বিজ্ঞাপন

জনারণ্য শিশু পার্ক, ভিড় রমনাতেও

June 18, 2018 | 1:13 pm

।। মাকসুদা আজীজ, অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদের মতো জাতীয় উৎসবে বিনোদন কেন্দ্রগুলো উপচে পড়ে মানুষের ভিড়ে। ঈদের দ্বিতীয় দিনেও তার ব্যতিক্রম ছিল না। ঈদের ছুটিতে ঢাকা ফাঁকা করে সবাই গ্রামে গিয়েছে এমন ধারণাকে বাতিল করে বিনোদন কেন্দ্রগুলোর আশপাশের রাস্তাগুলোতেও ছিল তীব্র যানজট।

রোববার (১৭ জুন) সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্রে জমায়েত হতে থাকে শহরে থেকে যাওয়া মানুষেরা। দুপুরের পর সে ভিড় বেড়ে যায় কয়েকগুণ। ঢাকাতে ঈদ কাটানো প্রতিটি মানুষই যেন বেড়াতে বের হয়েছেন ঘর ছেড়ে।

বিকালে শাহবাগের শিশু পার্কে যাওয়ার পথে মৎস্যভবন থেকে শাহবাগ মোড় পর্যন্ত ছিল বিভিন্ন ধরণের যানবাহনের মিছিল, তবে তারা সবাই থেমে ছিল। ট্রাফিক সিগনাল ছাড়াও শিশুপার্কের সামনে দিয়ে ইচ্ছে মতো পারাপার হচ্ছিলেন এখানে আসা দর্শনার্থীরা। এতে আরও ধীর হয়ে যাচ্ছে যানবাহনের চলাচল।

বিজ্ঞাপন

শিশুপার্কের বাইরেও ভীষণ ভিড়। টিকেটের লাইন সাপের মতো এঁকেবেঁকে ভরে রেখেছিলো সামনের জায়গাটা। ঢোকার পথেও চাপে চিড়ে চ্যাপ্টা হওয়ার জোগাড়।

শিশুপার্কে ঢুকতে না পেরে অনেকেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা রমনা পার্কে ঢুকে যাচ্ছেন। জাকির হোসেন এসেছেন আজিমপুর থেকে। তিনি এবং তার স্ত্রী তাদের দুই সন্তানকে খুব করে বোঝাচ্ছেন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান শিশুপার্ক না হলেও জায়গাটা নেহায়েত মন্দ নয়। আট বছরের মার্শিয়াত ও ছয় বছরের আয়াত দ্বিধাগ্রস্ত। বাবা মায়ের কথা বিশ্বাস করবে নাকি শিশুপার্কে ঢোকার দাবি করেই যাবে।

শিশু পার্কে কোনোক্রমে ঢুকতে পারলেও রাইডে উঠার জন্যেও লম্বা লাইন। একটি রাইড ছাড়িয়ে পরের রাইডগুলোর পাশে পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। দূর থেকে দেখলে বোঝা দায় কোনটা কোন রাইডের লাইন। নাগরদোলার লাইনটি নাগরদোলার ব্রিজ ছাড়িয়ে নিচে নেমে এসেছে। আর প্লেনের ভিড় তো ট্রেনের লাইনের মতো লম্বা হয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

এলিফ্যান্ট রোড থেকে শফিকুল ইসলাম এসেছেন ছেলে স্বচ্ছকে নিয়ে। স্বচ্ছ বাবাকে টানাটানি করেই যাচ্ছে আরেকটা রাইডে চড়ানো জন্য। শফিকুল জানালেন, একটি রাইডে উঠতেই দেড় ঘণ্টা লাইনে থাকা লেগেছে। আরেকটি রাইডে উঠতে গেলে আবার লম্বা লাইনে দাঁড়াতে হবে, এর চেয়ে পার্কে হাঁটাহাঁটি করেই সময় কাটাতে চান তিনি।

যেকোনো রাইডে উঠতে হলে অন্তত একশ জন মানুষকে পার হতে হয়। প্রতিটি রাইডের সময়সীমা ৩ থেকে পাঁচ মিনিট। এত কষ্ট করে মাত্র পাঁচ মিনিট রাইডে কেন এই অসন্তেষে আছে প্রায় প্রতিটি শিশু। অনেকেই রাইড শেষ হওয়ার পরেও সেটা থেকে নামতে চাইছে না। এই নিয়ে দারুণ বিপদে আছেন রাইড পরিচালনাকারীরা।

রাইডের বাইরে সাধারণ দোলনা স্লিপারগুলোতেও লাইন ধরে উঠতে দেখা যায় শিশুদের। অনেকেই আবার শিশুপার্কের উদ্যানে হাত পা ছড়িয়ে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়।

শিশুপার্কের ভেতরেই রয়েছে বেলুনের পসরা। সাধারণ গোল বেলুন বাদ দিয়ে শিশুরা এখন ঝুঁকেছে বিভিন্ন আকৃতি বেলুনের দিকে। আকাশে উড়তে দেখা যাচ্ছে হাতি, সিংহ, পাখি আর প্লেন সদৃশ্য বেলুনগুলোকে।

বিজ্ঞাপন

বেলুন বিক্রেতা ইয়াসিন জানান, বেলুনের বিক্রি খুব ভালো। ঈদ বলে কেউ শিশুকে ‘না’ বলছেন না। কিছুক্ষণের মধ্যেই সঙ্গে থাকা বেলুন ফুড়িয়ে যাচ্ছে আবার নতুন করে আনা লাগছে।

যাদের সঙ্গে অপেক্ষাকৃত বড় শিশুরা এসেছে তারা ভিড় করেছেন রমনার জাতীয় উদ্যানে। মালিবাগ থেকে শারমিন ইসলাম তার দুই সন্তানকে নিয়ে এসেছেন রমনায়। ঘুরে ঘুরে বাচ্চাদের গাছ দেখাচ্ছেন। অনেকেই আবার এসেছেন সাইকেল আর বাচ্চাদের এক পায়ে চালনোর বাহন ‘স্কুটি’ নিয়ে।

শারমিন বলেন, ‘স্বাভাবিক দিনে জ্যাম ঠেলে বাচ্চাদের নিয়ে বের হওয়া বেশ কষ্টকর, ঈদে তাই তাদের নিয়ে এসেছেন নির্মল প্রকৃতির কাছে।’

পার্কের ভিতরে বেঞ্চিত্ব বসলেই মিলছে খাওয়া দাওয়া। আশপাশের কাঠের গাড়িতে অস্থায়ী ফুচকার দোকান বা ডাবের দোকান থেকে বিক্রেতারা এসে খোঁজ নিচ্ছেন কিছু খাবেন কিনা। এরপর ফরমায়েশ মাফিক খাবার পরিবেশন করছেন তারা।

সন্ধ্যা নামলেও ভাটা পরে না নাগরিক ঈদ উদযাপনের। পার্ক, বিনোদন কেন্দ্রমুখী জনস্রোত এসে মিশে খাবারের এলাকাগুলোতে। সেখানেও বেশ ভিড়। টেবিলের পিছনে দাঁড়িয়ে বা দরজা আঁকড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় অনেককে। এভাবেই জনারণ্যে কেটে যায় নাগরিক ঈদের শেষ ছুটির দিনটি।

সারাবাংলা/এমএ/এমও

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন