বিজ্ঞাপন

সুন্দরবন এখন দস্যুমুক্ত

November 1, 2018 | 2:34 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: সুন্দরবনসহ গোটা দক্ষিণাঞ্চলকে বনদুস্য ও জলদুস্যমুক্ত ঘোষণা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করছি। দীর্ঘদিন এই অঞ্চলটি জলদুস্য বা বনদস্যুদের অত্যাচারে নির্যাতিত ছিল। বিশেষ করে আমাদের পুরো দক্ষিণাঞ্চলের জন্যই এটি ছিল একটি বড় সমস্যা। কিন্তু আমরা জলদস্যু ও বনদস্যুদের জীবিকার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। তারা এখন আর ওই পথে যাবে না।

বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে ২০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প বা কার্যক্রমের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে সূচনা বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। এসময় তিনি একযোগে ২০টি মন্ত্রণালয়ের ৫৬টি জেলায় ৩২১টি প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ঘোষণা করেন।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দক্ষিণাঞ্চলে জলদস্যু বা বনদস্যুদের আমরা মোটিভেট করেছি এবং তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি, তারা যদি আত্মসমর্পণ করে, তাদেরকে জীবন জীবিকার পথ করে দেবো। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে একে একে আমাদেরকে কাছে আত্মসমর্পণ করেছে। এখন যারা আছে, তারাও আত্মসমর্পণ করাতে তাদের তাৎক্ষণিকভাবে এক লাখ করে টাকা দিচ্ছি। পাশাপাশি তারা নিজ গ্রামে বসে যে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে চায়, সেই কাজ করার মতো উপযুক্ত কর্মসংস্থান করে দিচ্ছি।

এ কারণে অনেকেই এখন দস্যুতার অস্বাভাবিক জীবন থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা এখন পরিবারের সঙ্গে বসবাস করছেন। নিজের পরিবার, আত্মীয়-স্বজন-প্রতিবেশী নিয়ে তারা এখন সুস্থভাবে নিরাপদ জীবনযাপন করতে পারছেন। এ জন্য তাদের ধন্যবাদও জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়ভাবে অনেক প্রকল্প ও কাজ আছে। দস্যুতা ছেড়ে তারা এসব কাজে নিয়োজিত হওয়ার সুযোগ পাবে এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে যারা, তাদের স্থানীয় প্রশাসনও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করবে বলে জানান শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবন, যেটা একসময় বনদুস্য দ্বারা সবসময় ভীত-সন্ত্রস্ত ছিল, আজ তা দস্যুমুক্ত হয়েছে। সেটা আমি ঘোষণা দিতে পারি।’ সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত করার কাজে সহযোগিতা করার জন্য র‌্যাব ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

এরপর ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে বাগেরহাট জেলার অনুষ্ঠানে সংযুক্ত হয়ে আত্মসমর্পণকারী দস্যু ও জেলেদের অনুভূতির কথা শোনেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এসময় তিনি বলেন, যারা আজ স্যারেন্ডার করেছে, তাদের সবরকম সহযোগিতা দেবো। আর ওখানে কয়েকটা ক্যাম্প করে দেওয়ার কথা বলেছে, সেটা আমরা করে দেবো। আমাদের জেলেদের যেন অসুবিধা না হয়, সে বিষয়েও স্থানীয় প্রশাসনকে নজর রাখার আহ্বান জানান তিনি।

বিজ্ঞাপন

এছাড়া জলদস্যুদের বিরুদ্ধে যে মামলাগুলো আছে, হত্যা মামলা ছাড়া বাকি মামলাগুলো প্রত্যাহার করতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

বক্তব্য শেষ হলে পাশে থাকা নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ৩২টি বাহিনী আত্মসমপর্ণ করেছে। ভেতরে ভেতরে কী করছি, টের পাচ্ছে কেউ? যখন আমি মরে যাব, তখন টের পাবে। যখন আমি থাকব না, তখন সবাই টের পাবে।

এদিকে, সারাবাংলার বাগেরহাট ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট জানিয়েছেন, সুন্দরবনের আরও ছয় দস্যু বাহিনীর ৫৪ সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে আজ (বৃহস্পতিবার)। বাগেরহাট শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে এক অনুষ্ঠানে তারা আত্মসমর্পণ করেন। এ নিয়ে সুন্দরবনের মোট ৩২ বাহিনীর ৩৩০ বনদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এলেন।

এসময় ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে গণভবন প্রান্ত থেকে অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, বাগেরহাট প্রান্তে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, খুলনা সিটি মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, বাগেরহাট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ডা. মোজাম্মেল হোসেন, বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মীর শওকাত আলী বাদশা, বাগেরহাট-৩ আসনের সংসদ সদস্য হাবিবুন নাহার তালুকদার, র‌্যাব মহাপরিচালক বেনজীর আহম্মেদ, বিজিবি’র আঞ্চলিক কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল খালেদ আল মামুনসহ অন্যরা।

প্রধানমন্ত্রী ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে বনদস্যুদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করেন। এসময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের হাতে বনদস্যুরা অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণ করা বাহিনীগুলোর মধ্যে আনোয়ারুল বাহিনীর আট সদস্য, তৈয়াবুর বাহিনীর পাঁচ, শরিফ বাহিনীর ১৭, ছাত্তার বাহিনীর ১২, সিদ্দিক বাহিনীর সাত ও আল আমিন বাহিনীর পাঁচ সদস্য রয়েছেন। তারা ৫৮টি অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র ও তিন হাজার ৩৫১টি গোলাবারুদ জমা দেন।

আরও পড়ুন-

‘বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছি’

সারাবাংলা/এনআর/টিআর

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন