বিজ্ঞাপন

ট্রেনে শিডিউল বিপর্যয়, দুর্ভোগে ঘরমুখো যাত্রীরা

June 15, 2018 | 4:34 pm

।। এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সকাল থেকে কমলাপুর রেল স্টেশন থেকে কোনো ট্রেনই সময়মতো ছেড়ে যেতে পারেনি বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

শুক্রবার (১৫ জুন) সকালে কমলাপুর স্টেশন ঘুরে যাত্রীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় সব ট্রেনই ছেড়েছে নির্দিষ্ট সময়ের অনেক পরে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। নারী ও শিশুদের ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি।

ছেড়ে যাওয়ার নির্দিষ্ট সময়ের সাড়ে চার ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও খোঁজ নেই চিলেহাটিগামী নীলসাগর এক্সপ্রেসের। একই অবস্থা লালমনিরহাট ঈদ স্পেশালেরও। আর নির্দিষ্ট সময়ের সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে গেছে রংপুর এক্সপ্রেস। সব মিলিয়ে শিডিউল বিপর্যয়ে ট্রেনের যাত্রীরা।

বিজ্ঞাপন

লালমনিরহাট ঈদ স্পেশাল ট্রেনে রংপুর যাবেন জহুরুল ইসলাম। নারায়ণগঞ্জ থেকে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন সকাল সাড়ে ৮টায়। সারাবাংলাকে তিনি সকাল ১০টায় বলেন, ‘৯ টা ১৫ মিনিটে ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা। এখনও ট্রেন আসেনি।’

নীলসাগর ট্রেনের যাত্রী আলম হোসেন সারাবাংলাকে বলেন, ‘কমলাপুর থেকে ট্রেন ৮টায় ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। এত সময় ধরে বসে থাকতে কষ্ট হচ্ছে।’

একই ট্রেনের আরেক যাত্রী ইসলামবাগ মাদ্রাসার ছাত্র সালমান সারাবাংলাকে বলেন, ট্রেন যেমন বাড়িয়েছে ট্রেনের শিডিউলও তেমন ঠিক রাখা উচিৎ ছিল। ১০ থেকে ২০ মিনিট, আধা ঘণ্টা বা এক ঘণ্টাও দেড়ি হতে পারে। কিন্তু চার ঘণ্টা। এটা তো রীতিমত শিডিউল বিপর্যয়।

বিজ্ঞাপন

ঈদের ছুটি কাটাতে গার্মেন্টস কর্মী মো. আরিফ রংপুর এক্সপ্রেসে গাইবান্ধা যাবেন। ট্রেন ধরতে কমলাপুর স্টেশনে এসেছেন সকাল আটটায়। সকাল নয়টায় ট্রেন ছেড়ে যাওয়ার কথা থাকলেও সাড়ে এগারটা পর্যন্ত ট্রেনের কোন খোঁজ নেই।

সারাবাংলাকে আরিফ বলেন, ‘ট্রেন ছাড়ার কথা ৯টায়। তিন ঘণ্টা পার হয়েছে ট্রেন আসার কোনো লক্ষণ নেই।’

হাবিবুর রহমান হাবিব মহানগর প্রভাতী ট্রেন ধরতে এয়ারপোর্ট রেলওয়ে স্টেশনে গিয়েছিলেন ভোর ৫টায়। টিকেট কাটতে দেরি হওয়া ও ভিড়ের কারণে ট্রেনে উঠতে পারেননি কুমিল্লার এ যাত্রী।

বিজ্ঞাপন

বেসরকারি কর্মচারী হাবিব সারাবাংলাকে বলেন, বিমানবন্দর স্টেশনে প্রচণ্ড ভিড় থাকায় কমলাপুর চলে এসেছি। চট্টলা এক্সপ্রেসের জন্য অপেক্ষা করছি। এখনো ট্রেনের খোঁজ নেই।

পরিবার নিয়ে জামালপুরে ঈদ করতে যাবেন রিকশাচালক হাসিব। বিকেল সাড়ে ৩টার কমিউটার ট্রেন ধরবেন তিনি। এসেছেন সকালেই।
সারাবাংলাকে বলেন, ‘বাস ধরতে মহাখালী গিয়েছিলাম। কিন্তু বাসের ভাড়া অনেক। তাই মহাখালী থেকে এখানে চলে এসেছি। বাসায় ফিরে যেতে চেয়েছিলাম। মেয়ে বলল, যত কষ্টই হোক গ্রামে ঈদ করব। তাই কমলাপুরে এসেছি।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দিনের প্রথম ট্রেন ধূমকেতু সকাল ৬টায় ছাড়ার কথা থাকলেও সকাল সাড়ে ৮টার মধ্যেও ছেড়ে যায়নি। খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৬টা ২০ মিনিটে স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও সেটি ছেড়ে যায় সকাল ৭টা ৪০মিনিটে। তিস্তা এক্সপ্রেস সকাল সাড়ে ৭টায় স্টেশন ছাড়ার কথা থাকলেও ছেড়ে যায় ৮টা ১০ মিনিটে। মহানগর প্রভাতী ৭টা ৪৫ মিনিট ছাড়ার কথা থাকলেও ছাড়ে সকাল ৮টা ২৮ মিনিটে।

রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি প্ল্যাটফর্ম ত্যাগ করলেও যাত্রীসহ নেওয়া হয়েছে ওয়াসে। প্রচণ্ড গরমে ট্রেনে থাকা যাত্রীরা এতে পড়েছেন ভোগান্তিতে। সংবাদকর্মী কাবেরী মৈত্রেয় পরিবার নিয়ে ট্রেনটিতে করে রংপুর যাচ্ছেন।

সারাবাংলাকে তিনি বলেন, ‘গরমে খুবই বাজে অবস্থা। সবাই অসুস্থ হয়ে পড়ছে। আমার মেয়ে অসুস্থ হয়ে গেছে।

দুপুর আড়াইটায় কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু চক্রবর্তী সারাবাংলাকে বলেন, দুই একটি ট্রেন দুই এক ঘণ্টা দেরিতে গেছে। ৫৯টি ট্রেনের মধ্যে দু চারটি বিলম্বে গেলে এটিকে শিডিউল বিপর্যয় বলা চলে না। সবচেয়ে বড় কথা গলো নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছা।

তিনি বলেন, ‘বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৩১টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। এর মধ্যে ৫টা ট্রেনের শিডিউল দেরি হয়েছে।’

তিনি জানান, উত্তরাঞ্চলের ট্রেনগুলো দেরিতে গেছে। কারণ ওই ট্রেনগুলো দেরিতে এসেছে। প্রত্যেক স্টেশনে দুই মিনিট দাড়ানোর কথা থাকলেও অতিরিক্ত লোকজনের কারণে কখনো কখনো ১০ মিনিটও দাঁড়াতে হয়েছে।’

এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি স্টেশনে ছিলাম না। আমার কাজ ছিল।

স্টেশন মাস্টার শাখাওয়াত হোসেনের কক্ষ দুপুর ১২টা থেকে তালাবদ্ধ ছিল। সারাবাংলার প্রতিবেদক কথা বলার জন্য গেলে স্টেশন মাস্টারকে পাওয়া যায়নি।

এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার সিতাংশু বলেন, ‘তিনি ২টা পর্যন্ত অফিসে ছিলেন।’

সারাবাংলা/ ইএইচটি/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন