বিজ্ঞাপন

‘২০৪১ সালের মধ্যে প্রত্যেকের খাবার টেবিলে থাকবে নিরাপদ খাদ্য’

September 20, 2018 | 6:22 pm

।। সারাবাংলা ডেস্ক ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: প্রাতিষ্ঠানিক সংকট ও সীমাবদ্ধতা দূর করে সমন্বিতভাবে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনার আশ্বাস দিয়েছেন খাদ্যমন্ত্রী অ্যাডভোকেট মো. কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘২০৪১ সালের মধ্যে উৎপাদন থেকে খাবার টেবিল পর্যন্ত নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে চায় সরকার।’

বৃহস্পতিবার (২০ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘খাদ্যে ভেজালবিরোধী অভিযান: প্রাতিষ্ঠানিক সংকট’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন। একটি অনলাইন নিউজ পোর্টাল এবং স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘ওয়াচডগ বাংলাদেশ’ এই বৈঠকের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন নিউজ পোর্টালের সম্পাদক রাশেদ চৌধুরী।

খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যেন ভেজালবিরোধী অভিযানে হয়রানির শিকার না হয় সেজন্য আমরা প্রথমেই কাউকে জেল-জরিমানা করতে চাই না। একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মতিঝিলের ২০০ হোটেলে জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। এরপর মালিক ও কর্মচারিদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। পরবর্তীতে হোটেলগুলোর মধ্যে যেগুলো নিরাপদ সেগুলোকে সবুজ চিহ্ন, যেগুলোর ছোট খাট সমস্যা থাকবে সেগুলোকে হলুদ এবং যেগুলোর অবস্থা খারাপ সেগুলোকে লাল চিহ্ন দেওয়া হবে। পর্যায়ক্রমে লাল চিহ্নিত হোটেলগুলোকে বন্ধ করে দেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

পাইলট ভিত্তিতে এটি করা হচ্ছে জানিয়ে খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এ সংক্রান্ত আইন বাস্তবায়নে ৭-৮ বছর সময় লাগলেও বাংলাদেশে তার অনেক আগেই বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। স্বাধীনতার ৪৮ বছরে অন্য সরকারগুলো এ বিষয়টিতে গুরুত্ব দেয়নি। শুধুমাত্র প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমাদের সরকারই নিরাপদ খাদ্য আইন এবং নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ গঠন করেছে।’

নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান মাহফুজুল হক বলেন, ‘নিরাপদ খাদ্য ব্যবস্থাপনায় জড়িত ১৮টি মন্ত্রণালয় ও সংস্থা, সিটি করপোরেশন, পৌরসভাসহ আরো ৪৮৬টি প্রতিষ্ঠান এবং ২৫ লাখ খাদ্য ব্যবসায়ীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করা একটি কঠিন কাজ। তবে দেশের সব মানুষ যেহেতু ভোক্তা, তাই সচেতনতা বাড়িয়ে নিরাপদ খাদ্যের প্রতি চাহিদা সৃষ্টি করা গেলে ব্যবসায়ীরা নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে বাধ্য হবে।’

চেয়ারম্যান হক আরও বলেন, ‘অনুমান নির্ভর প্রচার-প্রচারণা এবং কিছু ভুল অ্যাকশনের কারণে মানুষের বেশি ক্ষতি হয়েছে। ফরমালিন নিয়ে ভুল তথ্য প্রচার করা হয়েছে। যেকোনো খাদ্যে ফরমালিন কাজ করে না। ফরমালিন শুধু প্রোটিনে কাজ করে। মাছ-মাংসও দীর্ঘদিন ডুবিয়ে না রাখলে কাজ হয় না। ভুল ধারণার কারণে মানুষ শাক-সবজি ফলমূল খাওয়া কমিয়েছে।’

বিজ্ঞাপন

অতীতে ভুল মেশিন ব্যবহার করে ফরমালিন মাপা হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘কঠোর আইনের ফলে ফরমালিন এখন অনেক নিয়ন্ত্রিত। সরকার এখন স্ট্রিট ফুডকে স্বাস্থ্য সম্মত করতেও বিশেষ উদ্যোগ নিচ্ছে। দেশের বিভিন্ন শহরে রাস্তায় যারা খাবার বিক্রি করেন তাদের জন্য ফুড কার্ড, প্রশিক্ষণ ও লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’

পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের চেয়ারম্যান আবু নাসের বলেন, ‘দেশে নীরব গণহত্যা চলছে। বিশ্বব্যাংক বলছে বছরে ৮০ হাজার মানুষ পরিবেশ দূষণে মারা যাচ্ছে। এতে ৫৪ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এ অবস্থায় শিল্পজাত খাদ্যপণ্যের প্রতি বিশেষ নজর দিতে হবে। খাদ্য উৎপাদন প্রক্রিয়ায় শহরের চেয়ে গ্রাম-গঞ্জে অধিক হারে কীটনাশক ব্যবহার করা হচ্ছে। তাছাড়া পশুপাখিতে গ্রোথ হরমোন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের অবাধ ব্যবহার বন্ধ করতে হবে।’

বাংলাদেশ রেস্তোরা মালিক সমিতির সাবেক সভাপতি কমর উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে ভেজালবিরোধী অভিযান পরিচালনা করে শুধু খড়গ নামানো হয় হোটেল রেঁস্তোরাগুলোর উপর। ঔপনিবেশিক আমলের মতো জোর করে তাৎক্ষণিক জরিমানা আদায় করা হয়, কিংবা ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। এক্ষেত্রে আইনের সঠিক প্রয়োগ জরুরি।’

ভোক্তা অধিকার ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান নূর ইসলাম বলেন, ‘আইন করার পাশাপাশি আইন বাস্তবায়নে সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও সচেতনতা প্রয়োজন।’

বিজ্ঞাপন

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আরেফিন বলেন, ‘বর্তমানে ৬৪ জেলায় অধিদপ্তরের অফিস রয়েছে এবং এখন নিয়মিত গণশুনানির আয়োজন করা হচ্ছে।’

বিএসটিআই-এর সহকারী পরিচালক মো. রিয়াজুল হক বলেন, ‘আমরা পানিসহ বিভিন্ন পণ্যের মান বিচারের জন্য প্রতিদিনই ঢাকার কোন না কোন স্থানে ভেজালবিরোধী অভিযান চালাচ্ছি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ড. খালেদা ইসলাম বলেন, ‘সব খাদ্যকেই ঢালাওভাবে ভেজাল বলা ঠিক হবে না। অনেক ভাল উদাহরণও আছে যেগুলো আমাদের সামনে আসে না।’ এসময় ফলমূল-শাকসবজি খাবারের আগে আধা ঘণ্টা পানিতে ভিজিয়ে রাখার পরামর্শ দেন তিনি।

বীর প্রতীক মাহবুব আলী রঞ্জু বলেন, ‘পৃথিবীর কোথাও খাদ্য নিয়ে এত অবহেলা করা হয় না। তাই আইনের কঠোরতা প্রয়োজন। শুধু জরিমানা করেই দায়িত্ব শেষ করা ঠিক হবে না।’

সারাবাংলা/এমও

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন