বিজ্ঞাপন

বাঁচতে চায় বাবলি

September 16, 2018 | 1:42 pm

।। হৃদয় দেবনাথ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

মৌলভীবাজার: বাবলি আক্তার (৭) বয়স যখন দুই তখন থেকেই তার ডান পা বিরল এক রোগে আক্রান্ত! দীর্ঘ ৫ বছর যাবত বাবলি পায়ে এই জটিল রোগ নিয়েই যুদ্ধ করে বেঁচে আছে! বাবলি মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার ছতিয়া গ্রামের হতদরিদ্র খাতুন বেগমের কন্যা!

বাবলির বয়স যখন দুই বছর তখন তার মা খাতুন বেগম তার ডান পায়ে একটি ক্ষতচিহ্ন দেখতে পায়। টাকার অভাবে সেসময় চিকিৎসা করাতে পারেনি বাবলির। ধীরে ধীরে আক্রান্ত ডান পা’টি অস্বাভাবিকভাবে ফুলে যেতে থাকে। তখন স্থানীয় এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলেও বিরল এ রোগটি শনাক্ত করতে পারেনি। ততদিনে শিশুর আক্রান্ত ডান’পা অস্বাভাবিকভাবে ফুলে গেছে!

পিতৃহীন এতিম বাবলির মা খাতুন বেগম সারাবাংলাকে জানান, টাকার অভাবে মেয়ের চিকিৎসা করাতে পারিনি তবে প্রথম অবস্থায় কবিরাজের কাছে নিয়ে গিয়েছিলাম কিন্তু কোনো উন্নতি হয়নি বরং তার ডান পা’টি ধীরে ধীরে ফুলে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, আমার স্বামী নেই। বাবলি যখন আমার গর্ভে তখনই তার বাবা আমাদের ফেলে চলে গেছে। এখন পর্যন্ত তার কোনো খোঁজ মেলেনি! চার ভাই বোনের মধ্যে বাবলি সবার ছোট। বড় মেয়ে ঢাকায় একটা গার্মেন্টসে চাকরি করে কিছুদিন হলো তার বিয়ে হয়ে যাওয়ায় স্বামীর সাথে ঢাকায় থাকে। প্রথমদিকে কিছু টাকা পঁয়সা দিতো কিন্তু এখন তার সংসার হয়েছে তাই দিতে পারেনা।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে পরিবারের একমাত্র উপার্জক্ষম আমার ছেলে জসিম মিয়া (২০)। জসিম দিনমজুরের কাজ করে। টাকার অভাবে বাবলির বড় বোন লাভলীর পড়াশুনাও বন্ধ করে দিয়েছি। আগে আমি মানুষের বাড়ি বাড়ি কাজ করে কিছু উপার্জন করতাম কিন্তু বাবলির এই অসুখের কারণে তাকে একা ফেলে কোথাও যাওয়া যায়না। তাই এখন ছেলে জসিমের উপার্জনের টাকায় কোন রকম খেয়ে না খেয়ে বেঁচে আছি। জসিম দিনমজুরের কাজ করে যা পায় তা দিয়েই কোনও রকম সংসার চলে। টাকার জন্য বাবলিকে ভালো কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারিনি।

এলাকার লোকদের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কিছুদিন আগে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ওসমানীর ডাক্তাররা বাবলিকে মাদ্রাজ নিয়ে যাওয়ার জন্য বলেন। তিনি জানান, ওসমানী হাসপাতালে বাবলির সবরকম টেস্ট করানো হয়েছে। ওসমানী হাসপাতালে কিছুদিন চিকিৎসার পর বাবলিকে নিয়ে বাড়ি চলে আসি। বাবলির মা বলেন যেখানে সিলেটে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে কয়েক বছর লেগে গেছে এ অবস্থায় মেয়েকে নিয়ে মাদ্রাজ যাবো কিভাবে? তাই গ্রামের ডাক্তার দিয়েই চিকিৎসা করাচ্ছি।

বিজ্ঞাপন

একপর্যায়ে তিনি অসহায়ের মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি জানান, এখনো কিছু সময় পেলে পাহাড়ে জ্বালানী কাঠ সংগ্রহ করে তা বাজারে বিক্রি করে কিছু উপার্জনের চেষ্টা করেন কিন্তু তাও বাবলিকে একা রেখে প্রতিদিন সম্ভব হয়না। মেয়ের চিকিৎসার প্রধান সমস্যাই অর্থনৈতিক বাধা বলে তিনি জানান।

নিজের চোঁখের সামনে মেয়ের অসুখের তীব্র যন্ত্রনায় চিৎকার আর বুকফাটা আর্তনাদ অসহায়ের মতো দেখে যাওয়া ছাড়া তার আর কিছু করার নেই। মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে তিনি সমাজের বিত্তশালী সহ সরকারের কাছে সহযোগিতা চেয়েছেন। সরকার বা সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এসে যদি এই অসহায় শিশুটির চিকিৎসার ভার নেন তাহলে হয়তো নতুন জীবন ফিরে পাবে বিরল রোগে আক্রান্ত পিতৃহীন হতদরিদ্র এতিম শিশু বাবলী।

মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. ইকবাল হাসান সাংবাদিকদের জানান, এটি ফাইলেরিয়ার কম্লিকেশন এলিফেন্থিয়াসিস (গোদ রোগ) অথবা টিউমার জাতীয় গ্রোথ হতে পারে। মেয়েটিকে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল অথবা পিজি হাসপাতালে পাঠানো যেতে পারে।

এ বিষয়ে কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কমর্কর্তা মাহমুদুল হক মুঠোফোনে সারাবাংলাকে জানান, বিষয়টি আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নিচ্ছি মেয়েটি প্রতিবন্ধী হয়ে থাকলে অবশ্যই ভাতা পাবে।

বিজ্ঞাপন

শিশু বাবলী আক্তারকে সাহায্য করতে চাইলে যোগাযোগ করতে পারেন, ০১৭৯৯৫৮৯২১৪ এই নম্বরে।

সারাবাংলা/এনএইচ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন