বিজ্ঞাপন

সবার চোখ গাজীপুরে

June 25, 2018 | 10:45 pm

।। গোলাম সামদানী ও এমদাদুল হক তুহিন।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন মঙ্গলবার (২৬ জুন)। আর মাত্র কয়েক ঘণ্টা পর ভোটাররা পছন্দের প্রার্থী নির্বাচনে ভোট দেবেন। এরইমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। কেন্দ্রে কেন্দ্রে নির্বাচনের সরঞ্জাম পৌঁছানো হয়েছে। ভোট অবাধ-সুষ্ঠু করতে গাজীপুরে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েকমাস আগে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন (গসিক) নির্বাচন হয়ে উঠেছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ও দশ বছরের বেশি সময় ক্ষমতার বাইরে থাকা দল বিএনপির জন্য মহা চ্যালেঞ্জ। জাতীয় নির্বাচনের আগে ঢাকার পার্শ্ববর্তী এই সিটি করপোরেশনের নির্বাচনকে উভয় দল নিজেদের জনপ্রিয়তা যাচাইয়ের মাপকাঠি হিসেবে দেখতে চাইছে।

যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে ভোট দখল, কেন্দ্র দখলের আশঙ্কা করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগও এনেছে দলটি। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে। আর ইসি বলছে কেবলমাত্র সবার সহযোগিতায় নির্বাচন হয়ে উঠতে পারে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ।

বিজ্ঞাপন

শুধু দুই দলই নয়, কোনদিকে ছুটবে ভোটের স্রোত, কে হচ্ছেন গাজীপুরের পরবর্তী নগরপিতা,  তা নিয়ে গতকয়েকদিন ধরেই আলোচনায় মশগুল সারাদেশ। আর নির্বাচনের দিন মঙ্গলবার দেশি বিদেশি পর্যবেক্ষকসহ সারাদেশের দৃষ্টি থাকবে গাজীপুরে। দিনটিতে সবার চোখই পরখ করে দেখবে, জাতীয় নির্বাচনের আগে কতটা সুষ্ঠু হয়েছে আওয়ামী লীগের ঘাটিখ্যাত গাজীপুরের ভোট। আগ্রহ উদ্দীপনার গাজীপুরে এই নির্বাচন আওয়ামীলীগ, বিএনপি ও ইসি অর্থাৎ তিন পক্ষের জন্যই অগ্নি পরীক্ষা বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে ব্যালট পেপার। কেন্দ্রে গেছে নির্বাচনের সব সামগ্রী। আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছেন বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশ ও আনসার বাহিনীর প্রায় ১৫ হাজার সদস্য। নির্বাচনী এলাকায় প্রতিটি ওয়ার্ড পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির এক একজন পর্যবেক্ষক। ম্যাজিস্ট্রেটসহ থাকবে সার্বক্ষণিক টহলে থাকবে ৭৬ টিম। সকাল ৮ টায় শুরু হয়ে এক টানা ভোট চলবে বিকাল ৪ টা পর্যন্ত।

বিজ্ঞাপন

গাজীপুর সিটির রিটানিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডল সারাবাংলাকে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নির্বাচনে কেউ যদি কোন প্রকার অনিয়ম ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার চেষ্টা করে তবে আইন  শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোরভাবে তা দমন করবে। এছাড়াও প্রশাসনের কেউ কোনো অনিয়ম করলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে সম্পন্ন করতে যা যা করার দরকার ইসির পক্ষ থেকে সবই করা হয়েছে।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে গাজীপুর সিটি নির্বাচন ও আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় তিন সিটি নির্বাচন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আওয়ামী লীগের ঘাঁটিখ্যাত গাজীপুরে জয়লাভ দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কাছে খুবই প্রত্যাশিত। তবে ক্ষমতায় থাকা সরকারী দল হিসেবে এবারের নির্বাচনকে একপেশে করতে চায় না আওয়ামী লীগ। রাখতে চায় অনেকটাই প্রভাবমুক্ত।

বিজ্ঞাপন

প্রধান দুই দলের প্রার্থী কোন কেন্দ্রে ভোট দেবেন : নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি মনোনীত হাসান উদ্দিন সরকার। আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম জয়দেবপুরের কানাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে এবং বিএনপির মেয়রপ্রার্থী হাসান উদ্দিন সরকার টঙ্গির আইচপাড়া এলাকায় বসির উদ্দন উদয়ন একাডেমি কেন্দ্রে ভোট দেবেন।

অযথা হয়রানি নয় : গাজীপুর সিটি করপোরেশনে গ্রেফতারি পরোয়ানা ছাড়া আর কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না পুলিশ। এমনকি কোনো আসামি আদালত থেকে জামিনে বের হয়ে এলেও নির্বাচন চলাকালীন তাকে আটক কিংবা গ্রেফতার করা যাবে না। রোববার (২৪ জুন) ইসি থেকে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি গাজীপুর সিটি নির্বাচনের রিটানিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন মণ্ডলের কাছে পাঠানো হয়েছে।

ছয় কেন্দ্রে ইভিএম ও দুই কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা : গাজীপুর সিটি নির্বাচনে ৬ কেন্দ্রে থাকছে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম)। এছাড়াও থাকছে দুই কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা। যেসব কেন্দ্রে ইভিএম ব্যবহারকরা হজচ্ছে সেগুলো হলো- চাপুলিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ( ভোটার সংখ্যা-২৪৮০), চাপুলিয়া মফিজউদ্দিন খান উচ্চ বিদ্যালয় ( ভোটার সংখ্যা-২৫৫২), পশ্চিম জয়দেবপুরের মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে-১ ( ভোটার সংখ্যা-২৫৬২), মারিয়ালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে-২ ( ভোটার সংখ্যা-২৮২৭), রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে-১ (ভোটার সংখ্যা-১৯২৭) ও রানী বিলাসমনি সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে-২ ( ভোটার সংখ্যা-২০৭৭)।

ভোট উপলক্ষে সিটি এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। বন্ধ থাকবে সব কলকারখানা। নগরীর পোশাক কারখানাগুলোতে সাধারণ ছুটি দেওয়া হয়েছে।

গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মোট ভোটার ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটার। এর মধ্যে পুরুষ ভোটা ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন। নারী ভোটার  ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। নির্বাচনে মোট ভোটকেন্দ্রেরন সংখ্যা ৪২৫টি, ভোট কক্ষের সংখ্যা ২ হাজার ৭৬১টি। মোট কেন্দ্রের মধ্যে ৩৩৭টিকে গুরুত্বপূর্ণ বা ঝুকিপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে এবং বাকি ৮৮টিকে সাধারণ কেন্দ্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। ‘ঝুঁকিপূণর্’ কেন্দ্রের প্রতিটিতে ২৪ জন এবং সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবেন। দেশের সবচেয়ে বড় এই সিটি করপোরেশনের আয়তন ৩৩০ বর্গকিলোমিটার।

প্রার্থীর সংখ্যা : গাজীপুর সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৫৪ জন ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ৮৪ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। মেয়র প্রার্থীরা হলেন আওয়ামী লীগের মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম ( নৌকা), বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন ( মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. ওহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ ( টেবিল ঘড়ি)। এরইমধ্যে ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় একজন কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন।

সারাবাংলা/জিএস/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন