বিজ্ঞাপন

সুমন জাহিদের মৃত্যু: ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতি তদন্তের দাবি

June 21, 2018 | 12:06 am

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সুমন জাহিদ ফারমার্স ব্যাংকে দায়িত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন। কয়েকমাস আগে ব্যাংকের উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণে চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন তিনি। এ জন্য মানসিকভাবেও বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলেন। কয়েকমাস পরেই তার মৃত্যুর ঘটনায় ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতিও দায়ী কিনা— সে বিষয়টিও তদন্ত হওয়া জরুরি বলে মনে করছে প্রজন্ম ৭১। এক খোলা চিঠিতে মুক্তিযুদ্ধের সন্তানদের এই সংগঠনটি জানিয়েছে এটি তাদের পক্ষ থেকে একটি ‘ওপেন কল’।

কথা হয় শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর ছেলে ও প্রজন্ম ৭১-এর সহসভাপতি আসিফ মুনীরের সাথে। তিনি বলেন, ‘শহীদ সন্তান সুমন জাহিদের মৃত্যু রহস্য উদঘটানে সুষ্ঠু তদন্তের জোর দাবি জানাচ্ছি’ শিরোনামে এক খোলা চিঠিতে আমরা সুমন জাহিদের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তে নিয়োজিত সংস্থাগুলার প্রতি ফারমার্স ব্যাংকের পরিস্থিতিও তদন্তের আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, আমরা অতিরিক্ত কারো কাছে তদন্ত দাবি করছি না। যারা এরই মধ্যে তদন্ত করছেন, তাদের প্রতিই আমাদের আহ্বান তারা যেন তদন্তে এসব বিষয়ও মাথায় রাখেন।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলা’কে আসিফ মুনীর বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, সিআইডি ও শাহজাহানপুর থানা এ ঘটনার তদন্ত করছে। আমরা তাদের কাছেই সুমন জাহিদের মৃত্যুর সত্যিকার কারণ অনুসন্ধানের জন্য আবেদন জানিয়েছি। কারণ এ ঘটনাকে সরাসরি আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে পারছি না আমরা। তাই এ ঘটনার সুরাহায় সংশ্লিষ্ট অন্য বিষয়গুলোও আরেকটু সময় নিয়ে তদন্ত হওয়া দরকার বলে আমরা মনে করছি। কারণ এসব বিষয়ের সঙ্গে তার মৃত্যুর ঘটনার যোগসূত্র রয়েছে কিনা—  সেটাও তাহলে স্পষ্ট হবে।

সুমন জাহিদের মরদেহ উদ্ধার করে কমলাপুর রেলওয়ে থানায় নিয়ে যাওয়ার পর বাইরে স্বজনরা

প্রজন্ম ৭১-এর এই সংগঠক বলেন, ‘আমরা এখনও কেউ জানি না, এটা প্রকৃতই আত্মহত্যা নাকি এর পেছনে কোনো ধরনের চক্রান্ত রয়েছে। তাই সব বিষয়েই তদন্ত করা দরকার। সুমন জাহিদ যেহেতু ফারমার্স ব্যাংকে কাজ করতেন, তাই তার মৃত্যুর পেছনে সেখানকার পরিস্থিতির কোনো ভূমিকা রয়েছে কিনা, সেটাও বের করা হোক। প্রত্যক্ষ না হলেও পরোক্ষভাবেও সেসব পরিস্থিতি কোনোভাবে তাকে এই এই পরিণতির দিকে ঠেলে দিয়েছে কিনা, এগুলো খতিয়ে দেখা দরকার।’ বিশেষ করে গণমাধ্যমে ফারমার্স ব্যাংকের কেলেঙ্কারি বিষয়ে কিছু প্রকাশ হয়নি বলে তারা একে ‘হাইলাইট’ করতে চান বলে জানান তিনি।

প্রজন্ম ১-এর চিঠিতে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে আল বদর বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের শিকার শহীদ কবি ও সাংবাদিক সেলিনা পারভীনের সন্তান এবং শহীদ সন্তানদের সংঠন প্রজন্ম ৭১-এর অন্যতম সংগঠক সুমন জাহিদের অকাল প্রয়াণে আমরা শোকাভিভূত। যেভাবে এবং যে কারণেই ঘটুক না কেন, এই ঘটনা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল তদন্ত করছে। এখনও ডাক্তারি পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফল প্রকাশ করা হয়নি। এ অবস্থায় দেশবাসী, সরকার ও গণমাধ্যমসহ সবার কাছে এক শহীদ সন্তানের আত্মার শান্তি ও তার স্বজনদের শোকের প্রতি সম্মান দেখানোর অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।

বিজ্ঞাপন

সুমন জাহিদের বাড়িতে শহীদ বুদ্ধিজীবীদের ছবির সামনে তার ছেলে

শহীদ সাংবাদিক সিরাজুদ্দিন হোসেনের ছেলে ও প্রজন্ম ৭১-এর সভাপতি শাহীন রেজা নূর ও প্রজন্ম ৭১-এর সহসভাপতি আসিফ মুনীরের পক্ষ থেকে লেখা এই চিঠিতে বলা হয়, ১৯৯১ সালে প্রজন্ম ৭১-এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে এর বিভিন্ন কার্যক্রমে সুমন জাহিদ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। অন্যদিকে ১৯৯২ সালে যুদ্ধাপরাধী গোলাম আজমের বিরুদ্ধে গণআদালতে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন তিনি। আর ২০১৩ সালে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের হোতা আলবদ চৌধুরী মঈনুদ্দিন ও আশরাফুজ্জামান খানের বিরুদ্ধে বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড মামলার একজন অন্যতম সাক্ষী ছিলেন সুমন জাহিদ। দুই আদালতেই স্বাধীনতাবিরোধীরা অভিযুক্ত হন এবং তাদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। এমন ‘হাই প্রোফাইল’ মামলায় সাক্ষ্য দেওয়ার কারণে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বিবর্জিত ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর কাছে সুমন জাহিদসহ আরও কয়েকজন বিভিন্ন সময় হুমকি পেয়েছেন। তার মৃত্যুর সঙ্গে তাকে দেওয়া হুমকির কোনো যোগসূত্র রয়েছেন কিনা— সে বিষয়েও সে বিষয়েও নিশ্চিত হতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে প্রজন্ম ৭১ সুমন জাহিদের পরিবারকে নিরাপত্তা দেওয়ার আহ্বান জানায়। একইসঙ্গে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাক্ষ্য দেওয়া সব সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য সাক্ষী সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবিও জানিয়েছে সংগঠনটি।

সারাবাংলা/জেএ/টিআর

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন