বিজ্ঞাপন

‘আরামে’ ফিরছেন লঞ্চযাত্রীরা, সদরঘাট টার্মিনালের বাইরে ভোগান্তি

June 19, 2018 | 7:21 pm

।। হাবিবুর রহমান, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ঈদ-ফিরতি যাত্রায় চাপ বাড়তে শুরু করেছে সদরঘাটে। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে ঢাকামুখী মানুষের ভিড় বাড়ছে ঈদের ছুটির পর। যাত্রীরা বলছেন, ঈদের ছুটি শেষ না হলেও ‘ঈদের ভিড়’ এড়াতে অনেকেই একটু আগেভাগেই ফিরছেন। তুলনামূলকভাবে ‘আরামে’ই ফিরতে পারছেন বলেও জানান তারা। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) বলছে, ঈদ-ফিরতি মানুষের চাপ বাড়তে শুরু করেছে।

এদিকে, লঞ্চযাত্রা মোটামুটি নির্বিঘ্ন ও আরামদায়ক হলেও সদরঘাট টার্মিনাল পেরিয়ে রাজধানীতে প্রবেশ করতে গেলেই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। প্রয়োজনের তুলনায় রিকশা-সিএনজির সংখ্যা কম থাকায় হেঁটেই তাদের যেতে হচ্ছে বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত।

সরেজমিনে মঙ্গলবার (১৯ জুন) সদরঘাটে গিয়ে দেখা যায়, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা প্রতিটি লঞ্চ ছিল যাত্রীতে পরিপূর্ণ। সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত একে একে ঘাটে এসে ভিড়েছে প্রায় ৬০টি লঞ্চ। একেকটি লঞ্চ ঘাটে ভিড়তেই পন্টুনে যেন তিল ধরনের ঠাঁই নেই। সাথে সাথে শুরু কুলি আর সিএনজিচালকদের দৌড়ঝাঁপ।

বিজ্ঞাপন

যাত্রীরা বলছেন, তাদের কারো কারো এখনও ঈদে নেওয়া বাড়তি ছুটি শেষ হয়নি। তবে কাল-পরশু লঞ্চগুলোতে আরো ভিড় বাড়বে বলেই তারা একটু আগেভাগেই চলে এসেছেন কর্মস্থল রাজধানী ঢাকায়। কেউ কেউ অফিস করবেন আজ মঙ্গলবার থেকেই।

চাঁদপুর থেকে আসা একটি লঞ্চ নোঙর করার পর কথা হয় কয়েকজন যাত্রীর সাথে। ‘আরামে’ ফিরতে পেরে তারা বেশ খুশি। আসমা নামের এক যাত্রী বলেন, ‘ব্যাংকে চাকরি করি। গতকাল আসতে পারিনি। কিন্তু আজ তো আর অফিস ফাঁকি দিতে পারি না। তাই চাঁদপুর থেকে ভোরের লঞ্চে রওনা দিয়ে চলে এসেছি। তেমন ভিড় ছিল না। চার ঘণ্টার মধ্যেই বেশ আরামেই আসতে পেরেছি।’

সাজ্জাদ নামের আরেক যাত্রী ঢাকা ফিরলেন পরিবার নিয়ে। তিনি বলেন, বউ-বাচ্চা নিয়ে একটু স্বস্তিতে আসার জন্য আগেভাগেই চলে এলাম। এরপর তো ভিড় বাড়বে। তখন ভোগান্তিও বাড়বে।

বিজ্ঞাপন

পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে ঢাকায় ফিরে আসা কাওসার তুহিন সারাবাংলা’কে বলেন, ‘রোববার থেকে পুরোদমে অফিস-আদালত শুরু হয়ে যাবে। এখন ঢাকার রাস্তাও মোটামুটি খালি পাব। তাই আজই (মঙ্গলবার) এসে পড়েছি ঢাকা।’

বরিশাল থেকে আসা হাসান মাহমুদ বলেন, ঈদের আগে সদরঘাট টার্মিনালে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। সে তুলনায় ফেরার সময় ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। অনেকটা আরামেই ঢাকা ফিরতে পেরেছি।

লঞ্চ কর্তৃপক্ষগুলোও বলছে, গতকাল সোমবারের তুলনায় আজ মঙ্গলবার ঢাকার পথে ফেরা যাত্রীদের সংখ্যা বেশি ছিল। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই যাত্রীদের চাপ আরো বাড়বে।

কুয়াকাটা-১ লঞ্চের তৃতীয় শ্রেণির মাস্টার শাহজালাল শেখ বলেন, ‘মানুষ ঢাকায় ফিরতে শুরু করেছে। আজ ভালো যাত্রী পেয়েছি। কাল-পরশু আরো বাড়বে।’

বিজ্ঞাপন

যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকায় সতর্ক অবস্থান নিয়েছে বিআইডব্লিউটিএ ও প্রশাসনও। বিআইডব্লিউটিএ বলছে, রাত নাগাদ যাত্রী নিয়ে ঢাকায় আরো লঞ্চ ফিরবে ঢাকায়। রাতে নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হবে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ও জেলা পুলিশ সদস্যরা নিয়োজিত রয়েছেন এই এলাকায়।

এদিকে, সদরঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীর ভিড় থাকলেও টার্মিনাল পেরিয়ে ঢাকায় ঢোকার মুখে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। তারা বলছেন, প্রয়োজনের তুলনায় সদরঘাট এলাকায় রিকশা ও সিএনজির পরিমাণ অপ্রতুল। ফলে রিকশা ও সিএনজির জন্য বেগ পেতে হচ্ছে তাদের। সুযোগ বুঝে রিকশা-সিএনজিচালকরাও ভাড়া হাঁকছেন বেশি। বাধ্য হয়ে বাড়তি ভাড়াতেই এসব যানবাহনে চড়তে হচ্ছে যাত্রীদের। কেউ কেউ আবার হেঁটেই রওনা হচ্ছেন, বাসের জন্য হেঁটে যাচ্ছেন বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত।

সদরঘাটে ঢাকামুখী যাত্রীদের ভিড় থাকলেও খানিকটা ভিন্ন চিত্র ছিল শিমুলিয়া-ক্যাওড়াকান্দি ঘাটে। যাত্রীবাহী লঞ্চ বা গণপরিবহনবাহী ফেরির কোনো শিডিউল দেখা যায়নি এসব ঘাটে। মঙ্গলবার বিকেলে শিমুলিয়া ঘাটে কয়েকটি ফেরি চলাচল করতে দেখা গেলেও সেগুলোতে মূলত ঘাট পারাপার করেছে কিছু মোটরসাইকেল ও প্রাইভেট কার। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, চলতি সপ্তাহ এমনই চাপমুক্ত থাকবে ঘাট। শুক্র-শনিবার নাগাদ আবার স্বাভাবিক চলাচল শুরু হবে এই দুই ঘাটে।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন