বিজ্ঞাপন

শ্রেণিশিক্ষক হাসনা হেনাকে নিয়ে অভিযোগ নেই কারও

December 7, 2018 | 11:30 am

।। মেসবাহ শিমুল, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: ‘স্কুলে একজন টিচারও নেই যার ক্লাসে আমরা পুরোপুরি মনোযোগী হতে পারতাম। কেবল ম্যামের ক্লাসেই আমরা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মন্ত্রমুগ্ধের মতো বসে থাকতাম। ওনার বাংলা ক্লাস সত্যিই অসাধারণ। স্কুলের যে মেয়েটা ম্যামের ক্লাস পেয়েছে, সে আজীবন ম্যামকে মনে রাখবে।’

কথাগুলো বলছিলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী। বছর তিনেক আগেই ভিকারুননেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে পাস করেন তিনি। প্রিয় শিক্ষক হাসনা হেনাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে শুনে ফাইনাল পরীক্ষা বাদ দিয়ে ছুটে এসেছেন প্রিয় ক্যাম্পাসে। দুপুর ১২টা থেকে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে কখনও একা, কখনও অন্যদের সঙ্গে কথা বলছিলেন তিনি। মলিন চেহারার ওই শিক্ষার্থীকে কয়েকবার চোখ মুছতেও দেখা গেল।

আরও পড়ুনপদত্যাগে ‘রাজি’ ভিকারুননিসার গভর্নিং বডির সভাপতি

বিজ্ঞাপন

বৃহস্পতিবার (৬ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে প্রধান ফটকের পশ্চিম পাশে দাঁড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ কথা হয় ভিকারুননিসার সাবেক এই শিক্ষার্থীর সঙ্গে। তার দাবি, হাসনা হেনা ম্যাম কোনো অন্যায় করতে পারেন না। তিনি সবার কাছেই একজন প্রিয় শিক্ষক হিসেবে পরিচিত। ক্লাসে অত্যন্ত যত্ন নিয়ে পড়ানোর পাশাপাশি কখনও কোচিং বাণিজ্যের সঙ্গে নিজেকে জড়াননি। অনৈতিকভাবে টাকা কামানোর ধান্ধাও তার মধ্যে কখনও দেখেনি কেউ।

নাম না বলার শর্তে এ শিক্ষার্থী জানান, তারা বছর তিনেক আগে বের হয়েছেন। এর আগে মাধ্যমিক স্তরে হাসনা হেনার ক্লাস পেয়েছেন তারা। তিনি অসাধারণ একজন শিক্ষক। ব্যক্তি জীবনেও নরম মন ও ভদ্র ব্যবহারের অধিকারী। কখনও কারও সঙ্গে দুর্বব্যহার করেছেন— এমন নজির নেই।

আরও পড়ুন: অরিত্রীর আত্মহত্যা: ভিকারুননিসার শ্রেণিশিক্ষক গ্রেফতার

বিজ্ঞাপন

একজন শিক্ষক মনের মধ্যে কতটা স্থান করে নিলে তার গ্রেফতারের খবর শোনার পর নিজের ফাইনাল পরীক্ষা বাদ দিয়ে এখানে আসতে পারি— এমন প্রশ্ন রেখে তিনি বলেন, ম্যাম পরিস্থিতির শিকার। ভিডিও ফুটেজটি আমি দেখেছি। সেখানে ক্লাস টিচার হিসেবে তিনি ওই শিক্ষার্থীর মা-বাবাকে অধ্যক্ষের রুমে নিয়ে গিয়েছেন। ক্লাস টিচার হিসেবে এটি তার দায়িত্ব। এর জন্য তিনি মামলার আসামি হতে পারেন না। একজন শিক্ষককে ডিবি পুলিশ (গোয়েন্দা পুলিশ) গ্রেফতার করবে, তাকে আদালতে তোলা হবে, রিমান্ড চাওয়া হবে— ভাবতেও পারছি না।

তিনি বলেন, খবরটি শোনার পর থেকে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারিনি। সকালে একটা ফাইনাল এক্সাম ছিল, সেটি না দিয়ে এখানে এসেছি। বুঝতেই পারছেন তিনি আমার কাছে কতটা প্রিয় শিক্ষক। কেবল আমি নই, হাসনা হেনা ম্যাম সবার কাছেই এমন জনপ্রিয় ও দায়িত্বশীল শিক্ষক হিসেবে পরিচিত।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসার মামলা তদন্ত করবে ডিবি

