বিজ্ঞাপন

বিএনপির শীর্ষ পদে থাকতে পারবেন খালেদা-তারেক?

November 1, 2018 | 8:39 am

।। আব্দুল জাব্বার খান, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: দুর্নীতির মামলা সাজা পেয়ে কারাগারে আছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দেশের বাইরে থাকা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানও দুর্নীতির মামলায় সাজা পেয়েছেন। দলের সংশোধিত গঠনতন্ত্র অনুযায়ী তাদের কারওই দলের শীর্ষ পদে থাকতে কোনো বাধা নেই। তবে গঠনতন্ত্রের এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে এক রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্ট সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে নির্দেশ দিয়েছেন নির্বাচন কমিশনকে (ইসি)। একইসঙ্গে বিএনপির গঠনতন্ত্রের এই সংশোধনী কেন বেআইনি হবে না এবং সংবিধানের ৬৬ (২) ঘ অনুচ্ছেদের পরিপন্থী হবে না, তাও জানতে চেয়েছেন।

হাইকোর্টের এ নির্দেশে প্রশ্ন উঠেছে, খালেদা জিয়া ও তারেক জিয়া কি দলীয় প্রধানের পদে থাকতে পারবেন?

এ বছরের ২৮ জানুয়ারি ইসিতে সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেয় বিএনপি। ওই সময় বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ বিএনপির কাউন্সিলে এই সংশোধনী প্রস্তাব অনুমোদন পেয়েছে।

বিজ্ঞাপন

ইসিতে বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র জমা দেওয়ার পর এই সংশোধনী চ্যালেঞ্জ করে বিএনপিকর্মী পরিচয়ে রাজধানীর মিরপুর-১৩, কাফরুল এলাকার বাসিন্দা মো. মোজাম্মেল হোসেন আদালতে রিট দায়ের করেন। বিএনপির আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে দলে যোগ দিলেও দলীয় গঠনতন্ত্রের ৭ ধারা বিলুপ্ত করায় তিনি সংক্ষুব্ধ হয়ে ওই রিটটি করেন।

শুনানির পর বুধবার (৩১ অক্টোবর) বিচারপতি আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মাদ আলীর হাইকোর্ট বেঞ্চ একমাসের মধ্যে এই রিট নিষ্পত্তির আদেশ দেন। এই সময়ের মধ্যে ইসিকে বিএনপির গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার নির্দেশও দেন আদালত।

পাশাপাশি দণ্ডিতরা পদে থাকতে পারবেন না— বিএনপির গঠনতন্ত্র সংশোধনীতে বাদ দেওয়া এমন বিধান কেন বেআইনি ও সংবিধানের ৬৬ (ঘ)-এর পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন আদালত। স্থানীয় সরকার সচিব, প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিব, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ও মহাসচিবকে চার সপ্তাহের মধ্যে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সারাবাংলাকে বলেন, ‘কোনো রাজনৈতিক দলের পক্ষে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া খুবই অনভিপ্রেত। দলের পদে দণ্ডিত কেউ থাকতে পারবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে সারাবিশ্বেই তো এটাই নৈতিক স্ট্যান্ডার্ড। এখন এটা যদি পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সঠিকভাবেই নির্বাচন কমিশনকে বিএনপির গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাদের এই সংশোধনী গ্রহণ করার অর্থ হবে দুর্নীতির সঙ্গে আপস করা।’

হাইকোর্টের এ আদেশের পরে দণ্ডিতরা দলের পদে থাকতে পারেন কি না— জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, তাদের সংশোধিত কপি যদি নির্বাচন কমিশন গ্রহণ না করে, তাহলে পারবে না।

তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান তো এমন কিছুকে গোচরে নিতে বা গ্রহণ করতে পারে না যে দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলেও কেউ কোনো দলের সভাপতি থাকবেন।

জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘আদেশটি যথাযথ হয়েছে। যে আদেশটি আদালত দিয়েছেন, তাতে খালেদা জিয়া বা তারেক রহমান নৈতিকভাবে দলের শীর্ষ পদে থাকতে পারেন না। কারণ তারা দণ্ডিত। আমাদের সংবিধানের ৬৬(২) ধারা অনুযায়ী, নৈতিক স্খলনজনিত কারণে যদি কারও ২ বছরের বেশি সাজা হয়, তাহলে সাজা ভোগ করার পর আরও পাঁচ বছর তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন না। আর এখানে কী করে তারা একজন দণ্ডিত ব্যক্তিকে বা এ ধরনের ক্রিমিনাল রেকর্ড থাকা ব্যক্তিকে দলীয় পদে রাখে? আমি মনে করি, হাইকোর্ট যথাযথ আদেশ দিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি, ‘বিএনপিপন্থি আইনজীবী জয়নুল আবেদীনের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা তো কোনো পক্ষ নই। আমরা জানিই না। আজ আমাদের ধর্মঘট চলছিল। ধর্মঘট শেষ হওয়ার পর এটি জানতে পারলাম।’

তিনি বলেন, ‘আদেশের কপি তুলে দেখব। তারপর এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

উল্লেখ্য, মোজাম্মেল হোসেনের রিটের পক্ষে আদালতে শুনানি করেন আইনজীবী মমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আল আমিন সরকার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল কে এম মাসুদ রুমি।

সারাবাংলা/এজেডকে/টিআর

আরও পড়ুন: বিএনপির সংশোধিত গঠনতন্ত্র গ্রহণ না করতে ইসিকে নির্দেশ

Tags: , , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন