নুসরাত হত্যা মামলার অভিযোগ গঠন ২০ জুন
১০ জুন ২০১৯ ১২:২৩
ফেনী: ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফি হত্যা মামলায় আগামী ২০ জুন অভিযোগ গঠন হবে। সোমবার (১০ জুন) সকালে এই হত্যা মামলার অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে এ আদেশ দেন ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল।
নুসরাত হত্যা মামলায় অভিযোগপত্র গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে শুনানির জন্য আজ সোমবার দিন নির্ধারণ করা ছিল। সেই অনুযায়ী সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুনানি শুরু হয়। এসময় মামলার ২১ আসামিকেই আদালতে হাজির করা হয়। তবে অভিযোগপত্রে এই ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনকে অভিযুক্ত করেছে এই মামলার তদন্তের দায়িত্বে থাকা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআিই)।
আরও পড়ুন- নুসরাত হত্যা: যেভাবে পিবিআইয়ের জালে ধরা পড়ে আসামিরা
এদিন ১৬ আসামির মধ্যে ৭ জনের জামিন চাওয়া হয়। আদালত শুনানি শেষে জামিন নামঞ্জুর করে আসামিদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এছাড়া গ্রেফতার ২১ আসামির মধ্যে পাঁচজনকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
অধ্যক্ষের কাছে শ্লীলতাহানির শিকার হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত। অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে তার পরিবারের দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার না করায় তাকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা করা হয়। মারাত্মক দগ্ধ হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে মৃত্যু হয় তার।
আরও পড়ুন- যেভাবে পোড়ানো হয় নুসরাতকে, পিবিআইয়ের সচিত্র বিবরণ
আলোচিত এই হত্যা মামলাটি তদন্তের ভার নুসরাতের মৃত্যুর দিনই হস্তান্তর করা হয় পিবিআইকে। এরপর ৫০ দিনে ৩৩ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত শেষ করে চার্জশিট জমা দেন পিবিআইয়ের তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। চার্জশিটে এ ঘটনায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ১৬ জনের মৃত্যুদণ্ড চাওয়া হয়। অভিযুক্ত এই ১৬ জন হলেন— অধ্যক্ষ সিরাজ (৫৭), নুর উদ্দিন (২০), শাহাদাত হোসেন শামীম (২০), সাইফুর রহমান জোবায়ের (২১), মাকসুদ আলম ওরফে কাউন্সিলর মকসুদ (৫০), জাবেদ হোসেন (১৯), হাফেজ আব্দুল কাদের (২৫), আফছার উদ্দিন (৩৩), কামরুন নাহার মনি (১৯), উম্মে সুলতানা পপি (১৯), আব্দুর রহিম শরীফ (২০), ইফতেখার উদ্দিন রানা (২২), ইমরান হোসেন মামুন (২২), মোহাম্মাদ শামীম (২০), রুহুল আমিন (৫৫) ও মহিউদ্দিন শাকিল (২০)।
আরও পড়ুন- নুসরাত হত্যায় কেরোসিন ব্যবহারের প্রমাণ পেয়েছে সিআইডি
অন্যদিকে, মামলার ২১ আসামির মধ্যে যে পাঁচ জনের নাম অভিযোগপত্রে নেই তারা হলেন— নূর হোসেন হোনা মিয়া, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল ইসলাম ও আরিফুল ইসলাম।
ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে মামলাটি চলছিল। পরবর্তী কার্যক্রমের জন্য গত ৩০ মে মামলাটি নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। মোট ৯২ জন সাক্ষী মামলাটি প্রমাণ করবেন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকিদের মধ্যে রয়েছেন বিশেষজ্ঞ, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষী।
আরও পড়ুন- মাদরাসাছাত্রীকে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টা মামলায় ৪ জন রিমান্ডে
নুসরাতকে যৌন হয়রানির অভিযোগে তার মায়ের দায়ের করা মামলায় গত ২৭ মার্চ অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দোলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে কারাগার থেকেই তিনি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নুসরাতের পরিবারকে চাপ দিতে থাকেন। তাতে নুসরাত ও তার পরিবার রাজি না হলে তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করেন অধ্যক্ষ। সেই অনুযায়ী, গত ৬ এপ্রিল নুসরাত তার মাদরাসায় পরীক্ষায় অংশ নিতে গেলে তাকে কৌশলে ছাদে ডেকে নিয়ে যায় অধ্যক্ষের সহযোগীরা। সেখানে তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়।
অগ্নিদগ্ধ নুসরাতকে প্রথমে স্থানীয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তার অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিন রাতেই নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের ৯ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ডের অধীনে নুসরাতের চিকিৎসা চলে। কিন্তু সব চেষ্টা ব্যর্থ করে দিয়ে ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টায় নুসরাত মারা যান।
আরও পড়ুন-
নুসরাত হত্যা: ফেনীর পুলিশ সুপার প্রত্যাহার
ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি
সিংগাপুরে নেওয়া যাচ্ছে না ফেনীর দগ্ধ মাদরাসাছাত্রীকে
যৌন হয়রানির শিকার ছাত্রীকে পেট্রোল ঢেলে হত্যার চেষ্টা
নুসরাত হত্যাকাণ্ড: আদালতে জবানবন্দি দিয়েছে মামুন ও রানা
নুসরাত হত্যা: ওসির বিরুদ্ধে মামলা পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ
সারাবাংলা/টিআর
অভিযোগপত্র গঠন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল নুসরাত নুসরাত হত্যা নুসরাত হত্যা মামলা