বিজ্ঞাপন

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার নিয়ে সেনাপ্রধান হচ্ছেন আজিজ আহমেদ

June 20, 2018 | 10:01 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ২০০৯ সালে সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিডিআরে রক্তক্ষয়ী বিদ্রোহ সংঘটিত হয়। এতে শৃঙ্খলাহীন হয়ে পড়ে দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে সীমান্তে দায়িত্ব পালন করা এই বাহিনী। জরুরি হয়ে পড়ে বাহিনীর পুনর্গঠন। পরে বাহিনীর নাম বদল করে রাখা হয় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। যে কয়জন কর্মকর্তার অসামান্য অবদানে পুনর্গঠিত হয়ে বিজিবি আবারও সুশৃঙ্খল সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়েছে, তাদের একজন লেফট্যানেন্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ। বিজিবি’র মাঠ পর্যায়ের সদস্যদের মধ্যে তুমুল জনপ্রিয়তাও পেয়েছিলেন এই সেনা কর্মকর্তা।

বিজিবি ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ ইউনিটে নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ড অভিজ্ঞতায় অনন্য  আজিজ আহমেদ এবার যাচ্ছেন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং বড় দায়িত্বে। বলতে গেলে, আরো বড় চ্যালেঞ্জে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নতুন প্রধান হতে যাচ্ছেন বর্তমান কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজ আহমেদ।

গত ১৮ জুন রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে যুগ্ম সচিব মো. আবু বকর সিদ্দিকর সই করা এক প্রজ্ঞাপনে আজিজ আহমেদকে সেনাপ্রধান হিসেবে নিয়োগের তথ্য এসেছে। আগামী ২৫ জুন তিনি সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্ব নেবেন। ওই দিনই বর্তমান সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহাম্মদ শফিউল হক অবসরে যাবেন।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চৌকস সামরিক অফিসার হিসেবে বিবেচিত আজিজ আহমেদ। পেশাগত জীবনে তিনি বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের অধিকারী।

১৯৬১ সালে চাঁদপুর জেলার মতলবে বাংলাদেশ বিমানের সাবেক কর্মকর্তা প্রয়াত আব্দুল ওয়াদুদ আহমেদের ঘরে জন্ম নেন আজিজ আহমেদ। তার মায়ের নাম রেনুজা বেগম।

ঢাকার মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৭৫ সালে তিনি এসএসসি এবং নটরডেম কলেজ থেকে ১৯৭৭ সালে এইচএসসি পাস করেন। তিনি ১৯৮৩ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (বিএমএ) থেকে বিএ (পাস) সম্পন্ন করেন। পরে ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স অব ডিফেন্স স্টাডিজ (এমডিএস) সম্পন্ন করেন। তিনি ২০০৮ সালে এমএসসি (টেকনিক্যাল) এবং আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি ইন বাংলাদেশ থেকে মাস্টার্স ইন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এমবিএ) ডিগ্রি নেন। এছাড়া ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে তিনি বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালস থেকে পিএইচডি ডিগ্রির জন্য গবেষণা শুরু করেছেন।

বিজ্ঞাপন

সামরিক সূত্রগুলোর তথ্য অনুযায়ী, আজিজ আহমেদ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমির দীর্ঘমেয়াদি কোর্সের ক্যাডেট হিসেবে ১৯৮৩ সালের ১০ জুন সেনাবাহিনীর আর্টিলারি কোরে কমিশন পান। সমসাময়িক বেসিক কোর্সের অফিসারদের মধ্যে তিনিই ছিলেন সবচেয়ে মেধাবী ও পরিশ্রমী। ফলে সামরিক জীবনের শুরুতেই তিনি তার বেসিক কোর্সে প্রথম স্থান পেয়ে নিজেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রথম সারির একজন অফিসার হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেন।

বেসিক কোর্সে ভালো ফল করায় আজিজ আহমেদকে তৎকালীন পার্বত্য চট্টগ্রামে কাউন্টার ইন্সার্জেন্সি অপারেশনে নিয়োজিত আর্টিলারি ব্রিগেডের জিএসও-৩ (অপারেশন) দায়িত্ব দেওয়া হয়। বেসিক কোর্সের বাইরে সেনাবাহিনীর আরো কিছু কোর্সে তিনি ভালো ফল করেন। এগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্কুল অব মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সে (এসএমআই) অনুষ্ঠিত বেসিক ইন্টেলিজেন্স কোর্স ও মিলিটারি সায়েন্স কোর্সে তিনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন।

আজিজ আহমেদ ১৯৮৯-৯০ সালে চট্টগ্রামের হালিশহরের আর্টিলারি সেন্টার ও স্কুল থেকে অফিসার্স গানারি স্টাফ কোর্স করেন। ১৯৯২-১৯৯৩ সালে তাকে ভারতের স্কুল অফ আর্টিলারি, দেওলালীতে পাঠানো হয় ‘লং গানারি স্টাফ কোর্স (ফিল্ড)’ করার জন্য। সেখানেও ভালো ফল করেন তিনি। এরপর তিনি মিরপুর ডিফেন্স সার্ভিস কমান্ড অ্যান্ড স্টাফ কলেজ থেকে ১৯৯৪-৯৫ সালে আর্মি স্টাফ কোর্স-১৯ সম্পন্ন করেন।

অসাধারণ স্টাফ অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ আজিজ আহমেদ একটি অপারেশনাল ডিভিশনের অধীনে আর্টিলারি ব্রিগেডের গ্রেড-৩ স্টাফ অফিসার, সেনাবাহিনীর একটি পদাতিক ব্রিগেডের ব্রিগেড মেজরের দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদর দফতরে প্রশিক্ষণ পরিদফতরের গ্রেড-২ স্টাফ, বেতন ও ভাতা পরিদফতরের গ্রেড-১ স্টাফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কোয়ার্টার মাস্টার জেনারেল (কিউএমজি) হিসেবে দায়িত্বরত তিনি। গত ৯ জানুয়ারি তিনি এই পদে নিয়োগ পান।

বিজ্ঞাপন

২০১২ সালের ৭ মে মেজর জেনারেল পদে পদোন্নতি পান আজিজ আহমেদ। একই বছর ৫ ডিসেম্বর পুনর্গঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব নেন। মূলত আজিজ আহমেদের সময়েই বিজিবি সবচেয়ে সুশৃঙ্খল ও আধুনিক সীমান্তরক্ষী বাহিনীতে পরিণত হয়। এর ধারাবাহিকতায় সীমান্তের নিরাপত্তার পাশাপাশি মাদক ও চোরাচালান প্রতিরোধে জোর অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে বিজিবি।

বিজিবি’র মহাপরিচালক হিসেবে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার তাকে বিজিবিএম, পিবিজিএম ও বিজিবিএমএস— এই তিনটি পদকে ভূষিত করে। অপারেশনে অসাধারণ কর্মদক্ষতা, দূরদর্শিতা, অসম সাহসিকতা, নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার জন্য ‘বর্ডারগার্ড বাংলাদেশ পদক’ বা ‘বিজিবিএম’ পদকেও তাকে ভূষিত করেন প্রধানমন্ত্রী। এই রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাওয়ার মধ্য দিয়ে আজিজ সেনাবাহিনীর সুনামও বাড়ান।

২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের(বিজিবি) তৎকালীন মহাপরিচালক থেকে পদোন্নতি পেয়ে লেফটেন্যান্ট জেনারেল হিসেবে আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ডের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে নিয়োজিত হন। এই ডিভিশন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত সকল জরিপ ও গবেষণার কাজ করে থাকে এবং এই প্রতিষ্ঠানের সুপারিশ মোতাবেক বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রশিক্ষণ দর্শন ও পরিকল্পনা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে।

আজিজ আহমেদ তার দীর্ঘ কর্মজীবনে একটি আর্টিলারি ইউনিটের অধিনায়ক, একটি বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক, একটি বিজিবি সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়াও স্বতন্ত্র এয়ার ডিফেন্স আর্টিলারি ব্রিগেডসহ মোট দু’টি আর্টিলারি ব্রিগেডের কমান্ডার হিসেবে এবং একটি পদাতিক ডিভিশনের কমান্ডার হিসেবে অসামান্য দক্ষতার সঙ্গে কমান্ড সম্পন্ন করেছেন।

তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের অধীনে ১৯৯৫-৯৬ সালে ইরাক-কুয়েতে সামরিক পর্যবেক্ষক এবং ২০০৫-০৬ সালে সুদানে জাতিসংঘ মিশনে ফোর্স কমান্ডারের সামরিক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

প্রশিক্ষক হিসেবেও লেফটেন্যান্ট জেনারেল আজিজের অভিজ্ঞতা আছে। তিনি আর্টিলারি সেন্টার অ্যান্ড স্কুলে প্রশিক্ষক হিসেবে নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘদিন। এছাড়া স্কুল অফ মিলিটারি ইন্টেলিজেন্সের প্রশিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

তার স্ত্রী বেগম দিলশাদ নাহার আজিজ একজন গৃহিণী। তার তিন পুত্র সন্তান আছে। খেলাধুলা প্রিয় এই জেনারেল গলফ খেলায় বিশেষ উৎসাহী ও পারদর্শী। অবসরে তিনি বই পড়েন।

সারাবাংলা/আরডি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন