বিজ্ঞাপন

নিরাপদ সড়ক: কেবল আইন নয়, বাস্তবায়নেও গুরুত্ব দিতে হবে

August 6, 2018 | 11:53 am

।। আবদুল জাব্বার খান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: নিরাপদ সড়কের দাবিতে এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে রাজধানীর রাজপথে অবস্থান নিয়েছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিমানবন্দর সড়কে কুর্মিটোলা এলাকায় দুই বাসের রেষারেষিতে দুই সহপাঠীকে হারানোর প্রতিবাদে এই আন্দোলনের রেশ ছড়িয়ে পড়েছে রাজধানীর বাইরেও। এর মধ্যে এই আন্দোলনকে ঘিরে খানিকটা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লেও নিরাপদ সড়কের দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি সরকারও। তাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সব দাবিই মেনে নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়েছে।

কিন্তু নিরাপদ সড়কের দাবি একদিনে পূরণ হওয়ার নয় এবং সুনির্দিষ্ট একটি বা দু’টি পদক্ষেপ নিয়েও সড়ককে নিরাপদ করা যাবে না বলে মন্তব্য করছেন আইনজীবীরা। তারা বলছেন, নিরাপদ সড়কের জন্য উপযুক্ত আইনের যেমন প্রয়োজন, এর পাশাপাশি প্রয়োজন সার্বিক ব্যবস্থাপনাতেই ইতিবাচক পরিবর্তন।

পরিবহন আইনের সংশোধনীর প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক সারাবাংলা’কে বলেন, ত্রুটিযুক্ত যানবাহনের জন্য একমাসের জেল ও দুইশ টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। অথচ ত্রুটিযুক্ত যানবাহন তো রাস্তায় নামারই কথা না। এ আইন দ্রুত সংশোধনের প্রয়োজন।

বিজ্ঞাপন

আইন সংশোধন পর্যন্ত পুরনো আইনের দ্রুত বাস্তবায়নও গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘নতুন আইনে সাজা বাড়ানো হতে পারে। তবে যে সাজা আছে তা কার্যকর করাটাও গুরুত্বপূর্ণ। আইনে যদি মৃত্যুদণ্ড থাকে কিন্তু সেটা যদি কার্যকর না হয়, তাহলে লাভ কী? বরং সাজা কম হলেও যদি কার্যকর হয়, তাহলেও কিন্তু অপরাধীরা ভয় পাবে। তাই সাজা কার্যকর করাটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’

তবে আইনের পাশাপাশি সড়ক পরিবহন ব্যবস্থাকেই উন্নত করার দিকে গুরুত্ব দেন তিনি। এ বি এম খায়রুল হক বলেন, ‘আমাদের এই নগরে বাসে উঠতে এক রকম ‍যুদ্ধ করতে হয়, যা আমার মতো এই বয়সের একজন মানুষের পক্ষে সম্ভব না।’ এ ক্ষেত্রে লন্ডনের দ্রুতগতির ও আরামদায়ক টিউব ট্রেনের উদাহরণ টানেন তিনি। মেট্রোরেল হলে আমাদের দেশেও গণপরিবহনে খানিকটা স্বস্তি আসবে বলেও আশাবাদ জানান তিনি।

হাইকোর্টের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ড. বশির উল্লাহ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘আমাদের পরিবহন ব্যবস্থা অত্যন্ত দুর্বল— এটা অস্বীকার কারার উপায় নেই । কিন্তু এর জন্য সরকারকে একা দায়ী করা ঠিক নয়। সড়কে এ নৈরাজ্যের জন্য আমরা সাধারণ মানুষ, চালক ও মালিকের দায়বদ্ধতা রয়েছে। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে সিস্টেমের পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য সর্বপ্রথম প্রয়োজন কঠোরভাবে আইনের প্রয়োগ এবং সাধারণ মানুষের সচেতনতা বাড়ানো।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘দেখবেন, ঢাকা শহরের প্রত্যেকটা বাসের বাইরের অংশ এবড়ো-থেবড়ো, রঙেচটা। অসংখ্য ঘষাঘষির দাগ। এর কারণ সর্বদা তারা অসুস্থ প্রতিয়োগিতায় লিপ্ত থাকে। একজন মালিকের উচিত প্রতিদিন তার গাড়িটির দিকে নজর দেওয়া, যেন তার ওই গাড়িতে কোনো আচড় না পড়ে। মালিকা বিষয়টি নজরে রাখলে হয়তো চালক অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নামবে না।’

পাশাপাশি চালকদের প্রশিক্ষণ ছাড়াও ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা দেখা উচিত বলেও মনে করেন ড. বশির উল্লাহ। ট্রাফিক আইন সবারই মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তোলার ওপরও জোর দেন তিনি। একইসঙ্গে নিরাপদ সড়ক গড়তে আইনের সাজার পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দ্রুত এ ব্যবস্থা থেকে উত্তরণ না ঘটাতে পারলে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা।

সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট অজি উল্লাহ সারাবাংলা’কে বলেন, ‘যোগাযোগ ব্যবস্থায় যে অস্থিরতা ও নৈরাজ্য পরিস্থিতি চলছে, এর থেকে উত্তরণের জন্য সর্বপ্রথম সড়ক পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মালিকদের সচেতন হতে হবে, যেন তারা কোনো অদক্ষ চালকের হাতে গাড়ি তুলে না দেন। গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে সব নিয়ম মেনে নেওয়ার বাধ্যবাধকতা যেন থাকে চালকদের, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের আরেক আইনজীবী ব্যারিস্টার মনিরুজ্জামান আসাদ বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবি আমাদের সবারই। ঘর থেকে বের হয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমরা রাস্তায় চলাচল করি। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে আইনের কঠোর প্রয়োগ, দক্ষ ড্রাইভার নিয়োগ, বিআরটিএ’কে স্বচ্ছতার সঙ্গে লাইসেন্স প্রদান এবং সড়ক পরিহন ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত করতে হবে। নাগরিকদের সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। পাশাপাশি আইন সংশোধন করে সাজার পরিমাণ বাড়ানো উচিত বলেও মত দেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

এদিকে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে করেছে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি। সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন বলেন, নিরাপদ সড়কের দাবিতে দেশের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছে। তাদের এই দাবি যৌক্তিক। নৌমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, গরু-ছাগল চিনলেই গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া যাবে। এ ধরনের উক্তি একজন মন্ত্রীর কাছ থেকে জাতি আশা করে না। যোগ্য ব্যক্তি না হলে তার হাতে গাড়ি দেওয়া উচিত হবে না।

উল্লেখ্য, গত রোববার (২৯ জুলাই) রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর পরিবহনের দুই বাসের রেষারেষিতে হত্যার শিকার হয় শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম। এরপর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা এই হত্যার বিচার ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলন করে আসছে।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর

আরও পড়ুন

সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আইনের দ্রুত বাস্তবায়ন চান প্রধানমন্ত্রী
সড়ক দুর্ঘটনার সমাধান তৈলাক্ত বাঁশের অঙ্কের মতো

 

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন