বিজ্ঞাপন

আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে বার্ন ইউনিটে ৭ জন!

June 21, 2018 | 11:01 pm

।। জাকিয়া আহমেদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: রাশিয়া বিশ্বকাপ নিয়ে উত্তেজনা বিশ্বজুড়ে। সে উন্মদনার ঢেউ লেগেছে বাংলাদেশেও। নিজের পছন্দের দলকে সমর্থন দিতে অনেকে দেশের পতাকার রঙে পুরো বাড়ি সাজিয়েছেন অনেকে— এমন খবরও এসেছে সংবাদ মাধ্যমে। রয়েছে দুর্ঘটনার খবরও। এই দুই দলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে বৈদ্যুতিক শক, অগ্নিদগ্ধ ও পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়ে আহত হয়েছেন— এমন সাত জন ভর্তি হয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে। এর মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

মিরপুরের বাসিন্দা ৪০ বছরের সুমন ইসলাম, চাকরি করেন একটি বায়িং হাউজে। আর্জেন্টিনার সমর্থক। নিজ বাড়িতে প্রিয় দলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে বাড়ির পাশের বিদ্যুতের প্রধান তারের সঙ্গে ধাক্কা খান, যেটা হাই ভোল্টেজ ছিল। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে (নিবিড় পরিপর্যা কেন্দ্র) রয়েছেন, তার অবস্থা আশঙ্কাজনক।

গত ৫ জুন দুপুর একটার দিকে তিনতলা বাসার বারান্দাতে ব্রাজিলের পতাকা ওড়াতে গিয়ে আহত হয় ১৩ বছরের রোকন উদ্দিন অর্ণব। দুই হাতের কবজি, গলা, পুরোসহ ১৩ শতাংশ বার্ন নিয়ে অর্ণব প্রথমে ছিলেন এইচডিইউ (হাইডিপেন্ডেন্সি ইউনিট) এ। সেখানে ১০ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর তাকে কেবিনে স্থানান্তর করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বাসাবোর মাদারটেক থেকে ন্যাশনাল আইডিয়ালের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অর্ণব ব্রাজিলের ভক্ত। বিশ্বকাপ শুরুর আগেই বাসার তিনতলার বারান্দায় প্রিয় দলের পতাকা ওড়াতে আহত হয় অর্ণব।

হাসপাতালের বিছানায় বসে অর্ণব সারাবাংলাকে বলেন, পতাকাটি প্লাস্টিকের একটি স্ট্যান্ডের সঙ্গে বেঁধে মাত্র বারান্দার গ্রিলের ওপাশে দিয়েছি, তখন বিকট শব্দে ট্রান্সমিটার ব্লাস্ট হয়। সঙ্গে সঙ্গে আমি বারান্দার মেঝেতে শুয়ে পড়ি, আমার চোখে থাকা চশমাটা জ্বলে গেছে-বলতে থাকেন অর্ণব।

এসময় পাশে বসা অর্ণবের বোন তাসরীন জাহান মৌরি বলেন, তারপরও তার আগ্রহের কোনও কমতি নেই, হাসপাতালের বেডে বসেও জিজ্ঞেস করে, আপু-পতাকাটা কই?

বিজ্ঞাপন

মৌরি বলেন, চশমা থাকাতে চোখ দুটো বেঁচেছে আর মেঝেতে শুয়ে পরাতে জীবন রক্ষা হয়েছে। নয়তো, পুরো শরীরে আগুন ধরে যেত। মৌরি বলেন, এতো শক্তিশালী ট্রান্সমিটার ছিল যে ছিল তলা ভবনের প্রতিটি ফ্লাটের সিলিং ফ্যান খুলে পড়েছে, ফ্রিজ নষ্ট হয়েছে বেশিরভাগ।

উত্তরার খিলক্ষেতে ভাঙারি দোকানে কাজ করা আজহার ব্রাজিলের পতাকার ওড়াতে গিয়ে মারাত্মকভাবে আহত হন। আজহার বলেন, ‘ফোরফোট্টি লাইনে’ পরে হাত দুইটা গেল-পতাকা টাঙাইতে গেছি, গাছের উপর উইঠ্ঠা, আর্থিং কইরা ফালাই দিছে। ইতোমধ্যে আজহারের দুইহাতে অস্ত্রোপচার হয়েছে, আরও দরকার হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।

এছাড়াও শিশু ওয়ার্ডে থাকা ১২ বছরের মাহিনের ডান হাতের মাঝের দুই আঙ্গুল কেটে ফেলা হয়েছে, আতিকের কাটা হয়েছে ডান পায়ের বড় আঙ্গুল, আসিফের বাম হাতে অস্ত্রোপচার করা হয়েছে, পায়ের বড় আঙ্গুল কেটে ফেলতে হতে পারে-বলে সারাবাংরাকে জানান, বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী রেজিস্টার ডা. অভিজিৎ সরকার।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সহকারী অধ্যাপক ডা. তানভীর আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ১৬ শতাংশ ইলেক্ট্রিক বার্ন নিয়ে সুমন ইসলাম আইসিইউতে (নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র) রয়েছেন। তার অবস্থা বেশ খারাপ। গত পরশু (১৯ জুন) তার দুই পায়ে হাটুর নিচ থেকে সার্জারি হয়েছে।

কিন্তু এতোকিছু করেও পা দুটি বাঁচানো নিয়ে সন্দিহান আমরা- মন্তব্য করে ডা. তানভীর আহমেদ বলেন, শেষ পর্যন্ত পা দুটো কেটে ফেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের সমন্বয়কারী ডা. সামন্ত লাল সেন সারাবাংলাকে বলেন, বিশ্বকাপ ফুটবলের উন্মাদনা কার না আছে, কিন্তু সেই উন্মাদনার কারণে যদি জীবন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে সে উন্মাদনার দরকার নেই।

বাচ্চা থেকে শুরু করে প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ পর্যন্ত বার্ন ইউনিটে ভর্তি হয়েছেন, তাদের কারও হাত কাটা যাচ্ছে, পা কাটা যাচ্ছে-এটি কোনও কথা হতে পারে- প্রশ্ন করেন ডা. সামন্ত লাল সেন। তিনি বলেন, এই উন্মাদনার দরকার নেই। সবার সাবধান থাকা উচিত, যেন ফুটবল নিয়ে পাগলামী করতে গিয়ে জীবন কাজেই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।

গণমাধ্যমকে এ বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে মূল ভূমিকা পালন করতে হবে জানিয়ে ডা. সামন্ত লাল সেন আরও বলেন, বিশ্বকাপের সময় মানুষকে সচেতন করতে হবে। নয়তো অসংখ্য মানুষের হাত পা কাটা যাবে, জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যাচ্ছে মানুষ-এটা কোনও খেলাকে কেন্দ্র করে হতে পারে না, হওয়া উচিত নয়।

সারাবাংলা/জেএ/এমআইএস

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন