‘৩ হাজার শ্রমিককে ‘বিপুল সংখ্যক’ বলা যাবে না’

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

ঢাকা: প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বলেছেন, সৌদি আরব থেকে নারী শ্রমিকদের ফিরে আসার পরিমাণ বিপুল সংখ্যক নয়, আপনারা (সাংবাদিকরা) তাকে বিপুল করছেন। এক লাখ থেকে যদি ৩ হাজার চলে আসে তাকে বিপুল সংখ্যক বলা যাবে না। সুতরাং যারা আসছে তারা কেন আসছে, সেটা আগে খতিয়ে দেখেন, খতিয়ে দেখার পর আমরা এটার উত্তর দেব।

মঙ্গলবার (১২ জুন) প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কল্যাণ মন্ত্রণালয়ে নিরাপদ অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্যচিত্র উদ্বোধন ও বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তি সই অনুষ্ঠানে তিনি এ মন্তব্য করেন।

তিনি আরও বলেন, অভিবাসন খাতে অসাধু দালালদের চিহ্নিত করে তাদের নিগৃহীত করুন। অভিবাসী কর্মীদেরকে প্রতারিত বা হয়রানি করলে, সে যেই হোক তাকে শাস্তি পেতে হবে। আমাদের কর্মীরা ভাগ্য পরিবর্তনের স্বপ্ন নিয়ে বিদেশে পাড়ি জমান। কিন্তু অদক্ষতা, ভাষা জ্ঞান না থাকা, চুক্তিপত্র না বোঝা, দালালের খপ্পরসহ নানা কারণে এই সকল নিরীহ ও দরিদ্র মানুষের একটা অংশ প্রতারণার শিকার হন। সাধারণ মানুষকে অনিয়ম করে পাঠিয়ে দিয়ে বিপদে ফেলার অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

দালালদের নিবৃত করা না গেলে প্রবাসে নির্যাতনের ঘটনা আরও বৃদ্ধি পাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, দালালদের খপ্পরে পড়ে বিভিন্ন উপায়ে অনেকেই যায়। এর মধ্যে গতকাল সোমবার ও পরশু অনেকেই ফেরত এসেছেন। তারা কিন্তু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে যায়নি। তারা গিয়েছে দালালের মাধ্যমে, দালাল কমিশন পেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। ফলে সেখানে গিয়ে তারা চাকরি সে পায়নি। যার ফলে তাকে সেফহোমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে তাদের ‘রিপ্যাট্রিয়েট’ করে দেশে ফিরিয়ে আনতে হয়েছে।

দালালদের পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, দালাল পরিহার করতে হবে। এদেরকে চিহ্নিত করতে হবে। তাদের চিহ্নিত করা না গেলে নির্যাতনের ঘটনা আরও বাড়বে। আমাদের নারীদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়বে যার সীমা সহ্যের সীমাকেও অতিক্রম করতে পারে। যারা দালালি করেন তারা আমাদের এসব মানুষকে কেন কষ্ট দেন? এরা তো আপনাদেরই পরিচিত লোক। যারা বিদেশে লোক পাঠানোর কাজ করছেন, তারা ঠিকঠাক ভাবে করেন। যেখানে চাকরি আছে ওখানে পাঠান, যেখানে অত্যাচার নির্যাতন নেই সেখানে পাঠান। যেখানে চাকরি নেই সেখানে পাঠিয়ে শুধু শুধু মানুষের কষ্ট বাড়াবেন না। আমরা আগামীতে এরকম কোনো তথ্য পেলে, অভিযোগ পেলে মন্ত্রণালয় থেকে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব। প্রয়োজনে পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান সচিব ড. নমিতা হালদার এনডিসি’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) মো. আমিনুল ইসলাম। বক্তব্য দেন ওয়েজ আনার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক গাজী মোহাম্মদ জুলহাস এনডিসি, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর মহাপরিচালক মো. সেলিম রেজা, বোয়েসেলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মরণ কুমার চক্রবর্তী এবং তথ্যচিত্র নির্মাতা ও শ্রম অভিবাসন বিশেষজ্ঞ হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

বাংলাদেশ ওভারসিজ এমপ্লয়মেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস লিমিটেড (বোয়েসেল), ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ড এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) সঙ্গে বার্ষিক কর্মসম্পাদনা চুক্তিতে সই করেন প্রবাসী কল্যাণ সচিব নমিতা হালদার ও অন্যান্য সংস্থার প্রধানরা। এছাড়া অভিবাসী হতে ইচ্ছুকরা যাতে প্রতারণার শিকার না হন, সেই লক্ষ্যে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে নির্মিত হয়েছে নিরাপদ অভিবাসন বিষয়ক সচেতনতামূলক তথ্যচিত্র। তথ্যচিত্রটি বিশ্বকাপ খেলার সময় বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যাবে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস