বিজ্ঞাপন

ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচন: প্রার্থী বদলাচ্ছে আ.লীগ?

January 20, 2019 | 7:42 pm

।। হাসান আজাদ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট ।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা: হাইকোর্টের আদেশের পর ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) উপনির্বাচন আয়োজনে আর কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনও (ইসি) জানিয়েছে, আগামী মার্চ নাগাদ আসতে পারে এই নির্বাচনের ঘোষণা। সেই অনুযায়ী ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে প্রস্তুতি শুরু হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেও। এই নির্বাচনে আগে থেকেই তাদের একজন প্রার্থী নির্ধারিত থাকলেও বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নতুন কাউকে দেখা যেতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা।

ডিএনসিসি মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পর গত বছরের ৯ জানুয়ারি এই সিটি করপোরেশনে উপনির্বাচন আয়োজনে তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন। তবে সীমানা জটিলতা নিয়ে দায়ের করা রিটের শুনানি নিয়ে ১৭ জানুয়ারি ডিএনসিসি উপনির্বাচন তিন মাসের জন্য স্থগিতের আদেশ দেন হাইকোর্ট। তফসিল ঘোষণার পর ডিএনসিসিতে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয় তৈরি পোশাক খাতের মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে। তাকে হাতে রেখেই দলের ভেতরে যোগ্য প্রার্থী খুঁজছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির একাধিক নেতা জানিয়েছেন, দলের বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান ও সামগ্রিক রাজনৈতিক পেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে এই পরিবর্তনের কথা ভাবছে আওয়ামী লীগ।

নেতারা বলছেন, গত একবছরে দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে। ফলে দল হিসেবে এখন আওয়ামী লীগের অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো।

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সমন্বয়ক লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খান এ প্রসঙ্গে সারাবাংলাকে বলেন, ডিএনসিসি নির্বাচন নিয়ে আমাদের প্রস্তুতি আগে থেকেই ছিল। নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করলেই আমরা কাজ শুরু করব।

দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আমাদের প্রার্থী তো আগেই ঠিক করা আছে। তারপরও সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর।

আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতারা জানান, এর আগে গত ডিএনসিসি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিল। ওই সময় শক্ত প্রতিপক্ষ ভাবা হতো বিএনপিকে। কিন্তু একাদশ নির্বাচনে দলটির ভরাডুবির মাধ্যমে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এসব কারণেই পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তর সিটির মেয়র প্রার্থী নিয়ে নতুন করে ভাবা হচ্ছে। দলের ভেতর যোগ্য প্রার্থী পেলে দলের বাইরে গিয়ে প্রার্থী দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। এরই মধ্যে দলের বেশ কয়েকজন প্রভাশালী নেতার নাম দলীয় সভাপতির নজরে এসেছে বলে তারা জানান।

বিজ্ঞাপন

নেতারা বলছেন, কে মনোনয়ন পাচ্ছেন, সে সিদ্ধান্ত দলের মনোনয়ন বোর্ডে নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আগের প্রার্থী, অর্থাৎ আতিকুল ইসলামই যে ফের প্রার্থী হবেন, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। এ বিষয়ে নতুন করে মনোনয়ন বোর্ড সিদ্ধান্ত নেবে এবং দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করবে।

এর আগে, ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে ওই নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন ব্যবসায়ী নেতা ও বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আনিসুল হক। প্রায় দুই বছর দায়িত্ব পালনের পর ২০১৭ সালের ৩০ নভেম্বর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। এরপর থেকেই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচন নিয়ে শুরু হয় তোড়জোড়।

২০১৮ সালের ২৬ ফেব্রুয়ারি ডিএনসিসি উপনির্বাচনের ভোটগ্রহণের দিন নির্ধারণ করে ৯ জানুয়ারি তফসিল ঘোষণা করে ইসি। ওই তফসিলের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে এবং কার্যকারিতার ওপর স্থগিতাদেশ চেয়ে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন রাজধানীর ভাটারা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আতাউর রহমান ও বেরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম। দীর্ঘ একবছর পর গত বুধবার সেই রিট আবেদন খারিজ করে দেন আদালত। এর মধ্য দিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনের দ্বার উন্মুক্ত হয়।

২০১৮ সালে নির্বাচন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পরপরই দলীয়ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সে সময় মেয়র পদে ১৮ জন প্রার্থী আওয়ামী লীগের প্রার্থিতা চেয়ে ফরম জমা দেন। এর মধ্য থেকে যাচাই-বাছাই করে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি আতিকুল ইসলামকে মনোনয়ন দেয় দলটি। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটও সমর্থন দেয় আতিকুলকে।

বিজ্ঞাপন

একইসঙ্গে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নবগঠিত ৩৬টি ওয়ার্ডের সাধারণ কাউন্সিলর এবং ১২টি সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে দল-সমর্থিত প্রার্থীদের তালিকাও সে সময় চূড়ান্ত করা হয়েছিল। রিট আবেদন করায় সে তালিকা আর প্রকাশ করা হয়নি।

এদিকে, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নিরঙ্কুশ জয়ের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখতে উপজেলা পরিষদের পাশাপাশি আসন্ন ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনেও জয় চায় আওয়ামী লীগ। একবছর স্থগিত থাকার পর উপনির্বাচনের পথ খুলে যাওয়ায় আওয়ামী লীগের ভেতরে-বাইরে এ নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। মেয়র পদ থেকে শুরু করে সাধারণ ও মহিলা কাউন্সিলর পদেও লবিং শুরু হয়েছে নতুন করে। আওয়ামী লীগও চায় জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতাকর্মীরাই পাক দলীয় মনোনয়ন। তবে এসব কিছুর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে নির্বাটন কমিশনের তফসিল ঘোষণার পর।

সারাবাংলা/এইচএ/টিআর

Tags: , , ,

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন