বিজ্ঞাপন

সবাই উইশ করেছে, আমি যেন আবার ফিরে আসি: প্রধানমন্ত্রী

October 3, 2018 | 4:57 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগ দিতে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বিশ্বনেতারা আশা করেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন ফের বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ফিরে আসেন এবং আগামীতেও তারা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাছে পান।

বুধবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে ৭৩তম জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদানসহ যুক্তরাষ্ট্র সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।

সংবাদ সম্মেলনে বেসরকারি টিভি চ্যানেল ডিবিসি’র প্রধান সম্পাদক মনজুরুল ইসলাম বুলবুলের এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘যাদের সঙ্গেই কথা হয়েছে, তারা প্রত্যেকেই রোহিঙ্গাদের বিষয়ে উদ্বিগ্ন। তবে নির্বাচনের ব্যাপারে আমাকে কেউ পরামর্শ দেয়নি। যার সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা সবাই আমাকে উইশ করেছে আমি যেন আবার ফিরে আসি।’ এসময় গণভবনে উপস্থিত আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা হাততালি দিয়ে উঠলে শেখ হাসিনা বলেন, এখানে তালি বাজানোর কিছু নাই। জনগণ ভোট দিলে আছি না দিলে নাই।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতিসংঘে গিয়েছি। যতজন হেড অব স্টেট, হেড অব দ্য গর্ভনমেন্ট, যাদের সঙ্গেই দেখা হয়েছে বা যত প্রতিষ্ঠান প্রধানের সঙ্গেই কথা হয়েছে, তারা প্রতেক্যেই তাদের মনের আকাঙ্ক্ষাটা জানিয়েছে। তারা চায় যেন আবার আমরা নির্বাচিত হয়ে আগামী দিনে তাদের সঙ্গে দেখা হয়। এই কথাটা তারা বারবার উল্লেখ করেছে। তবে আমাদের দেশের নির্বাচন নিয়ে কী হবে না হবে, সেটা নিয়ে তেমন কোনো কথা হয়নি।

তিনি বলেন, তখন আমি তাদের বলে আসিনি যে আপনারা একটু আসেন, আমাকে ক্ষমতায় বসে দিয়ে যান। আমি কিন্তু সেটা বলিনি। আমি তাদের জবাব একটাই দিয়েছি, দেখেন, দেশের মানুষ যদি ভোট দেয়, আমি আছি; না দিলে নেই। হয়তো এটাই আপনাদের সঙ্গে আমার শেষ দেখা। কারণ এখন তো বয়স হয়ে গেছে।

এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র সফরে গত ২৭ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দফতরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৩তম অধিবেশনে ভাষণ দেন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন।

বিজ্ঞাপন

জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের পাশাপাশি তিনি নেদারল্যান্ডসের রানি ম্যাক্সিমা, এস্তোানিয়ার প্রেসিডেন্ট ক্রেস্টি কালজুলেইদ ও যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেইওয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন। শেখ হাসিনা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া সংবর্ধনা সভায়ও যোগ দেন। এছাড়া, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। এসব বৈঠকেই বিশ্বনেতারা তাকে ফের বাংলাদেশের সরকারপ্রধান হিসেবে দেখতে চান বলে এর আগেও নিউইয়র্কেই এক ব্রিফিংয়ে জানিয়েছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।

দেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা বিভিন্ন দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে তুলে ধরেছেন জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমিই তাদের বলেছি, আগে নির্বাচন হতো, একজন মিলিটারি ডিকটেটর থাকত। আমাদের সময়ে ট্রান্সপারেন্ট ব্যালট বক্স চালু করেছি, আরও বিভিন্ন অগ্রগতি আমাদের সময়ে হয়েছে। আমাদের সময়ে কতগুলো ভোট হয়েছে, আমরা তো হস্তক্ষেপ করিনি। বিএনপি থাকলে তো সিল মেরেই নিয়ে নিত কিংবা রেজাল্ট আটকে ভোট বদলে দিত।

বাংলাদেশকে নিয়ে অনেকেই ষড়যন্ত্র করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশ ষড়যন্ত্রের উর্বর ভূমি। কিছু মানুষ সবসময় অপেক্ষা করে, মানুষ ভালো থাকলে যেন তারা ষড়যন্ত্র করতে পারে। এই বাংলাদেশের বাংলাদেশের যে এত উন্নতি, এর সবকিছুই জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান শুরু করে গিয়েছিলেন। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য, ১৯৭৫ সালে তাকে হত্যা করা হলো। এরপর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তারা আর দেশের উন্নয়নে কোনো কাজ করেনি। আজ কি দিন বদল হয়নি? মানুষ খাবার পাচ্ছে না?— প্রশ্ন রাখেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখন তারা অপেক্ষা করছে, সরকার চলে যাবে। এমন একজন আসবে যাদের চাল নাই, চুলা নাই; কিন্তু ক্ষমতায় আসার খায়েস আছে। তাদের খায়েস পূরণ করতে গিয়ে তো খেসারত দিতে হয় জনগণকে। ১০ বছর ক্ষমতায় আছি, দেশের মানুষ শান্তিতে আছে। আমাদের তরুণদের জন্য শিক্ষা-গবেষণার সুযোগ আমরা করে দিয়েছি। চাকরির জন্য যেন মুখাপেক্ষী না হতে হয়, সে জন্য তাদের উদ্যোক্তা হিসেবে ভবিষ্যৎ গড়ে তোলার সুযোগ করে দিয়েছি। কিন্তু তারপরও পত্রিকায় লেখা হয়, সরকার এইখানে ফেল করেছে। ওটাই তাদের আত্মসন্তুষ্টি। কিন্তু আমরা নিজেদের স্বার্থের জন্য রাজনীতি করি না, মানুষের জন্য কাজ করি।

বিজ্ঞাপন

শেখ হাসিনা বলেন, মনে রাখতে হবে, আমার পুরো পরিবারকে হত্যা করা হয়েছে। আমরা শুধু দুই বোন বেঁচে আছি। গতকাল (২ অক্টোবর) ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কথা হয়েছে। এই দেশটি ভূমিকম্প আর সুনামিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। আমার ছোট বোন রেহানা, লন্ডন থেকে আমাকে এসএমএস করেছে ইন্দোনেশিয়ার পাশে দাঁড়াও। আমি দেশটির প্রেসিডেন্টকে ফোন করে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়েছি। তবে আমরা অনেক উন্নয়ন করেছি, এমনিতেই ক্ষমতায় চলে আসব— এটা ভাবার সুযোগ নাই। বাংলাদেশ তো সে রকম দেশ না। এখানে কিছু মানুষ ষড়যন্ত্র করার জন্যই বসে থাকে।

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিনের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যেন সংখ্যালঘুতে পরিণত না হয়, সে ব্যবস্থা আমরা করেছি। একইসঙ্গে আমরা স্থানীয়দের ব্যবস্থাও করেছি। বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা হয়েছে। তারা যেন দ্রুত ফিরে যেতে পারে, সে বিষয়ে কার্যক্রম অনেকে এগিয়ে এসেছে। যেসব রোহিঙ্গা ফিরে যাবে, ভারত তাদের জন্য ঘর করে দেবে। সমস্যা হলো— মিয়ানমার সব কথায় হ্যাঁ হ্যাঁ বলে, কিন্তু কাজের বেলায় কিছু করে না।’

আরও পড়ুন-

আমি ইভিএমের পক্ষে: প্রধানমন্ত্রী

‘লাগলে বলুক, আন্দোলন ছাড়া কোটা দেবো না’

‘বিশ্বসভায় বাংলাদেশের ইমেজ আরও সুদৃঢ় হয়েছে’

নির্বাচনে আসা না আসা তাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত: প্রধানমন্ত্রী

‘সাংবাদিকরা উদ্বিগ্ন বুঝলাম, কিন্তু আমাদের উদ্বেগটা কে দেখবে’

‘দেশের ভোট দু’রকম, আওয়ামী লীগ আর অ্যান্টি আওয়ামী লীগ’

‘কারও সহযোগিতা দরকার হলে আমার ক্ষমতায় না থাকাই ভালো’

‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোংরামি ঠেকাতেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন’

সারাবাংলা/এনআরএটি/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন