June 17, 2018 | 6:01 pm
॥ এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ॥
ঢাকা: ‘রিকশা নিয়ে সকালে বের হয়েছিলাম। কিন্তু যাত্রী নেই। তাই ভাবলাম বাড়ি চলে যাই।’ ঈদের দ্বিতীয় দিন রোববার (১৭ মে) দুপুরে মহাখালী বাস স্ট্যান্ডের উল্টো পাশে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন রিকশাচালক মো. শাহাদাত।
বাসের অপেক্ষায় থাকা এই যাত্রী সারাবাংলাকে বলেন, ‘৮০ থেকে ১০০ টাকায় টাঙ্গাইল যাই, কিন্তু আজ ২০০ টাকা চাইছে। আর বাসও কম।’ সেখানে ফুটপাতে দাঁড়িয়ে থাকা একাধিক যাত্রীও একই অভিযোগ করেন।
এদিকে, মহাখালী বাসস্ট্যান্ডের এনা কাউন্টারে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। এই পরিবহনটিও অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া নিচ্ছে। গাবতলী বাসস্ট্যান্ড ঘুরেও দেখা গেছে একই চিত্র। বেশি ভাড়ার মাশুল ছাড়াও ‘চালক ও সহকারীরা’ ছুটিতে থাকায় যাত্রীরা পড়েছেন ‘বাস সংকটে’।
এছাড়া কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনও লোকে লোকারণ্য। স্টেশনটিতে দেখা গেছে, বরং ঈদের আগের দিনের বিকেলের চেয়েও ভিড় বেশি।
কথা বলে জানা গেছে, এ সময়টিতে যারা বাড়ি ফিরছেন তাদের অধিকাংশই নিম্ন আয়ের কর্মজীবী।
পরিবারের সঙ্গে ঢাকায় ঈদ করেছেন এমন অনেকেও ফিরছেন শেকড়ের টানে। দাদা-দাদীর সঙ্গে ঈদের খুশি ভাগাভাগি করতে ছেলে- মেয়েকে নিয়ে বাবা ফিরছেন গ্রামে। সঙ্গে রয়েছেন মায়েরাও। কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও বের হয়েছেন ভ্রমণে। তারাও ভিড় করছেন রেলওয়ে স্টেশন কিংবা বাসস্ট্যাডে। সবমিলিয়ে, ঢাকা ছাড়ার চাপ এখনও অনেক বেশি। তবে ঢাকার পথে যাত্রীর সংখ্যা নেহায়েতই কম।
ঈদের দ্বিতীয় দিনে গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী যাচ্ছিলেন বেসরকারি কর্মকর্তা ফারুক ইকবাল। মিরপুর থেকে গাবতলী যাওয়ার পথে বাসে বসে কথা হলে শেওড়াপাড়ার এই বাসিন্দা সারাবাংলাকে বলেন, ‘৯ দিনের ছুটি পেয়েছি। কিন্তু ভিড় থাকায় ঈদের আগে বাড়ি যাইনি। তাই বাবা-মায়ের সঙ্গে ঈদ কাটাতে আজ গ্রামের বাড়ি যাচ্ছি।’
গার্মেন্টস কর্মী নাসরিন গাইবান্ধা যাচ্ছেন ঈদ করতে। তিনি গাবতলীর শ্যামলী পরিবহন থেকে টিকেট কাটার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু দুপুর পর্যন্ত হাতে টিকেট পাননি।
সারাবাংলার কাছে তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘সাধারণত শ্যামলী পরিবহনের বাসে গাইবান্ধার ভাড়া ৪০০ টাকা। কিন্তু আজ চাওয়া হচ্ছে ৮০০ টাকা।’
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় রিকশা চালান রংপুরের আজিজুল। গ্রামের বাড়ি যেতে তিনিও অপেক্ষা করছিলেন গাবতলীতে।
সারাবাংলাকে আজিজুল বলেন, ‘সকাল থেকে বসে আছি। বাস পাইনি। রাতের বাসে যাব।’ তিনিও জানালেন, বাসের ভাড়া এখন বেশি চাওয়া হচ্ছে।’
ঢাকা কমার্স কলেজের চার শিক্ষার্থী ঈদের ছুটিতে গাবতলী থেকে পাংশা যাচ্ছিলেন। বাসের আপেক্ষায় থাকার সময়ে তারা মেতে উঠে সেলফি উৎসবে। তাদের উচ্ছ্বাসও ছিল চোখে পড়ার মতো।
