May 29, 2019 | 4:17 pm
ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
ফেনী: ফেনীর সোনাগাজীর ইসলামিয়া মাদরাসার শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে আগুনে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় চার্জশিট দাখিল করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। চার্জশিটে ১৬ জনকে আসামি করে তাদের সবার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের সুপারিশ করা হয়েছে।
বুধবার (২৯ মে) ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট জাকির হোসাইনের আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মো. শাহ আলম।
যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে তারা হলেন প্রধান অভিযুক্ত সোনাগাজী ইসলামিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ এস. এম. সিরাজ উদদৌলা, আফসার উদ্দিন, জোবায়ের আহম্মেদ, মাকসুদ আলম কাউন্সিলর, জাবেদ হোসেন, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, হাফেজ আবদুল কাদের, উম্মে সুলতানা পপি, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহীম শরিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রহুল আমিন, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার উদ্দিন রানা, মহিউদ্দিন শাকিল। যাদেরকে বাদ দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন আরিফুল ইসলাম, সাইদুল ইসলাম, কেফায়েত উল্লাহ, নুর হোসেন, আলাউদ্দিন।
আদালতে চার্জশিট দাখিল শেষে বিফ্রিংকালে পুলিশ সুপার মো. ইকবাল বলেন, ‘নুসরাত হত্যা মামলার তদন্ত শেষে আজ বুধবার আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেছি। পিবিআই’র ৮০৮ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে এরমধ্যে এজহারনামীয় ৮জন। এছাড়া তদন্তকালে আরও আটজন আসামির সম্পৃক্ততা মিলেছে। আমরা সব আসামির মৃত্যুদণ্ড চেয়ে সুপারিশ করেছি।’
নুসরাত হত্যা মামলায় মোট সাক্ষী ৯২ জন। এর মধ্যে কার্যবিধির ১৬১ ধারায় ৬৯ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বাদী, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সিজার লিস্টের সাক্ষী। মামলায় ৭ জন সাক্ষী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ১২ জন আসামি নিজেদের দোষ স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন।
এ মামলায় ২১ জনকে বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার করা হয়। পিবিআই নুসরাত হত্যায় ব্যবহৃত বেশকিছু আলামত সংগ্রহ করেছে। এবং নুসরাত হত্যার ঘটনার ধারাবাহিক ডিজিটাল স্কেচ ম্যাপ ও আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ সুপার বলেন, ‘ওসি মোয়াজ্জেমের বিষয়ে পুলিশ সদর দফতর থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি তার কতর্ব্যে অবহেলার বিষয়ে রিপোর্ট দিয়েছেন। সে রিপোর্টের ভিত্তিতে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন।’
নুসরাতকে শ্লীলতাহানি মামলার চার্জশিট দাখিলের বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মো. ইকবাল বলেন, ‘শ্লীলতাহানির মামলা আমরা তদন্ত করছি। যতদ্রুত সম্ভব ওই মামলারও চার্জশিট দেওয়া হবে।’
নুসরাত হত্যা মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট এম. শাহজাহান সাজু বলেন, ‘তদন্ত কর্মকর্তা ১৬ জনের নামে অভিযোগপত্র দাখিল করেছেন। এ মামলায় ২১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজকে ১৬ জনকে রেখে ৫ জনকে নট সেন্টআপ করেছে। নট সেন্টআপ আসামি নুর হোসেন হোনা মিয়া, আলা উদ্দিন, কেফায়েত উল্যাহ জনি, সাইদুল এবং আরিফুল ইসলাম এই ৫ জনকে নিয়ে বাদীর আপত্তি থাকে তাহলে আমরা নারাজি দেব। আর যদি আপত্তি না থাকে তাহলে চার্জশিট গ্রহণের জন্য আদালতকে বলব।’
চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়ের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এর জের ধরে গত ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসা কেন্দ্রের সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।
এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।
নুসরাতের মা শিরিন আক্তার বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পিবিআই কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ। প্রধানমন্ত্রী কথা রেখেছেন। নিজের মেয়ের মতো আমার মেয়ের মামলাটি দেখেছেন। এতে আমি খুশি।
চার্জশিটে যাদের নাম উল্লেখ রয়েছে তাদের দ্রুত ফাঁসির রায় দিয়ে কার্যকরা করা হোক। এতে করে আর কোনো মায়ের বুক খালি হবে না বলেন নুসরাতের মা।
নুসরাতের ছোট ভাই রাশেদ রায়হান বলেন, ‘অপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর করে আমার আপুর মতো খুনিদের কবরে শুয়ে দিতে পারলে সেদিন আমরা কিছুটা শান্তি পাব। আমার আপুর আত্মায় শান্তি পাবে।’
নুসরাতের বাবার খোঁজ নিতে গিয়ে জানা যায়, তিনি ইতেকাফ করছেন। ফলে এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান জানান, আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে আলাপ করে চার্জশিটের ব্যাপারে কথা বলব। তবে আমরা চার্জটে অভিযুক্ত আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। কেউ যেন আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে বের হয়ে যেতে না পারে।
১২ জনের ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি: নুসরাত হত্যা মামলায় পুলিশ ও পিবিআই ২১ জনকে গ্রেফতার করেছে। এরমধ্যে ১২ জন আদালাতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। আসামিদের বিভিন্ন মেয়াদে রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে।
সারাবাংলা/টিআর/একে
আরও পড়ুন