বিজ্ঞাপন

এটা ছাড়া আমার কোনো কর্মক্ষেত্র নেই: কৃষিমন্ত্রী

January 22, 2019 | 11:26 pm

।। সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট।।

বিজ্ঞাপন

ঢাকা:  ছোট দিনের বিকেল দ্রুত ফুরিয়ে যাচ্ছিল আলো। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের প্রায় চল্লিশ বছরের পুরনো লাল ইটের দালানের মিলনায়তনে তখন উসখুস করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা। নতুন সরকারের নতুন কৃষিমন্ত্রী এসেছেন তাদের সঙ্গে কৃষি বিষয়ক টেকসই লক্ষ্যমাত্রার রোডম্যাপ তৈরির কর্মশালায়। বাংলাদেশের ইতিহাসের একমাত্র কৃষিবিদ নতুন কৃষিমন্ত্রী মো. আবদুল রাজ্জাক।

তবে উপস্থিত বিজ্ঞানীদের জন্য তিনি শুধু একজন কৃষিমন্ত্রী নন, তাদের সাবেক এক সহকর্মীও বটে।

সবার শেষে কথা বলার পালা এলো কৃষিমন্ত্রীর। নিয়মটাও তো তাই, এই অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তিনি। সবার পরেই তো বলবেন। তবে কিছু বলার আগেই গলা ধরে এলো তার, আর্দ্র গলায় জড়ানো উচ্চারণে বললেন, ‘এই বিল্ডিংটা আমার খুব আপন। ১৯৮০ সালে এই প্রতিষ্ঠানেই আমি যোগ দিয়েছিলাম সায়েন্টেফিক অফিসার হিসেবে। ২০০১ সালে এই বিল্ডিং থেকেই অশ্রুসিক্ত চোখে বিদায় নেই, এটা ছাড়া আমার জীবনে আর কোনো কর্মক্ষেত্র নেই। ‘

বিজ্ঞাপন

ততক্ষণে কিছুটা সামলে উঠেছেন মন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। শুধু একটু পরপর শোনা যাচ্ছে আর্দ্র গলা। তিনি আবারও বললেন, ‘আজ আমি যা, আমার সব আনন্দ, সাফল্য, ব্যর্থতা সব জড়িয়ে আছে এই বিল্ডিংকে ঘিরে। আজ এখানে আপনাদের মধ্যে ফিরে আসতে পেরে আমি খুব আনন্দিত।’

মন্ত্রীর আনন্দে আনন্দিত হয়ে ওঠেন তার সাবেক সহকর্মীরাও। তালি দিয়ে উৎসাহিত করেন মন্ত্রীকে। এরপর মন্ত্রী আসেন কাজের কথায়। একে একে ব্যাখ্যা করা শুরু করেন কৃষি বিষয়ে বর্তমান সরকারের পরিকল্পনার কথা। তিনি বলেন, ‘২০৩০ সালের মধ্যে আমরা ক্ষুধাকে জয় করব এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যকে অর্ধেকে নামিয়ে আনবো।’

আরও পড়ুন:  ‘আমাদের সামনে এখন নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্যের চ্যালেঞ্জ’

বিজ্ঞাপন

মঞ্চে তখন উপস্থিত বাংলাদেশের আধুনিক আধু‌নিক কৃ‌ষির জনক জাতীয় এমিরিটাস বিজ্ঞানী ড. কাজী এম বদরু‌দ্দোজা। বর্ষিয়ান এই কৃষিবিদ এসেছিলেন তারই শিষ্য বর্তমান কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাকের প্রথম আনুষ্ঠানিক সভায়।

১৯৮০ সালে যখন তরুণ আবদুর রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে যোগ দেন সায়েন্টিফিক অফিসার হিসেবে, কাজী পেয়ারার আবিষ্কারক ড. কাজী এম বদরু‌দ্দোজা তখন এই প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক। তার হাত ধরেই তৈরি হয়েছিল এই প্রতিষ্ঠানটি।

অনুষ্ঠানে প্রথমে প্রবেশ করেন কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক। নিয়ম অনুযায়ী মন্ত্রীর সম্মানে উঠে দাঁড়ান উপস্থিত কর্মকর্তারা। এর কিছুক্ষণ পরেই আসেন ড. কাজী এম বদরু‌দ্দোজা। ৯৪ বয়সী গুরুকে মঞ্চে তুলতে এগিয়ে আসেন কৃষিমন্ত্রী । অন্যদের সহযোগিতায় হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দেন তাকে।

ড. কাজী এম বদরু‌দ্দোজা বলেন, ‘যেই কৃষি গবেষণা কাউন্সিলে আমরা বসে আছি ৪০ বছর আগে এখানে একটা অভিজাত হোটেল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কৃষির কল্যাণে এই জায়গাটাকে আমরা কৃষি গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করি। ‘ টেকসই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের চ্যালেঞ্জ হিসেবে অভিজ্ঞ এই কৃষিবিদ বলেন, ‘আমাদের প্রায় দ্বিগুণ খাদ্য উৎপাদন করতে হবে। এটা আমাদের জন্য খুব সহজ কাজ নয়। তবে শুধু উৎপাদন বাড়ালে হবে না। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণেও কাজ করতে হবে ।‘

বিজ্ঞাপন

কথার একফাঁকে ড. কাজী এম বদরু‌দ্দোজা কৃষিমন্ত্রীর উদ্দেশে বলেন, ‘তুমি এখন কৃষিমন্ত্রী। তোমাকে আমার এভাবে নির্দেশ দেওয়া ঠিক হচ্ছে না। ‘

তবে গুরুর নির্দেশকে শ্রদ্ধাভরে গ্রহণ করেন ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, ‘এমন নয় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে বিষয়টিও আমরা দেখছি না। তবে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের কারণে মানুষের আয়ুষ্কাল বৃদ্ধি পেয়েছে। আগামী, ২০২০ সাল পর্যন্ত আমাদের জনসংখ্যা বাড়বে, এরপর জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমতে থাকবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে, যা প্রযুক্তি আছে তার সর্বোচ্চ উপযোগ নিতে হবে। ’ যদি খাদ্যঘাটতি পূরণ না করতে পারলে টেকসই লক্ষ্যমাত্রার অন্য সব অর্জন বৃথা যাবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।

সারাবাংলা/এমএ/এমএনএইচ

Tags:

বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন
বিজ্ঞাপন