বিদ্যালয়টির নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারীর আত্মহননের মামলায় গ্রেফতার হওয়া ভিকারুননিসার স্কুলের প্রভাতী শাখার বাংলা বিভাগের শিক্ষক হাসনা হেনার ব্যাপারে যতজনের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাদের সবার বক্তব্যও অনেকটা ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষার্থীর মতোই। তারা বলছেন, হাসনা হেনা একজন ভালো মানুষ। কেবল শিক্ষর্থীই নয়, যেসব অভিভাবকরা তাকে চেনেন, তাদের কাউকেও তার বিষয়ে কোনো খারাপ মন্তব্য করতে শোনা যায়নি।

বিজ্ঞাপন

দিলরুবা আকতার শিরীন নামের একজন অভিভাবক বলেন, এ ধরনের ঘটনায় রাঘব-বোয়ালরা সব সময়ই ধরা-ছোঁয়ার বাইরে থাকে। মাঝখানে কিছু নিরীহ লোক হেনস্থার শিকার হন। উনার ক্ষেত্রেও তেমনটি হয়েছে বলে আমি মনে করি।

আমি গত ছয় বছর ধরে এখানে যাওয়া-আসা করি। কখনও হাসনা হেনা ম্যাডামের নামে কারও মুখে খারাপ কিছু শুনিনি। অথচ তিনিই পুলিশের প্রথম শিকার হয়েছেন। সবই কপাল।

এদিকে আত্মহত্যার প্ররোচণায় দোষীদের প্রচলিত আইনে বিচারসহ ৬ দফা দাবিতে আন্দোলন করে আসছে শিক্ষার্থীরা। এ আন্দোলনের শুরুতেই নেতৃত্ব দিয়ে আসছে অরিত্রীর খুব কাছে বন্ধু আনুষ্কা রায়।

আরও পড়ুন: ভিকারুননিসায় রোববার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা, ৩ শিক্ষক বরখাস্ত

গ্রেফতার হওয়া হাসনা হেনার ব্যাপারে তার কাছে জানতে চাওয়া হলে সেও এক বাক্যে স্বীকার করে বলে, ম্যাম খুবই ভালো একজন মানুষ। তিনি কখনও কারও সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেননি।

তার গ্রেফতারের বিষয়ে আনুষ্কা বলেন, আমাদের ছয় দফা দাবির কোথাও কিন্তু হাসনা হেনা ম্যামের নাম উল্লেখ নেই। আমরা জানিও না ম্যাম তার সঙ্গে কোনো খারাপ আচরণ করেছেন কি না। আমরা বলেছি অরিত্রীর আত্মহত্যার প্ররোচণার সঙ্গে যারা জড়িত, তদন্ত সাপেক্ষে তাদের শাস্তি হোক। আর মামলাটি যেহেতু অরিত্রীর বাবা দায়ের করেছেন, সেখানে আামাদের কারও কোনো হাত ছিল না। আমরাও ম্যামের মুক্তি চাই।

এদিকে, বৃহস্পতিবার দিনভর বিচ্ছিন্নভাবে শিক্ষক হাসনা হেনার মুক্তির দাবি জানান ভিকারুননেসা স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, এমনকি অভিভবাকরাও। তবে দুপুর ও সন্ধ্যা বেলায় তার মুক্তির দাবিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়টি মূল ফটকে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। এসময় তারা তার মুক্তি চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ১ ডিসেম্বর নিজ বাসায় গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে ভিকারুননিসা নূন স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী অরিত্রী অধিকারী। এ ঘটনায় তার বাবা দিলীপ অধিকারী বাদী হয়ে মঙ্গলবার (৪ ডিসেম্বর) রাতে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার ৩ নম্বর আসামি হাসনা হেনা। বুধবার রাতে উত্তরার একটি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে ডিবি পুলিশের একটি দল।

সারাবাংলা/এমএস/টিআর

আরও পড়ুন

ভিকারুননিসা অধ্যক্ষসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন ৯ জানুয়ারি

অরিত্রী আত্মহত্যার আগে ভিকারুননিসার প্রিন্সিপালের কক্ষে (ভিডিও)

ভিকারুননিসার ৩ শিক্ষক বরখাস্ত, বিভাগীয় মামলার নির্দেশ

ভিকারুননিসায় আজও শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

 

Tags: , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন