বিজ্ঞাপন

‘গ্রেনেড হামলায় জিয়া পরিবার জড়িত, সন্দেহ নেই’

August 21, 2018 | 11:39 am

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ১৪ বছর আগের ২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায় সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের পরিবারের জড়িত থাকা নিয়ে কোনো সন্দেহ নেই বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এই হামলায় (গ্রেনেড হামলা) জিয়া পরিবার জড়িত, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সেদিন খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের নির্দেশে হামলাকারীরা যেন পালিয়ে যেতে পারে, সে ব্যবস্থা নেওয়া হয় এবং সব চিহ্ন মুছে দেওয়ার চেষ্টা হয়। তাদের পরিকল্পনা ছিল, আমাকে তো মারবেই মারবে, তারা আওয়ামী লীগকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবে।’

মঙ্গলবার (২১ আগস্ট) ১৪ বছর আগের ওই গ্রেনেড হামলায় নিহতদের স্মরণে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে স্থাপিত অস্থায়ী বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।

বিজ্ঞাপন

এসময় আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও তার সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগসহ সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতারা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘একবার না বারবার এভাবে আঘাত এসেছে। ১৫ আগস্টের সেই বর্বর হামলার ঘটনাতেও জিয়া পরিবার যে জড়িত, তাতে কোনো সন্দেহ নাই। কারণ খুনী মোশতাক, সে তো আমার বাবার কেবিনেটে ছিল, সে তো গাদ্দারি করেছেই। সেই সঙ্গে মোশতাক নিজেকে অবৈধ রাষ্ট্রপতি হিসেবে ঘোষণা দিলো, আর জিয়াউর রহমানকে সেনাপ্রধান করল। জিয়াউর রহমানের সঙ্গে তার কী সম্পর্ক ছিল যে তাকে সে বিশ্বস্ত মনে করল এবং তাকেই সে সেনাপ্রধান করল?’

বিজ্ঞাপন

এরপর রাষ্ট্রপতি সায়েমকে সরিয়ে দিয়ে জিয়াউর রহমানের নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণার পর খুনীদের বিচার না করে ইনডেমনিটি দিয়ে পুরস্কৃত করার বিষয়টি তুলে ধরেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ঠিক ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার পরে আমরা দেখলাম, প্রকৃত খুনী কারা সেটা খুঁজে বের না করে সাধারণ একটা গ্রামের মানুষ, সেই জজ মিয়াকে নিয়ে এসে নাটক সাজানো হলো। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচণ্ড চাপের মুখে এই নাটক সাজিয়ে ঘটনার দৃষ্টি অন্য দিকে ফেরাতে চেষ্টা করল।’

গুজব ছড়ানো ও মিথ্যা বলতে বিএনপির চেয়ে পারদর্শী আর কেউ নেই দাবি করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা সব জায়গায় গুজব ছড়ালো, স্কুলে স্কুলে বাচ্চাদের কাছে ছড়িয়ে দিলো— আমি ভ্যানিটি ব্যাগে করে নিয়ে গিয়ে নিজইে গ্রেনেড মেরেছি। এদের চরিত্রটা দেশবাসীর মনে রাখা উচিত। আর আমি চাই, এই ঘটনাগুলি স্মরণ করে দিতে। কারণ ওই ঘটনার পর আমি যখন ঘরে ফিরে গেলাম, তখন আমার সারাশরীরে রক্ত। তখন রেহানা মনে করেছিল, আমিও বুঝি আহত। আমি বললাম, আমাকে তো সবাই এমনভাবে ঘিরে রেখেছিল আমার গায়ে লাগেনি। কিন্তু আশপাশে যারা ছিল, তারা সবাই আহত হয়েছে।’

সেদিনের ঘটনায় আহতদের খুঁজে খুঁজে বের করে তাদের চিকিৎসার উদ্যোগের দিকগুলো তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিটি জায়গায় বাধা। এমনকি আহতরা হাসপাতালে যখন গেছে, বিএনপি মাইন্ডেড যারা, তেমন একটা চিকিৎসকও সেখানে কোনো চিকিৎসা সহায়তা করেনি। খুব স্বাভাবিকভাবে এটা যেকোনো মানুষের কাছে উপলব্ধি হবে, আমাকে তো মারবে মারবেই, আওয়ামী লীগকেও নিশ্চিহ্ন করে দেবে; যেন আওয়ামী লীগ আর শত বছরেও ক্ষমতায় যেতে না পারে।’

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যখন এই গ্রেনেড হামলা হয়, সেখানে ডিজিএফআইয়ের একজন অফিসার কর্মরত ছিল। সে পুলিশ হেডকোয়ার্টারে ফোন করে জানতে চায়, এটা কী হচ্ছে, এটা কেন হচ্ছে? তাকে ধমক দিয়ে বলা হয়েছিল, তোমার ওখানে কী কাজ? ওখান থেকে সরো। যেসব পুলিশ কর্মকর্তা একটু সহযোগিতা করতে চেয়েছিল, তাদের সরকারের পক্ষ থেকে, বিএনপির পক্ষ থেকে তিরষ্কার করা হয়েছিল। তাদেরকে সরে যেতে বলা হয়েছিল।’

‘জানি না আল্লাহর কী ইচ্ছা ছিল! কারণ সাধারণত আমরা এই ধরনের র‌্যালি করলে ট্রাক রাখি। ওই ট্রাকের ওপর দাঁড়িয়েই বক্তব্য রাখি এবং আমাদের নেতাকর্মীরা যার যার ভাগ করা জায়গায় দাঁড়ায়। সেইদিন যখন এলাম, দেখি ট্রাকটা সাধারণত যেখানে দাঁড়ায় সেখান থেকে একটু সামনে চলে গেছে। তখন আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম, আজকে ট্রাকটা আবার সামনে কেন? আমাকে বলা হলো, ব্রেক কষতে কষতে সময় চলে গেছে, তাই ট্রাকটি সামনে চলে গেছে। আমরা মনে হয় এটা বোধহয় আল্লাহর কোনো ইশারাই ছিল! নইলে ওই ট্রাক তার নিজের জায়গায় দাঁড়ালে ওর ভেতরেই এসে গ্রেনেড পড়। আরেকটি বিষয় মনে করিয়ে দিতে চাই, সাধারণত আমাদের পক্ষ থেকেই ভলান্টিয়ার গ্রুপ করা হয়। সেদিন কিন্তু ছাদে কাউকে যেতে দেয়নি। কাউকে পাহারা দিতে দেয়নি। কী কারণে? তাহলে এটা খুব স্বাভাবিকভাবেই বোঝা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের যে চেষ্টা, এর সঙ্গে যে বিএনপি একেবারে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, খালেদা জিয়া ও তার ছেলে জড়িত— এতে কোনো সন্দেহ নেই।’, বলেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের এতগুলো মানুষ আহত, তারপরও পার্লামেন্টে আমাদের বক্তব্য পর্যন্ত দিতে দেয়নি। বাংলাদেশে এই ধরনের একটা ঘটনা ক্ষমতায় থেকে বিএনপি-জামায়াত জোট ঘটিয়েছিল— এতে কোনো সন্দেহ নেই।’ এ সময় বর্বরোচিত ওই হামলায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন তিনি।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ‘২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় যারা দোষী, তাদের প্রমোশন দেওয়া হয়। তাদের দুঃখ ছিল, আমি কেন মরলাম না। এটাই তারা খবর নেওয়ার চেষ্টা করছিল। বারবার এভাবে আমার ওপর আঘাত এসেছে। দেশের মাটিতে ফেরার পর থেকেই দেশের যেখানেই গেছি, সেখানেই এই ধরনের পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়েছে। আল্লাহ প্রতিবারই বাঁচিয়েছেন। আর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা নিজেদের জীবনকে বাজি রেখে রক্ষা করেছে আমাকে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর আমরা চেষ্টা করেছি, সন্ত্রাসবাদ জঙ্গিবাদ বন্ধ করতে। তারপরও আমাদের বহু নেতাকর্মী এখনও নানাভাবে নির্যাতন ও হত্যার শিকার হয়। ওই বিএনপি-জামায়াত জোটের যারা ঘাপটি মেরে থাকে, তারা অনেকেই আমাদের দলে মিশে যায়। দলের ঢুকেই সেখানে গোলমাল করে আমাদের দলের নেতাকর্মীদের হত্যা করে আমাদের ওপর দোষ চাপায়।’

এ বিষয়ে দলের নেতাকর্মীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘যারা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারতে পারে, যারা জাতির পিতাকে হত্যা করতে পারে, যারা শিশু হত্যা করতে পারে, যারা বিরোধী দলের র‌্যালিতে প্রকাশ্য দিবোলোকে গ্রেনেড হামলা করতে পারে তারা কখনও দেশের কোনো কল্যাণ করতে পারে না, দেশের কোনো মঙ্গল করতে পারে না। তারা শুধু রক্ত নিতেই জানে। কাজেই তাদের সম্পর্কে সজাগ থাকতে হবে।’

দেশবাসীকেও সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের দলে এদের কেউ যেন না টানে। কারণ এদের উত্থানই হচ্ছে হত্যা, ষড়যন্ত্রের মধ্য দিয়ে। এদের চরিত্র কখনও বদলাবে না। এরা সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, দুর্নীতি, মানিলন্ডারিং, এতিমের অর্থ আত্মসাৎ— এসব ছাড়া আর কিছু জানে না। তারা শুধু ভোগ করতে জানে, মানুষকে দিতে জানে না।’

জাতির পিতার স্বপ্ন পূরণের প্রত্যয় জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন। আমরা তৃতীয়বারের মতো ক্ষমতায়। চেষ্টা করেছি দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের, দেশটাকে উন্নত করার। জাতির পিতা জীবন দিয়ে গেছেন দেশের মানুষের জন্য। তাই আল্লাহ যতক্ষণ জীবন দিয়েছেন, একটাই চেষ্টা— এ দেশের মানুষের মুখে হাসি মুখে ফুটিয়ে জাতির পিতার স্বপ্ন যেন পূরণ করতে পারি। শুধু সেটাই চাই।’

১৪ বছর আগের নৃশংস ও বর্বরোচিত ওই হামলায় প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী ও আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক আইভি রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। এছাড়াও এই হামলায় আরো ৫শ জন আহত হন। আহতদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন। তাদের কেউ কেউ আর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পাননি।

ওই হামলাতেই শ্রবণশক্তি নষ্ট হয়ে যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। গ্রেনেড হামলার বিকট শব্দে তার দুই কানেই সমস্যা দেখা দেয়। চিকিৎসার মাধ্যমে তার একটি কানের শ্রবণশক্তি ফিরিয়ে আনা গেলেও অন্য কানের শ্রবণশক্তি ফেরেনি। চিকিৎসকরা বলছেন, ওই হামলার পর দলের নেতাকর্মীদের চিকিৎসা নিয়ে দুশ্চিন্তায় ছিলেন শেখ হাসিনা। নিজের শারীরিক সমস্যাকে তিনি গুরুত্ব দেননি। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী ওই সময় শেখ হাসিনা সিঙ্গপুরে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিলে হয়তো তার দুই কানেরই শ্রবণশক্তি ফিরত। কিন্তু দলের নেতাকর্মীদের রেখে তিনি উন্নত চিকিৎসা নিতে বিদেশে যাননি বলে জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক প্রাণ গোপাল দত্ত।

আরও পড়ুন-

২১ আগস্ট গ্রেনেড সন্ত্রাসের ১৪ বছর

২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: বিচারিক আদালতের রায় আগামী মাসেই

আমার চিকিৎসার দরকার নেই ঢাকা মেডিকেলে যাও, বলেছিলেন শেখ হাসিনা

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন