বিজ্ঞাপন

দেশের অর্থনীতিতে নারীর অবদান গণনায় আনতেই  হবে : তথ্যমন্ত্রী

October 15, 2018 | 8:44 pm

।। স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা : ‘নারীদের বাদ দিলে অর্থনীতি হয় খোঁড়া, আর গণতন্ত্র হয় পঙ্গু’ এমন মন্তব্য করে তথ্য মন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেছেন, গণতান্ত্রিক ও আধুনিক ডিজিটাল সমাজ গড়তে দেশের অর্থনীতিতে নারীদের অবদান গণনায় আনতেই  হবে।

সোমবার (১৫ অক্টোবর) আন্তর্জাতিক গ্রামীণ নারী দিবস উপলক্ষে জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে উইমেন জার্নালিস্ট নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ-ডব্লিউজেএনবি এবং মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের যৌথ আয়োজনে ‘অর্থনীতিতে গ্রামীণ নারীর অবদান’ শীর্ষক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।

মুক্তিযুদ্ধে এদেশের নারীদের অবদানকে অসামান্য বলে বর্ণনা করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের বিস্ময়কর উন্নয়নের পেছনে গৃহকর্মের পাশাপাশি শষ্য উৎপাদন, পশুপালন, মৎস্যচাষ এবং তৈরি পোষাক উৎপাদনসহ বিভিন্ন খাতে গ্রাম ও শহরের নারীদের অবদান অসামান্য। অথচ পারিবারিক শ্রমে নারীরা যেসব কাজ করছেন, সেখানে নারীদের ঠকানো হচ্ছে।’

বিজ্ঞাপন

তথ্যমন্ত্রী আরো বলেন, তৃণমূলে নারীরা সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হওয়ায় ক্ষমতা কাঠামোয় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। তবে সম্পদ বণ্টনসহ বিভিন্ন কাজে কোণঠাসা হয়ে থাকার কারণে ক্ষমতা বিন্যাসে নির্বাচিত নারীরা সে ভাবে ভূমিকা রাখতে পারছেন না। সমতার সমাজ প্রতিষ্ঠায় আইনগত ও প্রশাসনিকভাবে লড়াই করতে হবে এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, শিক্ষা, বাজার ব্যবস্থাপনা, ক্ষমতা কাঠামো এবং মানব উন্নয়নে নারীর সম অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে।

আলোচনা সভার বিশেষ অতিথি প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালক মো. শাহ আলমগীর বলেন, ‘নিজের বাবাকে সময় দিতে না পারলে সার্বক্ষণিক লোক রাখতে হলে বা সন্তানকে স্কুলে নিতে লোক রাখা হলে তখন বোঝা যাচ্ছে এসব কাজের আর্থিক মূল্য কত বেশি। কিন্তু একই কাজ যখন বাড়ির নারীরা করছেন তখন তাকে কাজ হিসেবেই বিবেচনা করা হচ্ছে না। তাই মনমানসিকতার পরিবর্তন জরুরি।’

বিজ্ঞাপন

আরেক বিশেষ অতিথি মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, বিশ্বব্যাপীই নারীর অবৈতনিক কাজের মূল্যায়ন হয়নি। গ্রামীণ নারী বিভিন্ন কাজে জড়িত থাকলেও উৎপাদিত পণ্য বাজারে নিচ্ছেন না, পণ্য বাজারে নিচ্ছেন তাঁর স্বামী। অন্যদিকে স্বামীও পণ্য বিক্রি করার পর কখনোই বলেন না যে এ আয়ে তাঁর স্ত্রীর অবদান আছে।

তিনি জানান, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন নারী নির্যাতন প্রতিরোধে ‘মর্যাদায় গড়ি সমতা’ শীর্ষক একটি প্রচারাভিযান চালাচ্ছে। এতে নির্যাতন প্রতিরোধে কৌশল হিসেবে নারীর প্রতি সম্মান দেখানো এবং নারীর অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন। তিনি বলেন,  গ্রামীণ নারীরা অসংখ্য কাজ করলেও তা জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ হয় না।  গণমাধ্যমেও গ্রামীণ নারীদের বিষয়টি উপেক্ষিত। তিনি পাঠ্যপুস্তকে নারীদের যথাযথ অবদানকে তুলে ধরার সুপারিশ করেন।

বিজ্ঞাপন

ডব্লিউজেএনবির সাধারণ সম্পাদক আঙ্গুর নাহার মণ্টির সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বেসরকারি টেলিভিশন নিউজ টোয়েন্টফোরের প্রধান বার্তা সম্পাদক শাহনাজ মুন্নী। সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জাতীয় গণমাধ্যম ইন্সটিটিউটের উপ-পরিচালক রওনক জাহান, কনমওয়েলথ জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি পারভীন চৌধুরী, বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্রের সভাপতি নাসিমুন আরা হক, দৈনিক আমাদের অর্থনীতি ও আমাদের সময় ডটকমের সম্পাদক নাসিমা খান মন্টি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের কোষাধ্যক্ষ উম্মুল ওয়ারা সুইটি, চ্যানেল আই অনলাইনের ইনপুট এডিটর ফাহমিদা আক্তার, বৈশাখী টেলিভিশনের সিনিয়র রিপোর্টার রিতা নাহারসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সাংবাদিকরা।

মূলপ্রবন্ধে শ্রমশক্তি জরিপের বরাত দিয়ে বলা হয়, দেশের এক কোটি ২০ লাখ নারী শ্রমিকের মধ্যে ৭৭ শতাংশই গ্রামে বসবাস করেন। বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে কৃষি খাতের ২০টি কাজের মধ্যে ১৭টি কাজই করেন নারীরা। এ খাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ বেশি।

তবে নারীর এ শ্রমকে পারিবারিক কাজ হিসেবে গণ্য করা হয়। এ কাজ অবৈতনিক এবং এ কাজের জন্য কোনো আর্থিক মূল্য পান না নারীরা। যদি নারীর অবমূল্যায়িত কাজের অংশ জাতীয় অর্থনীতিতে যোগ করা হতো তাহলে জাতীয় উৎপাদনে নারীর অবদান ২৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৪০ শতাংশ হতো।

সারাবাংলা/জেএ/এসএমএন

Tags: ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন