June 10, 2018 | 3:11 pm
।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।
মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন সালমা খাতুন, দুই হাত ধরে চোখ ঢাকার চেষ্টা করলেন। দুই চোখে তাঁর আনন্দাশ্রু, সেটা আর বাঁধ মানতে চাইছে না। কুয়ালালামপুরে ২১ বছর আগে এসেছিল বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত, ১৯৯৭ সালে এখানে কিলাত মাঠেই বাংলাদেশ জিতেছিল আইসিসি ট্রফি। সেই কুয়ালালামপুরেই আরও একবার ইতিহাস হলো বাংলাদেশের। ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপ জিতল বাংলাদেশ। শুধু মেয়েদের নয়, ছেলেদের ক্রিকেট মিলেও এটা বাংলাদেশের প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা।
অথচ সেই জয়ও এসেছে কতটা নাটকের পর। শেষ ওভারে যখন বাংলাদেশের জয়ের জন্য দরকার ৯ রান, প্রথম বলে সানজিদা স্ট্রাইক দিলেন রুমানাকে। পরের বলে রুমানা কাভারের ওপর দিয়ে মারলেন দারুণ একটা চার। চার বলে দরকার চার রান, পরের বলে আবার রান নিলেন রুমানা। কিন্তু এরপর আবারও ছন্দপতন, ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে হারমানপ্রিত কাউরকে আছড়ে মারতে গেলেন সীমানার ওপারে। কিন্তু ক্যাচ হয়ে গেল তা, দুই বলে দরকার ৩ রান। রুমানা এক রান নিলেন, কিন্তু দুই রান নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে গেলেন। শেষ বলে স্ট্রাইকে জাহানারা, দরকার ২ রান। মিড অনে ঠেলে দৌড় দিলেন সালমা-জাহানারা, পড়িমড়ি করে নিয়ে নিলেন দুই রান। বাংলাদেশ পেল সে স্বপ্নের জয়, যে জয়ের অপেক্ষায় এতোদিন তৃষিত ছিল পুরো দেশ।
অথচ তার আগে ম্যাচের পেন্ডুলাম কতবার দুলেছে এদিক ওদিক। ১১৩ রানের লক্ষ্য খুব বড় কিছু নয়, ভারতের সঙ্গে আগের দেখায়ই তো ১৪২ রান তাড়া করে জিতেছিল বাংলাদেশ। তবে মেয়েদের ক্রিকেটে ১১২ রান অনেক বড়ই, তার ওপর ফাইনালের জন্য তো বটেই। শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের, ৩৫ রান তুলে ফেলেছিল কোনো উইকেট না হারিয়েই। তবে পুনম যাদব এসেই হানলেন জোড়া আঘাত, একই ওভারে ফিরিয়ে দিলেন আয়েশা-শামীমাকে। ৫৫ রানে যখন সেই পুনম ফারজানাকেও ফিরিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের কাজটা একটু কঠিন হচ্ছিল।
তবে নিগার সুলতানা ও রুমানা আহমেদ মিলে হাল ধরলেন, দুজনের জুটিটা জমেও উঠছিল। ছয় ওভারে জয়ের জন্য দরকার যখন ৪৭ রান, হাতে আরও ৭ উইকেট। এমনিতে টি-টোয়েন্টির জন্য এটা এমন কিছুই নয়। তবে মেয়েদের ক্রিকেটে বড় কিছুই।
তবে হঠাৎ করেই আশার প্রদীপ আরও জ্বালিয়ে তুললেন নিগার সুলতানা। ১৫তম ওভারে ঝুলন গোস্বামীর এক ওভারে পর পর তিনটি চার মারলেন নিগার, রান হঠাৎ করেই চলে এলো হাতের নাগালে। ৫ ওভারে দরকার ৩১ রান, বাংলাদেশ আবার ড্রাইভিং সিটে।
এরপর সেই পুনম যাদবের বলেই আবার সর্বনাশ। ওভারের দ্বিতীয় বলটা একটু ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন, সামনে এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন নিগার। ২৪ বলে ২৭ রান করে ফিরে গেলেন পুনমের বলে, প্রথম চারটি উইকেট নিয়ে এই স্পিনারই ছিলেন মূল ঘাতক।
তবে নাটকের তখনও বাকি ছিল অনেক কিছু। তিন ওভারে যখন ২৩ রান দরকার, বাংলাদেশের আশা তখন কিছুটা মিইয়ে যাচ্ছে। হারমানপ্রিত কাউরের প্রথম বলেই চার ফাহিমার, পরের বলে নিলেন ২। কিন্তু এরপর আঘাত হানল ভারত, এবার কাউরের বল ক্রিজ ছেড়ে বেরিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হয়ে গেলেন। তারপর তো শেষে এসে জাহানারার সেই দুই রান।
তার আগে ভারতকে বলতে গেলে একাই টেনে তুলেছিলেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত। বাংলাদেশের মেয়েরা শুরু থেকেই চেপে ধরেছিল ভারতকে, ৩২ রানের মধ্যে তুলে নিয়েছিল ৪ উইকেট। এরপর এক দিক থেকে উইকেট পড়তে থাকে নিয়মিত ভাবেই, ৭৪ রানের মধ্যে চলে যায় আরও ৭ উইকেট। শেষ পর্যন্ত সেই রান ১১২ পর্যন্ত গেছে হারমানপ্রিতের কল্যাণে। ৪২ বলে ৫৬ রানে ছিলেন অপরাজিত, শেষ দিকে একাই টেনেছেন। শেষ পর্যন্ত তা আর যথেষ্ট হয় না, ছয় বারের চ্যাম্পিয়নরা প্রথম বারের মতো হেরে গেছে এশিয়া কাপ ফাইনালে।
সারাবাংলা/এএম/ এসএন