জানতে চাইলে শ্যামলী পরিবহনের জেনারেল ম্যানেজার আলমগীর কবির সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের আগে যেমন চাপ ছিল এখনও তেমনই আছে। কিন্তু গাড়ির সংখ্যা কম। হেলপার ও ড্রাইভাররা আসতে চাচ্ছে না।’
কোন শ্রেণীর যাত্রীদের চাপ বেশি জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পরিবার পরিজন নিয়ে যারা আগে বাড়ি যেতে পারেননি বা আগে টিকেট পাননি, এখন তারা যাচ্ছেন। সব শ্রেণী পেশার মানুষই কাউন্টারে ভিড় করছেন।’
গাবতলীর হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টার ম্যানেজার জাকির মল্লিক সারাবাংলাকে বলেন, ‘সাধারণত ঈদের তিন দিন পর্যন্ত যাত্রীদের চাপ থাকে। আজ সকাল থেকে ভালো ভিড় ছিল।’
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বাস সংকট নেই। যাত্রী আসলে গাড়ি পাওয়া যাচ্ছে। আর বেশি ভাড়া রাখা হচ্ছে না।’
মহাখালী বাস স্ট্যান্ডের উল্টোপাশের ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা। যাদের অধিকাংশই টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রংপুর ও কিশোরগঞ্জের যাত্রী। দামদর হাঁকিয়ে তাদের অনেকেই উঠছিলেন লোকাল বাসে। এমনই একজন তেজগাঁও এলাকার রিকশা চালক শাহাদাত।
ঘাটাইলের এই বাসিন্দা সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের দিন সকালে সেমাই খেয়েছিলাম হোটেলে। সেখানেই দুপুরে ভাত আর মাংস খেয়েছি। আজ সকালে রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলাম। তবে যাত্রী পাইনি। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। আর ঈদের আগের পাঁচ দিনও যাত্রী কম ছিল।’
তিনি বলেন, ‘ঈদের কেনাকাটা করিনি। বাড়িতে কিছু টাকা দিছি। গরিব মানুষ কি আর কেনাকাটা করুম।’
তিনি আরও বলেন, ‘৯৬ সাল থেকে রিকশা চালাই। তবে সব সময় না। যখন বেশি ঠেকা পড়ে তখন চলে আসি।’
ঘাটাইলে ফিরছিলেন করটিয়া কলেজের অনার্সের এক শিক্ষার্থী। ফেরার আগে ঢাকায় ২২ দিন কাজ করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘বাবা কৃষি কাজ করেন। জমিজমাও খুব বেশি নেই। এর আগে কাঁচামালের ব্যবসা করেছি। এবার ২২ দিন রিকশা ও সিএনজি চালিয়েছি’
মহাখালীর এনা কাউন্টারে দেখা গেছে দীর্ঘ লাইন। সেখানে ছিল মধ্য আয়ের মানুষ। যাত্রীরা জানালেন, অন্যান্য সময়ের চেয়ে বেশি ভাড়া নেওয়া হচ্ছে।
জানতে চাইলে এনা পরিবহনের কর্মকর্তা আব্দুস সাদেক সারাবাংলাকে বলেন, ‘ঈদের পরদিন সব সময় ভিড় থাকে। আজও যাত্রীদের চাপ রয়েছে।’
বেশি ভাড়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘সাধারণত ২২০ টাকা ভাড়া হলেও মালিক সমিতি বলে দিয়েছে ২৫০ টাকা করে নিতে। আমরাও তাই নিচ্ছি।’
রোববার দুপুরে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি কাউন্টারেই দীর্ঘ লাইন। যাত্রী হিসেবে রয়েছে সব শ্রেণী পেশার মানুষই। উপকূল লাকসাম ট্রেনের যাত্রী রেজওয়ান সারাবাংলাকে বলেন, ‘ভেবেছিলাম ঈদের পরদিন ভিড় কম হবে। কিন্তু এখন দেখছি অনেক ভিড়।’
সারাবাংলা/ইএইচটি/একে