বিজ্ঞাপন

মিরপুর-আগারগাঁওয়ে মাথা তুলছে মেট্রোরেল পিলার

June 7, 2018 | 8:57 am

।। আসাদ জামান ও মেসবাহ শিমুল ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও মোড় পর্যন্ত দীর্ঘ পাঁচ কিলোমিটার সড়কের মাঝখানে নিরাপত্তা বেষ্টনী দেখেই বোঝা যায়, কোটি মানুষের এই নগরীতে বড় কিছু একটা হচ্ছে। ঢাকা শহরের ৪শ বছরের ইতিহাসের সর্ববৃহৎ প্রকল্প ‘মেট্রোরেলে’র প্রথম অংশের শেষ সীমানা এটি।
উত্তরার দিয়াবাড়ি থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত প্রথম ধাপে যে ১২ কিলোমিটার পথ নির্ধারণ করা হয়েছে, তার শেষ পাঁচ কিলোমিটারের পাইলিং ও পিলার তৈরির কাজ এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুতগতিতে। দিন রাত ২৪ ঘণ্টা কয়েক হাজার শ্রমিক এখানে কাজ করছেন বিরামহীন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও শেরেবাংলা ‍কৃষি বিশ্বদ্যালয়ের পূর্ব গেট পর্যন্ত কাজ চলছে একযোগে। এরই মধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্ব গেটে মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে একটি পিলার। কংক্রিট রঙের এই পিলারটিতে খুব শিগগিরই বসানো হবে ক্যাবল স্প্যান। পিলারটির উত্তর দিকে আরো কয়েকটি পিলার তৈরির কাজ রয়েছে শেষ পর্যায়ে। নির্মাণাধীন পিলারগুলোর ইস্পাতের গাঁথুনিতে এখন চলছে কংক্রিট ফেলার কাজ। অষ্টম প্রজন্মের অত্যাধুনিক কংক্রিট পাম্প দিয়ে ১০৫ ফুট উঁচু থেকে ফেলা হচ্ছে কাঁচা কংক্রিট।

বিজ্ঞাপন

রাস্তার ঠিক মাঝ বরাবর সমান্তরাল রেখায় টানা পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক পথে মেট্রো রেলপথ তৈরির যে মহাযজ্ঞ চলছে, তা রীতিমতো বিস্ময় জাগানিয়া। পিচঢালা রাস্তার বুক চিড়ে মাটির গভীরে পাইলিং দৃশ্য দেখার জন্য অসংখ্য কৌতূহলী মানুষও সব সময় ভিড় জমাচ্ছেন নিরাপত্তা বেষ্টনীর আশপাশে। তবে সেই বেষ্টনী ভেদ করে ভেতরে যাওয়ার সুযোগ মিলছে না কারো।

তবে দীর্ঘ পথ নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় চলে যাওয়া মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি পয়েন্টে লোকজন চলাচলের সীমিত পরিসরে উন্মুক্ত রেখেছে। এ রকম একটি উন্মুক্ত পয়েন্ট আগারগাঁওয়ের তালতলা। সেখানে দাঁড়ালে চোখে পড়ে উত্তর-দক্ষিণের বিশাল কর্মযজ্ঞ।

বিজ্ঞাপন

নির্মাণ শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, নকশা অনুযায়ী মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটারের মধ্যে স্প্যান বসবে ১৯২টি। আর এই ১৯২টি স্প্যানের জন্য পিলার তৈরি করতে হবে ১৯৩টি।

সরেজমিনে দেখা গেছে, এই ১৯৩টি পিলারের প্রায় বেশিরভাগের পাইলিংই শেষ হয়েছে। ৩০/৪০টি পিলার দাঁড়িয়েছে মাথা উঁচু করে। সেগুলোতে এখন চলছে কংক্রিট ফেলার কাজ। আগারগাঁও সরকারি কর্ম কমিশনের (পিএসসি) সামনে মেট্রোরেল ইয়ার্ডে মেশানো হচ্ছে কংক্রিট। সেগুলো গাড়িতে করে নিয়ে কংক্রিট পাম্পের মাধ্যমে পিলারের মাথায় ঢালা হচ্ছে।

মেট্রোরেলের প্রথম ১২ কিলোমিটারের কাজ ৩৮ মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে। এই ১২ কিলোমিটার অংশকে আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে— দিয়াবাড়ি থেকে আশকোনা, আশকোনা থেকে খিলক্ষেত, খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-১১ এবং মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও।

শনিবার (৩ জুন) এই ১২ কিলোমিটার অংশ সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দিয়াবাড়ি থেকে আশকোনা পর্যন্ত অংশের কাজ শুরুই হয়নি। তবে আশকোনা থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত প্রায় ৯০ ভাগ কাজ শেষ। এদিকে, খিলক্ষেত থেকে মিরপুর-১১ পর্যন্ত অংশের কাজও শুরু হয়নি। আর মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশের কাজ প্রায় ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

কথা হয় নির্মাণ শ্রমিক জহিরুল ইসলাম সঙ্গে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘কাজ তো ভাগ ভাগ করে করা হচ্ছে। মিরপুর-১১ থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৫.১ কিলোমিটারের কাজ শেষ করার পর মিরপুর-১১ থেকে খিলক্ষেত পর্যন্ত অংশের কাজ শুরু হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে নির্ধারিত সময়েই কাজ শেষ হয়ে যাবে। এরপর ধরা হবে আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত অংশের কাজ।’

এদিকে, ব্যস্ত সড়কের একেবারে মাঝখানের পুরো জায়গাজুড়ে নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরি করায় মিরপুর আগারগাঁওয়ের যানজট এখন অসহনীয় মাত্রায় পৌঁছেছে। ১৫ মিনিটের পথ যেতে সময় লাগছে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। তারপরও ভালো কিছুর আশায় সব মেনে নিচ্ছেন এ রুটের যাতায়াতকারী নিয়মিত মানুষেরা।

কথা হয় ব্যাংক কর্মকর্তা নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি সারাবাংলা’কে বলেন, ‘ঢাকার যানজট তো নতুন কিছু নয়। তবে এই যানজট তো ভালো কিছু পাওয়ার জন্য। তাই এ নিয়ে আর বিরক্তি বা ক্ষোভ প্রকাশ করার কী আছে?’

জানা গেছে, আধুনিক এ রেলপথে নিয়মিত ১৪ জোড়া ট্রেন চলাচল করবে। প্রতিটি ট্রেনের যাত্রী পরিবহনের ক্ষমতা হবে এক হাজার ৬৯৬ জন। এর মধ্যে ৯৪২ জন বসে এবং ৭৫৪ জন দাঁড়িয়ে যেতে পারবেন। ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার গতির মেট্রোরেল উত্তরা থেকে মতিঝিল পৌঁছাবে ৩৭ মিনিটে। প্রতি চার মিনিট পরপর ট্রেন ছেড়ে যাবে। ফলে উভয় দিক থেকে ঘণ্টায় ৬০ হাজার যাত্রী চলাচল করতে পারবেন। এতে সময় ও অর্থ— দু’টোরই সাশ্রয় হবে নগরবাসীর।

এমন একটি সুখকর সম্ভবনা সামনে রেখেই এগোচ্ছে বহুল প্রতীক্ষিত মেট্রো রেলপথ নির্মাণের কাজ। আর মেগাসিটি ঢাকার দেড় কোটি মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছেন— নির্মাণ কাজ শেষে কবে শুরু হবে মেট্রোরেলের যাত্রা!

সারাবাংলা/এজেড/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন