November 6, 2018 | 12:18 pm
রেজওয়ান সিদ্দিকী অর্ণ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট।।
বাংলাদেশের জনপ্রিয় অভিনেতাদের মধ্যে আনিসুর রহমান মিলন সুপরিচিত একটি নাম। নিজস্ব অভিনয় ঢঙয়ের মাধ্যমে তিনি জনপ্রিয় তারকাদের কাতারে অনেকদিন ধরেই অবস্থান করছেন। ছোট ও বড় পর্দায় তিনি সমান জনপ্রিয়। হাতে গোনা অল্প কিছু সিনেমা করলেও পেয়েছেন সফলতা। প্রশংসা কুড়িয়েছেন চলচ্চিত্র সমালোচকদের।
আগামী শুক্রবার (৯ নভেম্বর) মুক্তি পাবে ভৌতিক ঘরানার সিনেমা ‘স্বপ্নের ঘর’। এতে কেন্দ্রিয় চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিলন। ভৌতিক সিনেমায় এটিই তার প্রথম অভিনয়। সে কারণে সিনেমাটি নিয়ে একটি চাপা উত্তেজনা কাজ করছে তার ভেতর।
এদিকে তিনি নতুন বছর থেকে নিজের ক্যারিয়ারকে নতুনভাবে শুরু করতে চান। অভিনয় করতে চান ভিন্নধর্মী কিছু চরিত্রে। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা নতুন সিনেমা, নিজের ক্যারিয়ার পরিকল্পনা নিয়ে আনিসুর রহমান মিলন কথা বলেছেন সারাবাংলার সঙ্গে।
বিজ্ঞাপন
এটা যেহেতু ভৌতিক ছবি সেহেতু চরিত্রের বিশেষত্ব তো আছেই। ফিল্মের একজন স্ট্রাগল হিরোর চরিত্রে অভিনয় করছি। এরকম চরিত্রে আগে অভিনয় করিনি। গতানুগতিক যে ধরনের চরিত্রে মানুষ আমাকে দেখেছেন সেটা থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্নধর্মী এক চরিত্রে হাজির হবো।
আমরাও খুব একটা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বলতেও পারিনা যে সফল হবো। মানুষ অনেক রকমের সিনেমা দেখে। এর ভেতর থেকে কোন সিনেমাটা তার ভালোলাগাকে ছুঁয়ে যাবে সেটা বোঝা মুশকিল! একটা সময় বাংলাদেশে ফোক ঘরানার সিনেমা নির্মিত হতো। প্রথম দিকে সিনেমাগুলো সেরকম গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। হঠাৎ করে দেখা গেলো একটা সময় সেসব সিনেমা জনপ্রিয় হয়ে উঠলো। তারপর একাধারে ওরকম ঘরানার সিনেমা নির্মাণের হার বেড়ে গেলো।
বাংলাদেশে ভৌতিক ঘরানার সিনেমা নির্মাণ হয়না। তাই এই সিনেমাটি মানুষের ভালো লাগবে কিনা তার জাজমেন্ট করা কঠিন। কিন্তু আমার কাছে মনে হয় মানুষ নতুন কিছু, ভালোকিছু দেখতে চায়। সেখান থেকে বলবো মানুষ নতুন কিছু দেখতে পারবে। এমনও হতে পারে ‘স্বপ্নের ঘর’ সিনেমা থেকেই ভৌতিক সিনেমার সফলতা শুরু হবে।
আমরা অভিনয়শিল্পীরা যখন কোন চরিত্রে অভিনয় করি তখন সেই চরিত্রটিতে বোঝার চেষ্টা করি। এই সিনেমাটি করার সময় পরিচালকের ওপর অনেক বেশি নির্ভর করতে হয়েছে। কারণ তিনি কোথায় ভিএফএক্স ব্যবহার করবেন সেটা আমি জানিনা, পরিচালক জানেন। এরকম করে যখন তিনি আমাদের শট নিচ্ছিলেন তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, আমরা হয়ত আলাদা কিছু একটা করছি।
আমি দেখিনি। তবে আমি জানি ‘রোজমেরিস বেবি’ সিনেমার সঙ্গে সাদৃশ্য রয়েছে। সিনেমাটির গল্প প্রযোজকের ভাবনায় ছিল। আবার পরিচালকের ভাবনায় গল্পটি ছিলনা। সেকারণে তিনি গল্পকে অনেক মোডিফাই করেছেন। তবে সিনেমাটি না দেখে ভালো করেছি। আমি নিজের একটি স্বকীয় চরিত্র তৈরি করতে পেরেছি। ইংলিশ সিনেমার চরিত্রটি থেকে প্রভাবিত হইনি।
নিঃসন্দেহে এই সিনেমাটি আমার জন্য এক্সপেরিমেন্ট। আমি নাটকে একরকম চরিত্রে অভিনয় করেছি। আবার সিনমায় অন্যরকম। শিল্পী হিসেবে চরিত্রে নিয়ে খেলা করা আমার কাজ। সেরকম ভৌতিক সিনেমায় আমি নিজেকে ভেঙে অন্যরকমভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। এখন আমার এক্সপেরিমেন্টে আমি সফল কিনা সেটা জানা যাবে দর্শক প্রতিক্রিয়ায় ওপর।
আমার অভিনীত সব সিনেমা মানুষের ভালো লেগেছে। ‘দেহরক্ষী’, ‘পোড়ামন’, ‘অনেক সাধের ময়না’, ‘রাজনীতি’ সব সিনেমা কিন্তু হিট হয়েছে। এতো সফল সিনেমা করার পরও আমি আমার চরিত্রের সঙ্গে মানানসই কোন চরিত্রে পাচ্ছিলাম না। সেকারণে ওভাবে সিনেমা করা হয়নি। তাই অনেক সিনেমার স্ক্রিপ্ট আসলেও সেগুলো ছেড়ে দিতে হয়েছে। তারপরও আমার হাতে এখন চারটি সিনেমা আছে।
‘ইন্দুবালা, ‘লীলাবতি’, ‘জামদানি’, ‘সেভ লাইফ’ সিনেমাগুলোর শুটিং পর্যায়ে আছে। আমি কিন্তু এতে খুশি। কারণ দেশে চলচ্চিত্র সংকটের ভেতরও আমার হাতে সিনেমা আছে। এই সিনেমাগুলো মুক্তি পেলে আমাকে নিয়ে মানুষের ভাবনার পরিবর্তন হবে।
এক একজনের ভাবনা এক এক রকম। শাকিব খানকে নিয়ে যারা সিনেমা করবেন, তারা মিলনকে নিয়ে সিনেমা করবেন না। আবার মিলনকে নিয়ে যারা সিনেমা করবেন তারা বছরে বেশি হলে একটি বা দুটি সিনেমা করবেন। বছরের এই দুটি সিনেমা কিন্তু আমার সঙ্গে মানানসই হবে। আমি আমার স্বকীয়তা তৈরী করতে পারবো। মানুষও ভাববে-মিলন মানেই ভিন্নরকম চরিত্র, ভিন্নরকম অভিনয়।
নতুন বছরে আমি পরিকল্পনা মাফিক এগোতে চাই। ২০১৪-২০১৭ সাল পর্যন্ত যেভাবে এগোচ্ছিলাম, সেভাবে। আমি এন্টি হিরো দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করতে চাই। প্রয়াত হুমায়ূন ফরিদী যখন অভিনয় করতে তখন কিন্তু তিনি কোন চরিত্রে অভিনয় করছেন সেটা দেখতে কেউ সিনেমা হলে যেতো না। মানুষ তার অভিনয় দেখতে যেতো। এই দিকটা নিয়ে কিছু কাজ করতে চাই। গল্প আমার ওপর দিয়ে যাবে। আমার ওপর দিয়ে গল্প গেলে মানুষ ভরসা করবে যে, মিলনের ওপর দিয়ে গল্প এগোলো সেটা ভালো হবে। এন্টি হিরো চরিত্রেই কাজ করতে চাই। এধরনের চরিত্রে কাজ করতেও আমার ভালো লাগে।
সফলতা। কারণ আমরা সবাই জানি, ‘স্বাধীনতা অর্জনের চেয়ে রক্ষা করা কঠিন’। সফলতা বিষয়টিও এমন। আমি যখন সফল হবো তখন এমন কোন কাজ করতে পারবো না যা আমার সফলতাকে ম্লান করে দেবে।
(হাসি) মানুষ আমাকে ডায়নামিক অভিনেতা বলে। সে যেকোনো চরিত্রে অভিনয় করতে পারে। সেই দিক থেকে আমি ভালো অভিনয় করার চেষ্টা করি। সেজন্য আমি এখনো ইন্ডাস্ট্রিতে বিক্রি হই। ইন্ডাস্ট্রিতে আমার চাহিদা রয়েছে। এটা আমার জন্য ভালো।
সারাবাংলা/আরএসও/পিএম