তবে সে হট্টগোল সামলাতে কাজ করছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।

আগাম টিকেট নিতে মধ্যরাত থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছেন নীলফামারীর নাজমুল ইসলাম। তার হাতে বাংলাদেশ রেলওয়ে লেখা একটি স্লিপ। তাতে তার সিরিয়াল ১৬৫। তবে সামনে যাত্রী আরো বেশি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি জানান, হাতের এই স্লিপটি টোকাই মতো একটি লোক এসে দিয়ে গিয়েছে। তবে এ স্লিপের ওপর তার ভরসা নাই। কেননা এখানকার দায়িত্বে নিয়োজিত কোনো আনসার সদস্যই এ স্লিপের ব্যাপারে কিছু জানেন না।

নাজমুলের মত অনেকের হাতেই এমন ছোট স্লিপ রয়েছে। যাতে নাম, গন্তব্য টিকেটের চাহিদা তারিখসহ লেখা আছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, এ ধরনের কোনো স্লিপই দিচ্ছেন না তারা। যাত্রীরা নিজেদের মতো করে লাইনে দাঁড়িয়ে টিকেট পেলে ভালো, না পেলে নাই।

বিজ্ঞাপন

স্টেশনের সামনে নিরাপত্তা সেবা কেন্দ্র রয়েছে রেলওয়ে পুলিশ, আনসার ও র‌্যাবের। তবে তারাও এ লাইনের ব্যাপারে কোনো কিছু জানেন না। কারা লাইনে দাঁড় করাচ্ছেন কিংবা এ স্লিপই বা কোথা থেকে আসছে সে বিষয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরাও প্রশ্ন তুলেছেন।

এ বিষয়ে র‌্যাবের তথ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরত উপ-সহকারী পরিচালক তাসেম আলী সারাবাংলাকে বলেন, অভিযোগ কেন্দ্রে এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ নেই। তবে টিকেটের জন্য এই যে লাইন দেখছেন এটা কারা দিচ্ছে কিংবা এর নিয়ন্ত্রণ কারা করছে তা আমরাও জানি না। সকালে লাইনে দাঁড়ানো নিয়ে কয়েকদফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে যাত্রীদের মধ্যে।

একই বক্তব্য রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীরও। স্টেশনের সামনে তাদেরও রয়েছে সহায়তা কেন্দ্র। সেখানে দায়িত্বরত অ্যাসিস্ট্যান্ড কমান্ড্যান্ট মো. শহীদ উল্লাহ সারাবাংলাকে জানান, লাইনের শুরু কিভাবে কিংবা এর নিয়ন্ত্রণ কে করছে সে বিষয়ে আমরা জানি না। তবে লাইনে দাঁড়ানোর পর কোনো বিশৃঙ্খলা হচ্ছে কি না সেটি আমরা দেখছি। যাত্রীদের হাতে স্লিপগুলো সম্পর্কেও তার কাছে কোনো তথ্য নেই বলে জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী সারাবংলাকে বলেন, ‘যাত্রীরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী কাউন্টারের সামনে লাইনে দাঁড়াচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের কোনো নির্দেশনা নেই।’

এছাড়া যাত্রীদের হাতে স্লিপের ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা নেই জানিয়ে সিতাংশু চক্রবর্তী বলেন, ‘লাইনে দাঁড়াতে কোনো স্লিপের প্রয়োজন নেই।’ স্লিপে লেখা সিরিয়াল অনুযায়ী টিকেট দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলেও জানান তিনি।

ভোররাত থেকে লাইনে দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে ক্লান্ত চট্টগ্রামের রাউজানের ওমর ফারুক। তাই অনেকের সঙ্গে মেঝেতে বসে আছেন তিনি। তার অভিযোগ লাইনে দাঁড়ানোর নামে অসাধু ব্যক্তিরা টিকেট কালোবাজারির চেষ্টা করছে। আমি নিজেই এমন একজনকে ধরেছি। তার মতে, হাতে হাতে স্লিপ দেওয়ার নাম করে একটি গ্রুপ যাত্রীদের আটকে রাখার চেষ্টা করছে। সামনে থেকে ওই গ্রুপের কেউ কেউ টিকেট কাটছে। যদিও সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।

পুরুষদের কাউন্টার গুলোর তুলনায় নারী কাউন্টারগুলোর সামনে ভিড় কিছুটা কম। তারপরও যারা এসেছে টিকেট নিতে দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে তাদের। প্রয়োজনের তুলনায় টিকেটও পাচ্ছেন না।

রংপুরের মার্জিয়া মমতাজ জানান রোগী রয়েছে তাই দুটি এসি কেবিন চেয়েছিলাম। কাউন্টার থেকে বলেছে একটি দেওয়া যাবে। একটিতে হবে না। কি করব বুঝতে পারছি না।

ঈদ উপলক্ষে সোমবার সকাল ৮ টায় টিকেট বিক্রি শুরু হয়েছে কমলাপুরের ২৬ টি টিকেট কাউন্টার থেকে। ৬ মে পর্যন্ত কর্তৃপক্ষের হাতে রয়েছে মোট ২৭ হাজার ৪৬১টি টিকেট। তবে নতুন ট্রেন বা বগি যুক্ত হলে টিকেট আরও বাড়তে পারে বলে জানিয়েছেন স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী।

ত্রিশ পুলিশের এক টয়লেট: ঈদ উপলক্ষে বাড়তি চাপ সামলাতে কমলাপুর রেলওয়ে থানা পুলিশ নিয়েছে বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। এ জন্য উত্তরার ১২-আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন থেকে আনা হয়েছে ৩০ জনের একটি টিম। গত ১ মে থেকে তারা স্টেশন এলাকায় দায়িত্ব পালন করছেন। আগামী ২৬ মে পর্যন্ত তাদের এ স্টেশনে থাকতে হবে।

স্টেশনের তিন তলার খোলা ফ্লোরে থাকার খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে এসব আর্মড পুলিশের। নিজস্ব তত্ত্বাবধানে খাওয়ার ব্যবস্থা হলেও বিড়ম্বনা বাঁধছে টয়লেট আর গোসল করা নিয়ে। কেননা ত্রিশ জনের জন্য বরাদ্দ একটি মাত্র টয়লেট।

সেলিম নামের এক জওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, থাকা-খাওয়ার যেমন তেমন টয়লেট-গোসল নিয়ে খুব সমস্যায় রয়েছে আমরা। ত্রিশ জনের জন্য একটি মাত্র বাথরুম, সেটিও বলতে গেলে ব্যবহার অনুপযোগী।

এ বিষয়ে সেখানকার ইউনিট প্রধান নাসির উদ্দিন জানান, নানা সমস্যা মাথায় নিয়েই আমরা দায়িত্ব পালন করে থাকি। কিন্তু টয়লেটের সমস্যা মেনে নেওয়ার মতো না।

সারাবাংলা/এমএস/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন