বিজ্ঞাপন

‘সহিংস কর্মকাণ্ডে বিএনপি ছিল না’

August 10, 2018 | 11:36 am

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংস কোনো কর্মকাণ্ডে বিএনপি জড়িত ছিল না বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শুক্রবার (১০ আগস্ট) সকালে নয়াপল্টনে দলটির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।

গত ২৯ জুলাই বিমানবন্দর সড়কে বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। সেই আন্দোলন এক পর্যায়ে সহিংস রূপ নেয়। সরকার পক্ষ থেকে বলা হয়, আন্দোলনে ইন্ধন দিচ্ছে জামায়াত-বিএনপি। এ সময় বিএনপির এক শীর্ষ নেতার ফোন আলাপও ফাঁস হয়।

বিজ্ঞাপন

উসকানি দেওয়ার অভিযোগে মামলা হয় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর বিরুদ্ধে।

এমন পরিস্থিতিতে দলের অবস্থান তুলে ধরতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বলতে চাই যে, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংস কোনো কর্মকাণ্ডে বিএনপি কখনো জড়িত ছিল না।’

‘‘যারা পুলিশের সামনে হেলমেট ও মুখোশ পড়ে সহিংসতা করেছে, সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছে, আওয়ামী লীগের সেই ‘সন্ত্রাসীদের’ অবিলম্বে চিহ্নিত ও গ্রেফতার করে বিচারের আওতায় আনার জোর দাবি জানাচ্ছি’’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষ, বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংঠগন এমনকি দেশের প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রীগণ ও পুলিশ কর্মকর্তা পর্যন্ত শিশু কিশোরদের ৯ দফা দাবি আন্দোলন ও কার্যক্রমের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। আমরাও বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের ন্যায্য দাবির প্রতি আমাদের নৈতিক সমর্থন ঘোষণা করি।

‘কিন্তু দুর্ভাগ্যক্রমে প্রথম দিন থেকেই সরকার এই আন্দোলনে ষড়যন্ত্র ও উসকানি আবিষ্কারের অপচেষ্টা চালাতে শুরু করে। তাদের আক্রমণে নিরীহ ছাত্র-ছাত্রীরা গুম হয়েছে, আহত হয়েছে, মিথ্যা মামলায় হয়রানি হয়েছে। প্রবীণ রাজনীতিবিদ ও দেশবরেণ্য ব্যক্তিত্ব ড. অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী ও ড. কামাল হোসেন এবং অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিও তাদের কটুক্তি থেকে রেহাই পাচ্ছেন না’— বলেন ফখরুল।

তিনি বলেন, ‘আজ স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে পেশি শক্তি দিয়ে দমন করার অপকৌশল হিসেবে বিএনপিসহ আন্দোলন সমর্থনকারী রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান, সচেতন ব্যক্তিবর্গকে বিভিন্ন কায়দায় নিপীড়ন চালিয়েছে সরকার। বিএনপির মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ সারাদেশে বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে অসংখ্য মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গ্রেফতার করে নিপীড়ন করেছে বহু নেতা-কর্মীকে। অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরাও নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পায়নি।’

সরকারি দলের সিদ্ধান্তেই ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও  শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় হেলমেট ও মুখোশ পরে অগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, কিরিচ, রামদা ইত্যাদি নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্র-ছাত্রীদের ওপর অমানবিক হামলা চালিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন,  ‘পুলিশের সহায়তায় এবং তাদের সামনে বিএনপি-জামায়ত কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি-সোটা নিয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের মারপিট করবে, দায়িত্বপালনরত সাংবাদিকদের কোপাবে, ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করবে আর তাদেরকে গ্রেফতার করা হবে না— এটা পাগলেও বিশ্বাস করে না।’

ফখরুল বলেন, ‘হেলমেট পরা ও মুখোশধারী আক্রমণকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী ছিল— এটা আহত সব সাংবাদিক এবং ছাত্র-ছাত্রীরা বলার পরেও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাদের বিচার করার জন্য নাম চান। এমন বাজে রসিকতায় তিনি আনন্দ পেতে পারেন, কিন্তু দেশবাসী লজ্জিত হয়।’

সংশোধিত আইনে নিরাপদ সড়ক হবে না

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সরকার মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইনের যে সংশোধনী অনুমদন করেছে, তা পরিবহন মালিক সমিতি ছাড়া সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। সংশোধিত এই আইনে ছাত্র-ছাত্রীদে দাবিকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না।

ফখরুল বলেন, ‘এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দূর্ঘটনা এড়ানোর স্পষ্ট দিক নির্দেশনা কিম্বা কঠোর শাস্তির বিধান নেই। শুধু চালকের অপরাধে দুর্ঘটনা ঘটে না। চালক নিয়োগে, গাড়ির ফিটনেস যথাযথ করা এবং চালকদের বেতন, ভাতা, অবসর শারীরিক সুস্থতা ইত্যাদি দেখার দায়িত্ব যে মালিকদের।

‘এছাড়া বিআরটিএ এর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনের কোন বিধান আইনে রাখা হয়নি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলা হবে কি না?— এটা নির্ধারণের দায়িত্ব নিরপেক্ষ, যোগ্য, সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। এ ব্যাপারে হাইকোর্টের মতামতেরও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। আমরা এই আন্দোলন এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছেন তাদের সাথে অর্থবহ আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর দাবি জানাচ্ছি’— বলেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, ড. মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বরচন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ।

সারাবাংলা/এজেড/একে

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন